ফাইজারের তৃতীয় ডোজ গ্রহণে ৫ থেকে ১১ গুণ বেশি অ্যান্টিবডি, মিলবে ডেল্টার বিরুদ্ধে ‘দৃঢ়’ সুরক্ষা
ফাইজার/ বায়োএনটেকের তৃতীয় ডোজ ভ্যাকসিন গ্রহণের মাধ্যমে কোভিডের অধিক সংক্রামক ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে 'দৃঢ়' সুরক্ষা মিলবে। বুধবার ফাইজারের প্রকাশিত নতুন তথ্য থেকে মিলেছে এই ইঙ্গিত।
অনলাইনে প্রকাশিত এই তথ্যানুসারে, ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ গ্রহণের মাধ্যমে ১৮ থেকে ৫৫ বছর বয়সীদের মধ্যে অ্যান্টিবডির মাত্রা পাঁচগুণ বৃদ্ধি পায়। ফলে, সহজেই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টকে প্রতিহত করা সম্ভব হবে বলে আশা করছে ফাইজার কর্তৃপক্ষ।
অন্যদিকে, ৬৫ থেকে ৮৫ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট প্রতিহত করতে অতিরিক্ত একটি ডোজ গ্রহণে অ্যান্টিবডির মাত্রা ১১ গুণ বৃদ্ধি পায়।
তবে, এই তথ্য এখন পর্যন্ত বিশেষজ্ঞদের দ্বারা পর্যালোচিত বা পিয়ার রিভিউড নয়। এছাড়া আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিবেদনটি কোথাও প্রকাশ করা হয়নি। ২৩ জন ব্যক্তির ওপর পরীক্ষার ভিত্তিতে এই তথ্য দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ফাইজারের গবেষণা, উন্নয়ন এবং চিকিৎসা ব্যবস্থাপনার নেতৃত্বদানকারী ড. মাইকেল ডোলস্টেন তৃতীয় ডোজের নতুন এই তথ্যকে 'উৎসাহব্যঞ্জক' বলে মন্তব্য করেছেন।
"পূর্ণাঙ্গ টিকাদানের ছয় মাস পর যখন হয়তো সুরক্ষা ব্যবস্থা কমতে শুরু করে, তখন তৃতীয় ডোজ টিকা গ্রহণে অংশগ্রহণকারীদের দেহে অ্যান্টিবডির মাত্রা তিন ডোজ দেওয়ার আগের তুলনায় ১০০ গুণ বৃদ্ধি পায়," বলেন তিনি।
ডেল্টা সংক্রমণ যখন আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়ছে তখন প্রাথমিকভাবে পাওয়া এই তথ্য নিয়ে তিনি আশাবাদী।
এছাড়া, তৃতীয় ডোজ গ্রহণের পর মূল করোনাভাইরাস এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় পাওয়া বিটা ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে উচ্চামাত্রার অ্যান্টিবডি উৎপন্ন হওয়ার তথ্যও পাওয়া গেছে।
তবে, ফাইজারের দুই টিকা গ্রহণের পর তা মাত্র ছয় মাস ধরে নিরাপত্তা দিতে সক্ষম বলে জানা গেছে। বুধবার পৃথকভাবে প্রকাশিত নতুন নিরাপত্তা এবং কার্যকারিতা বিষয়ক প্রতিবেদনে ফাইজার ও সহযোগী বায়োএনটেক এই তথ্য প্রকাশ করে। ছয় মাস পর দেহের সুরক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে কমার সম্ভাবনা থাকে বলেও জানায় তারা।
বিশ্বব্যাপী ৪৪ হাজার স্বেচ্ছাসেবকের ওপর পরিচালিত ট্রায়ালের তথ্য থেকে বুধবার আনুষ্ঠানিক প্রকাশনার পূর্বেই অনলাইনে এই তথ্য প্রকাশ পায়।
প্রতিবেদনটির তথ্যানুসারে, প্রথম ছয় মাসে ভ্যাকসিনের সার্বিক কার্যকারিতা প্রায় ৯১ শতাংশ। অন্যদিকে, গুরুতর কোভিড আক্রান্ত হওয়ার বিরুদ্ধে ভ্যাকসিনটির কার্যকারিতা ৯৭ শতাংশ পর্যন্ত। এই প্রতিবেদনটিও এখন পর্যন্ত পিয়ার-রিভিউড নয় এবং কোনো সাময়িকীতেও প্রকাশিত হয়নি।
প্রতিবেদনে আরও দেখা যায় যে, টিকার দ্বিতীয় ডোজ গ্রহণের এক সপ্তাহ থেকে প্রায় দুই মাসের মধ্যে ভ্যাকসিনের কার্যকারিতা সর্বোচ্চ ৯৬ শতাংশের ওপর পৌঁছায়। পরবর্তীতে, চার থেকে ছয় মাস পর ধীরে ধীরে কমে তা ৮৩ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে আসে। শেষ দুইমাসে কার্যকারিতা গড়ে ৬ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস পায়।
এর আগে, এই মাসের শুরুতে ফাইজার সময়ের সাথে তাদের কোভিড ভ্যাকসিনের মাধ্যমে অর্জিত সুরক্ষা কমতে থাকার ঘোষণা দেয়। তারা, মানুষকে কোভিডের বিভিন্ন ভ্যারিয়েন্ট থেকে রক্ষা করতে তৃতীয় ডোজ নিয়ে কাজ করার কথাও জানায়।
এছাড়া, আগস্ট থেকে ভ্যাকসিনের তৃতীয় ডোজ দেওয়ার জন্য তারা যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ওষুধ প্রশাসনের (এফডিএ) নিকট জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন চাইবে বলেও জানায়।
তবে, এফডিএ এবং সিডিএ উভয় প্রতিষ্ঠানই জানিয়েছে যে এই মুহূর্তে আমেরিকানদের তৃতীয় ডোজ টিকার প্রয়োজন নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্রের (সিডিসি) বক্তব্য অনুসারে, বর্তমানে বিদ্যমান ভ্যাকসিনগুলো কোভিডের সাধারণ ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে কার্যকর।
এছাড়া, কখন অতিরিক্ত ডোজের প্রয়োজন হবে তা জানানোর এখতিয়ার কেবল ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর একার নয় বলেও জানিয়েছে এই নিয়ন্ত্রক সংস্থারা।
সূত্র: সিএনএন