শিক্ষার্থীদের টিকাদানের পর সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার
বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীকে টিকাদানের পর সেপ্টেম্বরে উচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খোলার পরিকল্পনা করছে সরকার। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) সূত্র থেকে এই তথ্য জানা গেছে।
নতুন এবং ভর্তিচ্ছুক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদেরও চলতি বছরের অক্টোবরে বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে টিকা দেওয়া হবে।
সম্প্রতি ইউজিসি এবং জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতক পর্যায়ের সরকারি কলেজগুলোকে টিকাদানের জন্য শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহের নির্দেশনা দেওয়া হয়।
ইউজিসি সদস্য অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে ক্লাস শুরু করার আগে অবশ্যই টিকা দিতে হবে। দেশে ভ্যাকসিন সহজলভ্য হওয়ায় আমরা সেপ্টেম্বরে বিশ্ববিদ্যালয় পুনরায় খোলার পরিকল্পনা করছি। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ দ্রুত সাড়া দিলে তা সম্ভব হবে।"
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক সৈয়দ গোলাম ফারুক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের টিকা দেওয়ার বিষয়ে কাজ করছে। স্নাতক পর্যায়ে কলেজ শিক্ষার্থীদের টিকাদান নিয়েও ভাবছে তারা।
দেশের ১৫০টির বেশি সরকারি ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪০ লাখ স্নাতক পর্যায়ের এবং স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী রয়েছেন। আরও ১৫ লাখ নতুন শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য অপেক্ষা করছেন।
অন্যদিকে, চলতি মাসে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল ও হোস্টেলে থাকা শিক্ষার্থী এবং বিদেশে উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া শিক্ষার্থীদের টিকাদান শুরু হয়ে গেছে।
আবাসিক শিক্ষার্থীদের টিকাদান কার্যক্রম সমাপ্ত হলেই সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো খুলবে। শুরুতে, শেষ বর্ষের স্নাতকোত্তর এবং স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের হলে থাকতে দেওয়া হবে। পরবর্তীতে, অন্যান্য অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে আসা উন্মুক্ত করা হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক শিক্ষার্থী জুবায়ের আহমেদ জানান, গত ১১ জুলাই ভ্যাকসিন গ্রহণ করে তিনি বেশ আনন্দিত। এখন তিনি হলে ফেরার অপেক্ষা করছেন।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টির অধিকাংশ আবাসিক শিক্ষার্থী ইতোমধ্যে টিকা নিয়েছেন। এখন তারা হলগুলো পুনরায় খুলতে সরকারি নির্দেশনার অপেক্ষা করছেন।
সরকার সকল বিশ্ববিদ্যালয় এবং স্নাতক পর্যায়ের কলেজ শিক্ষার্থী এবং আবাসিক ও অনাবাসিক সকল শিক্ষার্থীকে এক মাসের ভেতর টিকা দিতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন তিনি।
সকল শিক্ষার্থীকে টিকাদানের আওতায় আনতে ইউনিক আইডি প্রদান
অনেক শিক্ষার্থীর কাছেই জাতীয় পরিচয়পত্র নেই। ফলে, তারা টিকাদানে নিবন্ধন করাতে পারছেন না। এই পরিস্থিতিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় তাদের নাম সংগ্রহ করে ইউনিক পরিচয় পত্র তৈরি করছেন যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নিকট পাঠানো হবে। ফলে, এসব শিক্ষার্থীরা টিকা নিতে সক্ষম হবেন।
১৫ জুলাই ইউজিসি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে পৃথকভাবে জাতীয় পরিচয় পত্র না থাকা শিক্ষার্থীদের ইউনিক শনাক্তকরণ নাম্বার দেওয়ার নির্দেশনা প্রদান করে।
এছাড়া, এখন থেকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি থেকে শুরু করে সকল কার্যক্রম ইউনিক আইডি দ্বারা পরিচালিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
অধ্যাপক বিশ্বজিৎ চন্দ্র বলেন, "শিক্ষার্থীদের ইউনিক শনাক্তকরণ নাম্বার কেবল টিকাদান নয় বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শৃঙ্খলা ও ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও কার্যকর হবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান এবং ভবিষ্যতে আগত শিক্ষার্থীদের জন্য এই আইডি রেজিস্ট্রেশন নাম্বার হিসেবে পরিগণিত হবে।"
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম মশিউর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, তারা প্রায় পাঁচ লাখ শিক্ষার্থীর তথ্য পেয়েছেন যাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আছে। সরকারি এবং বেসরকারি কলেজগুলোকে শিক্ষার্থীদের নাম ও বিস্তারিত তথ্য পাঠানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
নর্থ-সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আতিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইউজিসির নির্দেশনা মোতাবেক তথ্য সংগ্রহ করছে এবং যত দ্রুত সম্ভব শিক্ষার্থীদের তালিকা পাঠানো হবে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান চালু
কোভিড-১৯ এ মৃত্যুবরণকারী ১৯ হাজার ২৭৪ জনের মধ্যে ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সীদের সংখ্যা ২ দশমিক ১৪ শতাংশ।
স্বনামধন্য ভাইরোলজিস্ট এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, ২০ থেকে ৩০ বছর বয়সী অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংক্রমণ এবং মৃত্যুহার কম।
সরকার সকল শিক্ষার্থীদের টিকাদানের পর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো পুনরায় চালু করতে পারে। তবে, শিক্ষার্থীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি মাস্ক পরিধান করা এবং হাত ধোয়ার মতো বিধিগুলো অনুসরণ করতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
গত বছর ১৬ মার্চ শিক্ষার্থীদের মাঝে সংক্রমণ রোধে সরকার সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও কোচিং সেন্টার বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়। পরবর্তীতে কয়েক দফায় বন্ধের সময়সীমা বৃদ্ধি করা হয়।