ডেনিশ রূপকথা থামিয়ে স্বপ্নের ফাইনালে ইংল্যান্ড
সবকিছু রূপকথার মতোই হচ্ছিল ডেনমার্কের জন্য। ১৯৯২ সালে ইউরো চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জেতার পর প্রথমবারের মতো শেষ আটে ওঠা ডেনিশরা এবার সেমি-ফাইনালের টিকেটও কেটে নেয়। ফাইনালে ওঠার লড়াইয়েও দাঁতে দাঁত রেখে লড়লো তারা। তবে এবার আর ফল পক্ষে এলো না। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে তাদেরকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো ইউরোর ফাইনালে উঠলো ইংল্যান্ড।
বুধবার রাতে লন্ডনের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে ডেনমার্ককে ২-১ গোলে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। ডেনমার্কের হয়ে গোল করেন মিকেল ড্যামসগার্ড। প্রতিপক্ষের আত্মঘাতী গোলে সমতায় ফেরা ইংল্যান্ড অতিরিক্ত সময়ে হ্যারি কেইনের গোলে উৎসবে মাতে। আগামী ১১ জুলাই লন্ডনে শিরোপার লড়াইয়ে ইতালির মুখোমুখি হবে ইংলিশরা।
যোগ্যতর দল হিসেবেই ফাইনালে উঠেছে ইংল্যান্ড। পুরো ম্যাচে অবিরত আক্রমণে ডেনমার্ককে দিশেহারা করে তুলেছিল ইংলিশরা। ১২০ মিনিটের লড়াইয়ে ৫৯ শতাংশ সময় বল নিজেদের পায়ে রাখে ইংল্যান্ড। গোলমুখে তাদের নেওয়া ২০টি শটের ১০টি ছিল লক্ষ্যে। গোলরক্ষক কাসপের স্মাইকেলের বাধায় বেশ কয়েকবার রক্ষা পাওয়া ডেনমার্ক ৬টি শট নেয়, এরমধ্যে ৩টি ছিল লক্ষ্যে।
রেফারির ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই ডেনমার্কের রক্ষণভাগে হানা দিতে শুরু করে ইংল্যান্ড। ষষ্ঠ মিনিটে প্রথম আক্রমণটি সাজায় ঘরের মাঠের দলটি। ডান প্রান্ত থেকে বল নিয়ে গিয়ে রাহিম স্টার্লিংয়ের উদ্দেশ্যে দারুণ এক ক্রস বাড়ান ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। কিন্তু সময়ে কুলিয়ে উঠতে পারেননি স্টার্লিং। বলে পা ছোঁয়াতে পারেননি ইংল্যান্ডের এই ফরোয়ার্ড।
নবম মিনিটে পাল্টা আক্রমণে যায় ডেনমার্ক। কিন্তু ডি-বক্সে ঢুকে বলের নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি মার্টিন ব্রাথওয়েট। ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগের খেলোয়াড় কাইল ওয়াকার বলের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন। ১১তম মিনিটে বল নিয়ে ডেনমার্কের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ম্যাসন মাউন্ট। কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা পায় ডেনমার্ক। পরের মিনিটে হ্যারি কেইনের পাস থেকে বল পেয়ে শট নেন স্টার্লিং। কিন্তু তার দুর্বল শট সহজেই তালুবন্দী করেন ডেনমার্কের গোলরক্ষক ক্যাসপার স্মাইকেল।
১৫তম মিনিটে লম্বা করে বাড়ানো বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন হ্যারি কেইন। ইংলিশ অধিনায়কের বুলেট গতির শট অনেক উপর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে ইংলিশ গোলরক্ষক জর্ডান পিকফোর্ডের ভুলে বিপদে পড়ে ইংল্যান্ড। ডেনমার্ক ফরোয়ার্ড ক্যাসপার্ক ডলপার্কের দুর্বল শট নিয়ন্ত্রণে নিলেও বল প্রতিপক্ষের পায়ে দিয়ে দেন তিনি। এ যাত্রায় কর্নারের বিনিময়ে রক্ষা পায় তারা।
২৫তম মিনিটে হ্যারি কেইনের কাছ থেকে বল কেড়ে নিয়ে ইংল্যান্ডের রক্ষণভাগে হানা দেয় ডেনমার্ড। ডি-বক্সের মধ্য থেকে বাঁকানো শট নেন মিকেল ড্যামসগার্ড। কিন্তু ডেনিশ উইঙ্গারের শট একটুর জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। ২৯তম মিনিযে ডি-বক্সের একটু বাইরের ফ্রি-কিক পায় ডেনমার্ক। চোখ ধাঁধানো এক শটে ফ্রি-কিকে বল জালে জড়ান ড্যামসগার্ড।
৩৫তম মিনিটে হ্যারি কেইন ফাউলের শিকার হলে ডি-বক্সের একটু দূরেই ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। ডেনমার্কের মতো গোল আদায় করে নিতে পারেনি ইংলিশরা। রাহিম স্টার্লিংয়ের শট ডেনমার্কের রক্ষণবাধায় আটকে যায়। ৩৮তম মিনিটে সুবর্ণ সুযোগ নষ্ট করেন স্টার্লিং। ছোট ডি-বক্সেরও ভেতর থেকে সামনে শুধু ডেনমার্কের গোলরক্ষককে পেয়েও গোল করতে পারেননি তিনি। স্মাইকেলের গা বরাবর শট নেন তিনি।
পরের মিনিটেই অবশ্য হতাশা কেটে যায় ইংল্যান্ডের। হ্যারি কেইনের পাস থেকে বল নিয়ে ডান প্রান্ত থেকে ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন ইংলিশ উইঙ্গার বুকাইয়ো সাকা। বাম পাশে থাকা স্টার্লিংয়ের উদ্দেশে বল পাঠান তিনি। শুয়ে পড়ে দলকে বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজেদের জালেই বল জড়িয়ে দেন ডেনমার্কের অধিনায়ক সিমোন কেজার। প্রথমার্ধ ১-১ সমতায় শেষ হয়।
৫১তম মিনিটে ডেনমার্কের হানা। সতীর্থের কাছ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সের বাইরে থেকে শট নেন ডলবার্গ। ডেনিশ ফরোয়ার্ডের নেওয়া দারুণ শটটি ঝাঁপিয়ে পড়ে ফেরান ইংলিশ গোলরক্ষক পিকফোর্ড। ৫৫তম মিনিটে হ্যারি কেইন ফাউলের শিকার হলে ডি-বক্সের বেশ দূরে ফ্রি-কিক পায় ইংল্যান্ড। ম্যাসন মাউন্টের ফ্রি-কিকে হেড নেন হ্যারি ম্যাগুইরে। জালে বল জড়িয়ে যাওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে অসাধারণ দক্ষতায় ঝাঁপিয়ে পড়ে দলকে বিপদমুক্ত করেন ডেনিশ গোলরক্ষক স্মাইকেল।
৬৪তম মিনিটে ম্যাসন মাউন্টের দুর্বল শট সহজেই নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেন স্মাইকেল। ৭৩তম মিনিটে চতুরতার সাথে একটি শট নেন মাউন্ট। ইংলিশ মিড ফিল্ডার আলতো শটে বাতাসে বল ভাসিয়ে পাঠান গোলমুখে। বল জড়িয়ে যাচ্ছিল জালে, ঝাঁপয়ে পড়ে কর্নারের বিনিময়ে দলকে বিপদমুক্ত স্মাইকেল। ৮০তম মিনিটে ক্যালভিন ফিলিপসের নেওয়া শট পোস্টের বেশ দূর দিয়ে চলে যায়।
৮২তম মিনিটে ডেকলান রাইসের ফ্রি কিকে হেড নেন জন স্টোন্স, তার নেওয়া হেড লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। দ্বিতীয়ার্ধে কোনো দলই গোল না পাওয়ায় খেলা গড়ায় অতিরিক্ত সময়ে। যেখানে গোল করে দলকে জয় এনে দেন ইংলিশ অধিনায়ক হ্যারি কেইন। ১০৪তম মিনিটে পেনাল্টি থেকে গোল করেন তিনি।
অবশ্য কেইনের স্পট কিক ফিরিয়ে দিয়েছিলেন পুরো ম্যাচে বেশ কয়েকবার ডেনমার্ককে বাঁচানো স্মাইকেল। কিন্তু বল ফিরিয়ে হারে রাখতে পারেননি তিনি। ফিরে আসা বলে শট নিয়ে গোল আদয় করে নেন হ্যারি কেইন। বাকি সময়ে অনেক চেষ্টা করেও গোল শোধ করতে পারেনি ডেনমার্ক।