তারা শিশু বয়সে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন, ২১ বছর বয়সে এসে তারা সবাই অবৈধ
২১ বছর বয়সী আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োমেডিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ের শিক্ষার্থী পারীন মাহাত্রে আগামী বছরের মধ্যে তার স্নাতক সম্পন্ন করতে চলেছেন। তিনি আশা করছেন যে, তার ডিগ্রি গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর জন্য চিকিৎসা যন্ত্র তৈরির ক্যারিয়ার গড়তে সাহায্য করবে।
মাহাত্রে বলেন, "মহামারির আগে আমি আসলে হাসপাতালে একজন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে ছিলাম এবং সেখানের কর্মীরা যে প্রযুক্তি ব্যবহার করে রোগীদের উচ্চ স্তরের সেবা প্রদান করেছিলো তা আমি সরাসরি দেখেছিলাম। এই জনগোষ্ঠীকে তাদের প্রাপ্য চিকিৎসা সেবা পেতে আমি সাহায্য করতে চাই।"
মাহাত্রের জন্ম ভারতে হলেও তার বেড়ে ওঠা আইওয়া সিটিতে। তার বাবা-মা আইওয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার জন্য এই শহরে আসলে চার মাস বয়সেই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসিত হন। পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় তার বাবা-মাকে অস্থায়ী কাজের ভিসা স্পন্সর করে যার ফলে মাহাত্রে একটি নির্ভরশীল ভিসার ভিত্তিতে বসবাস করতে থাকেন। তবে, বর্তমান অভিবাসন নীতির অধীনে তিনি ২১ বছর বয়সের পর তার বাবা-মায়ের ভিসায় থাকার যোগ্য নন।
মাহাত্রে তার ২১ তম জন্মদিন অনিচ্ছা ও দুশ্চিন্তার সাথে পালন করেছিলেন। যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান এবং শিক্ষা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অন্য বিকল্প খুঁজে পেতে তার পরিবারকে হিমশিম খেতে হয়েছিলো বলে জানান তিনি।
বর্তমানে তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় আছেন। তিনি বলেন, "আমার স্নাতক সম্পন্ন হয়ে গেলে আমাকে কাজের ভিসা স্পন্সর করার জন্য একজন নিয়োগকর্তা খুঁজতে হবে অথবা আমার চলে যেতে হবে।" কাজের ভিসা পেলে সে আরও কয়েকবছর থাকতে পারে কিন্তু সেসকল ভিসার সংখ্যাও সীমিত। তা না হলে, তাকে নির্বাসন প্রক্রিয়ার মত মারাত্মক পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে।
দক্ষিণ ইলিনয়ে বেড়ে ওঠা কানাডার নাগরিক দীপ প্যাটেল বলেন, "আমাদের জরুরি ভিত্তিতে এর সমাধান দরকার কারণ অভিবাসন ব্যবস্থায় বর্তমানে আমাদের রক্ষা করার মত কোনো ব্যবস্থা নেই।"
প্যাটেলের বাবা-মা বিদেশি বিনিয়োগকারী, যাদের ভিসার ধরন অনুযায়ী তাদের পরিবারের কিছু সদস্যের গ্রিন কার্ড পাওয়ার জন্য কিছু বিকল্প দেওয়া রয়েছে। ২১ বছর বয়সে প্যাটেল অস্থায়ী কাজের ভিসার মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করার সুযোগ পেয়েছিলেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, তার মতো মানুষের জন্য আরও স্থায়ী ব্যবস্থা প্রয়োজন এবং তাদের পক্ষ থেকে কাজ করার জন্য তিনি ২০১৭ সালে ইম্প্রুভ দ্য ড্রিম নামের একটি সংগঠন গড়ে তুলেছেন। এই সংস্থার সাথে মাহাত্রেও যুক্ত।
স্থায়ীভাবে বসবাস বা নাগরিকত্বের কোন পথ ছাড়াই কয়েক বছর যুক্তরাষ্ট্রে আইনতভাবে বসবাস করা সম্ভব
কিছু অভিবাসন স্থিতি, যেমন প্যাটেলের পাওয়া ই-২ ভিসা সাধারণত অভিবাসীদের স্থায়ী বসবাসের জন্য আবেদন করার সুযোগ দেয় না। এক্ষেত্রে তার মত তরুণ অভিবাসীদের জন্য এ পরিস্থিতি অত্যন্ত জটিল হতে পারে।
অপরদিকে, এইচ-১বি নামক দক্ষ-কর্মী ভিসা স্থায়ী বসবাসের সুযোগ দিয়ে থাকে। প্রতিবছর ৮০ হাজারেরও বেশি কর্মীকে ভিসা দেওয়া হয় এবং প্রায়ই বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চাকরির জন্য বিশেষ দক্ষতা সম্পন্ন কর্মীদেরই এই ভিসা দেওয়া হয়ে থাকে। এসকল কর্মীরা নির্ভরশীল অবস্থানে রেখে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে আসতে পারে। মাহাত্রে এই দলের অংশ। তার পরিবার ২০১২ সালে গ্রিন কার্ডের জন্য আবেদন করে। কিন্তু তিনি ও তার পরিবার ভারতে জন্মগ্রহণ করায় তাদের অতিরিক্ত ব্যাকলগের মুখোমুখি হতে হয়েছে। এটি মূলত ভারত ও চীনে জন্মগ্রহণকারীদের বেলায় ঘটে থাকে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র প্রতিটি দেশকে বছরে ৭ শতাংশ গ্রিন কার্ড দিয়ে থাকে। ক্যাটো ইন্সটিটিউটের তথ্য অনুযায়ী, আবেদনকারীদের মধ্যে ভারত এবং চীনের মানুষই বেশি। এসকল আবেদনকারীকে তাদের আবেদন অনুমোদিত হওয়ার জন্য কয়েক দশক পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতে পারে।
এতে মাহাত্রের মত মানুষরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। তার বাবা মা গ্রিন কার্ড পাওয়ার আগ পর্যন্ত নিজেদের কর্মী ভিসা নবায়ন করতে পারবেন, কিন্তু মাহাত্রের অবস্থা ভিন্ন। তাদের আর কতদিন অপেক্ষা করতে হবে তা নিয়ে নিশ্চিত নন বলে জানান তিনি।
নথিভুক্ত স্বপ্নদর্শীরা আশা করছেন কংগ্রেস তাদের সাহায্য করতে পারে
প্যাটেল বলেছেন যে, আইনই এখন তাদের সমস্যার একমাত্র সমাধান। অননুমোদিত অভিবাসী, অস্থায়ী সুরক্ষিত স্ট্যাটাস হোল্ডার এবং প্যাটেলের মত ডকুমেন্টেড ড্রিমারদের জন্য স্থায়ী বসবাসের একটি পথ তৈরি করেছে এই বছরের আমেরিকান ড্রিম অ্যান্ড প্রমিস অ্যাক্ট। মার্চ মাসে হাউজ পাস করে এটি এখন সিনেটে বিবেচনার জন্য গেছে। এছাড়াও গত মাসে আইন প্রণেতাদের একটি দ্বিপাক্ষীয় গোষ্ঠী আমেরিকাস চাইল্ড অ্যাক্ট চালু করে। এটি পাস হলে ২১ বছরের পরও নির্ভরশীল ভিসাধারীরা দেশটিতে থাকার সুযোগ পাবে।
বিলের সহ-স্পন্সর রাজা কৃষ্ণমূর্তি এক বিবৃতিতে বলেন, "দীর্ঘমেয়াদী ভিসাধারীদের সন্তানরা যুক্তরাষ্ট্রে বড় হয়েছেন এবং আমেরিকান স্বপ্নকে নিজেদের মত করে গ্রহণ করেছেন। কিন্তু আমাদের অভিবাসন ব্যবস্থার বর্তমান দুরাবস্থা তাদের নিজেদের ক্যারিয়ার এবং পরিবার শুরুর আগেই চলে যেতে বাধ্য করে।"
মাহাত্রে বর্তমানে তার নতুন অ্যাকাডেমিক ক্যারিয়ারের দিকে মন দিচ্ছেন। তবে, আমেরিকা ছেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তাও তার মনে জন্মানো শুরু করেছে বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, "আমি ভাবছি যদি আমাকে স্বনির্বাসন করতে হয় তাহলে কি হবে। আমার ভবিষ্যৎ কেমন হবে? আমি আমার বন্ধু এবং বাবা-মাকে শুধু এই অভিবাসন আইনের কারণে ছেড়ে যাবো এবং এটি অত্যন্ত অন্যায় বলে মনে হচ্ছে।"
সূত্র: এনপিআর