শেষ হলো প্রাণঘাতী জুলাই, সামনে আরও বিপদ
এক মাসে ৬,১৮২ মৃত্যু ও ৩,৩৬,২২৬ জন নতুন রোগী শণাক্তের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ও সবচেয়ে বেশি রোগী শণাক্তের মাস জুলাই।
জুলাই শেষ হলেও সংক্রমণ ও মৃত্যু পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছেনা শিগগিরই। আগস্টের মাঝামাঝি সময়ে সংক্রমণ পরিস্থিতি আরো খারাপ হওয়ার আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।
সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট - আইইডিসিআরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের আশঙ্কা আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহে সংক্রমণ ও মৃত্যু আরো বাড়বে। সেটি হবে মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এখনি পরিস্থিতি খারাপ, পজিটিভিটি রেট ৩০% এর ওপরে থাকছে। ঈদের আগে সাতদিন যে বিধিনিষেধ শিথিল ছিলো সেটার প্রভাব পড়বে আগস্টের প্রথম দুই সপ্তাহে। চলমান বিধিনিষেধ যদি কার্যকর করা যায় তাহলে এটির সুফল আগস্টের শেষে পাওয়া যাবে বলে আশা করা যায়।"
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টা করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দেশে আরও ২১৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ নিয়ে মহামারি শুরুর পর থেকে গত দেড় বছরে করোনায় মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২০ হাজার ৬৮৫ জনে।
গত ২৫ জুলাই থেকে প্রতিদিনই দেশে করোনাভাইরাসে ২০০'র বেশি মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।
গত ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে আরও ৯ হাজার ৩৬৯ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এসময় দেশে পরীক্ষার বিপরীতে করোনাভাইরাসে সংক্রমণের হার ছিল ৩০ দশমিক ২৮ শতাংশ। গত দেড় বছরে বাংলাদেশের ১২ লাখ ৪৯ হাজার ৪৮৪ জনের দেহে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে।
এর আগে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর হিসাবে সবচেয়ে প্রাণঘাতী মাস ছিল চলতি বছরের এপ্রিল। ওই মাসে দেশে ২ হাজার ৪০৪ জনের মৃত্যু হয় করোনায় যার মধ্যে একদিনে সর্বোচ্চ মারা যায় ১১২ জন। এর পাশাপাশি ওই মাসে শতাধিক মৃত্যু হয় ৫ দিন।
কিন্তু জুলাইয়ের ১৪ দিনেই এপ্রিলের মৃত্যুর রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। জুলাই মাসের একদিনও দেশে কোভিডে মৃত্যু একশোর নিচে নামেনি।
লকডাউনের মধ্যেই আগামীকাল রোববার থেকে রপ্তানিমুখী শিল্প কারখানা খুলে যাওয়ার সিদ্ধান্তে সড়কে, ফেরিতে ঢাকামুখী মানুষের উপচে পড়া ভিড় ছিলো শনিবার। এতে সংক্রমণ আরো ছড়ানোর ঝুঁকি অনেক বেড়েছে।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, "লকডাউনের মধ্যে শিল্প কারখানা খুলে দেয়ায় শনিবারের হঠাৎ ব্যাপকহারে মানুষের জনসমাগম আমাদের জন্য ঝুঁকিটা আরো অনেক বাড়িয়ে দিলো। এর ফলে সংক্রমণ আরো বাড়বে। চলমান বিধিনিষেধের প্রথম সপ্তাহ একটু কঠোর ছিলো কিন্তু এখন বিধিনিষেধ যদি ভেঙ্গে পরে তাহলে লকডাউনের সুফল পুরোটা পাওয়া যাবে না।"
The Directorate General of Health Services (DGHS) on Friday recommended that the ongoing countrywide lockdown be continued considering the worsening Covid-19 situation.
এদিকে গত শুক্রবার করোনাভাইরাস মহামারি পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় চলমান লকডাউন আরও বাড়ানোর সুপারিশ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশীদ আলম বলেন, "সরকার যদি সবকিছু পুনরায় খুলে দেয় তাহলে সংক্রমণ হার অবশ্যই বেড়ে যাবে। কারখানা খোলার চাপ রয়েছে। কিন্তু পরবর্তীতে সংক্রমণ বেড়ে গেলে আমরা রোগীদের হাসপাতালে জায়গা দিতে পারবো না।"
রোগী বাড়ায় এরই মধ্যে কোভিড হাসপাতালগুলোতে ৮০% বেড দখল হয়ে গেছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজসহ বড় বড় হাসপাতালগুলো বেড সংকটের কারণে রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। ঢাকার অধিকাংশ কোভিড ডেডিকেটিড হাসপাতালে কোন আইসিইউ বেড খালি নেই। এমন পরিস্থিতিতে এখন দিনে যে ১৫ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাদের মধ্যে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রিটিক্যাল রোগীকে হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সেজন্য রোগী সামলাতে দ্রুত উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ তাদের।
ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, যত রোগী শনাক্ত হচ্ছে তাদের যদি অন্তুত টেলিমেডিসিনের আওতায় এনে পরামর্শ দেয়া যায় তাহলে ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা কমে যাবে এবং হাসপাতালের ওপর চাপ কমবে। এছাড়া সরকারি ও সামাজিক উদ্যোগে কমিউনিটি আইসোলেশন সেন্টার করতে হবে। রোগীরা পজিটিভ হওয়ার পর আইসোলেশনে থাকলে একদিকে ক্রিটিক্যাল রোগীর সংখ্যা কমে যাবে এবং রোগ ছড়াবে না। এখন শনাক্ত রোগীদের ব্যবস্থাপনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। মৃত্যু ও শনাক্ত কমাতে এটি ইমিডিয়েট ইফেক্ট হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগী অধ্যাপক ও অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কোভিড-১৯ মডেলিং কনসোর্টিয়াম এর টিম মেম্বার শাফিউন শিমুল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "হঠাৎ করে দেশে সংক্রমণ কমবেনা, তাই মৃত্যু কমাতে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দিতে হবে। ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে অন্তত হাইফ্লো অক্সিজেনের ব্যবস্থা করতে হবে। এছাড়া মৃত্যু কমাতে প্রায়োরিটি বেসিসে দ্রুত ৫০ ঊর্ধ্ব নাগরিকদের ও তারপর কম বয়সী কোমর্বিড ব্যক্তিদের ভ্যাকসিনেটেড করতে হবে।"
তিনি আরও বলেন, "৫ আগস্ট পর্যন্ত লকডাউন থাকবে ধরে নিয়ে আমরা গত ২৫ জুলাই মডেলিং করেছিলাম যে আগস্ট মাস জুলাইয়ের মত ডেডলিয়েস্ট হবে না কিন্তু ইনফেশন বাড়বে। তবে হঠাৎ গার্মেন্টস খুলে দেয়ার সিদ্ধান্তে যে ব্যাপক জনসমাগম হলো তাতে আমাদের মডেলিং বদলে যেতে পারে। তাই এখন হাসপাতাল ম্যানেজমেন্ট ও সংক্রমণ কমাতে প্রিভেন্টিভ মেজারসের ওপর জোর দিতে হবে, শতভাগ মানুষকে মাস্ক পরাতে হবে।"