কোভিড-১৯ মোকাবেলায় জরুরী চিকিৎসা সামগ্রী সরবরাহ করল ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল
কোভিড-১৯ মোকাবেলায় বাংলাদেশের সক্ষমতা বাড়াতে জরুরী চিকিৎসা সামগ্রীর একটি বিশেষ চালান যৌথভাবে অনুদান হিসেবে পাঠিয়েছে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল ও প্রজেক্ট কিওর নামের একটি মার্কিন এনজিও, যা অনুদান হিসেবে সংগৃহীত চিকিৎসা সহায়তা বিতরণের ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় প্রতিষ্ঠান।
এ হস্তান্তর উপলক্ষে গতকাল বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের শার্জে দ্য'ফেয়ার জোঅ্যান ওয়াগনার এবং ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রতিনিধিরা মিলিত হন।
এই দফায় সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশকে সরবরাহ করা হয়েছে ৬০টি অক্সিজেন কনসেন্ট্রেটর এবং ভ্যারিয়েবেল পজিটিভ এয়ার প্রেশার (ভিপিএপি) ইউনিটসহ অন্যান্য অক্সিজেন সরবরাহ ও যন্ত্রের খুচরা যন্ত্রাংশ। এছাড়া আছে, দেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের সহায়তার জন্য কেএন৯৫ এবং এন৯৫ মাস্কসহ ৪৫,০০০ ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম।
এই উদ্যোগটি বাস্তবায়ন করেছে ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের সদস্য শেভরন, এক্সেলারেট এনার্জি, মেটলাইফ ও এইচএসবিসি বাংলাদেশ এবং একে সক্রিয় সহযোগিতা করেছে ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস, ইউএস এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ইউএসএআইডি), ওয়াশিংটন ডিসি'র বাংলাদেশ দূতাবাস, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা অধিদপ্তর।
অনুষ্ঠানে শার্জ দে'ফেয়ার ওয়াগনার বলেন, "বাংলাদেশের জনগণের জরুরী স্বাস্থ্য সেবা সংক্রান্ত চাহিদা মিটাতে এমন মহতি উপহার নিয়ে আমেরিকার ব্যবসায়ী নেতাদের একযোগে এগিয়ে আসতে দেখে আমার গর্ব হচ্ছে। এই মহামারির বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং স্বাস্ব্য সুরক্ষা ও মূল্যবান জীবন বাঁচাতে আপনাদের অবশ্যই সামর্থের সম্মিলিত ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।"
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট নিশা বিসওয়াল বলেন, "কাউন্সিলের সদস্যরা মহামারির এই ঊর্ধ্বগতি সামাল দিতে জরুরী ভিত্তিতে দরকার এমন চিকিৎসা সামগ্রীর সরবরাহ নিয়ে বাংলাদেশে আমাদের অংশীদার ও বন্ধুদের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। আমরা আশা করি, এসব সরঞ্জাম জীবন রক্ষাকারী সেবা নিশ্চিত করবে।"
তিনি আরো বলেন, "কাউন্সিল ও এর সদস্য, প্রজেক্ট কিওর, যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ সরকারের এই দৃশ্যমান অংশীদারিত্ব প্রয়োজনের সময় জরুরী সহায়তা নিশ্চিত করা এবং দুই দেশের মধ্যে দৃঢ় বন্ধুত্বের প্রমাণ।"
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের চেয়ার ও শেভরনের ভাইস প্রেসিডেন্ট, বিজনেস ডেভেলপমেন্ট জে আর. প্রায়োর বলেন, "কোভিড মহামারির শুরু থেকেই এই ভাইরাসের সংক্রমণের কারণে সৃষ্ট মানবিক ও অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ কাটিয়ে উঠতে বাংলাদেশের মানুষের জ্বালানীর চাহিদা পূরণে শেভরন কাজ করে যাচ্ছে। এই অভূতপূর্ব সংকট মোকাবেলায় ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের নেতৃত্বে বাংলাদেশের জনগণের পাশে দাঁড়াতে তৈরী আছে যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়।"
তিনি বলেন, "একযোগে কাজ করার মাধ্যমে এই সংকট কাটিয়ে উঠে আমরা আমাদের সুন্দর ভবিষ্যতের জন্য তৈরী হবো।"
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল বোর্ডের সদস্য ও এক্সেলারেট এনার্জির প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা স্টিভেন কোবোস বলেন, "এক্সেলারেট এনার্জি বাংলাদেশে নিরাপদ, ঝুঁকিমুক্ত এবং আস্থা রাখা যায় এমন জ্বালানী সরবরাহ করে যাচ্ছে। তাই আমাদের কর্মচারী এবং বাংলাদেশের স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা আমাদের কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা কৃতজ্ঞ যে, প্রজেক্ট কিওরের যেখানে সবচেয়ে বেশি দরকার সেখানে এসব জীবনরক্ষাকারী সরঞ্জাম সরবরাহ করার অভিজ্ঞতা ও কারিগরি দক্ষতা আছে।"
ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিলের আরেক বোর্ড সদস্য এবং মেটলাইফের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট এলেনা বাটারোভা বলেন, "১৫০ বছরেরও বেশি সময় ধরে মেটলাইফ মানুষকে তাদের পরিবারের সুরক্ষা ও ভবিষ্যতের আস্থা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সাহায্য করে আসছে। এটা আমাদের লক্ষ্য এবং আমরা খুবই আনন্দিত এই জন্য যে, এমন অনিশ্চয়তার মাঝে বাংলাদেশের মানুষের মানসিক শান্তি নিশ্চিত করতে মেটলাইফের চলমান কাজের অংশ হিসেবে, মেটলাইফ ফাউন্ডেশন এসব জরুরী চিকিৎসা সরঞ্জাম সরবরাহ করতে পেরেছে।"
এইচএসবিসি বাংলাদেশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এমডি মাহবুব উর রহমান বলেন, "২০২০ এ এই মহামারির শুরু থেকেই এইচএসবিসি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এবং সম্মুখসারীর যোদ্ধাদের পাশে থাকে আমাদের 'দেওয়ার আনন্দ (জয় অব গিভিং)' উদ্যোগের মাধ্যমে। বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় আমরা ১০০,০০০ এরও বেশি মানুষের কাছে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছি খাবার, চিকিৎসা সামগ্রী এবং জীবিকা নির্বাহের সহায়তা নিয়ে। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের অংশীদারদের সঙ্গে নিয়ে এই চিকিৎসা সহায়তা কোভিড-১৯ এর সময় একটি সময়োচিত উদ্যোগ এবং এই মহতি কাজের অংশ হতে পেরে এইচএসবিসি খুবই আনন্দিত।"
প্রজেক্ট কিওরের প্রেসিডেন্ট ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড. ডগলাস জ্যাকসন বলেন, "কোভিড-১৯ এর অভূতপূর্ব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রজেক্ট কিওর শুরু থেকেই সামনের কাতারে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। প্রথমে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন এলাকায় স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা দেওয়ার জন্য ত্রাণ বিতরণ করা হয়েছে। এখন আমরা বাংলাদেশসহ সারা পৃথিবীতে কোভিড-১৯ মোকাবেলার গুরুত্বপূর্ণ কাজে আমাদের সহযোগীদের সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়েছি।
স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা যখন স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সেবা দেওয়ার জন্য চিকিৎসা ও আশা দেওয়ার নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন, তখন এই ত্রাণ সহায়তা তাদের সাহায্য করবে।"