পরিধি বাড়ছে সিলেট সিটি করপোরেশনের
আয়তনের দিক দিয়ে দেশের সবচেয়ে ছোট সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক)। ২৬ দশমিক ৫ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এই নগরীকে ২০১৪ সালে সম্প্রসারণে উদ্যোগ নেয় সিসিক। নগরীর বর্তমান আকারের প্রায় ছয়গুণ আয়তন বৃদ্ধির একটি প্রস্তাব জমা দেওয়া হয় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ে। তবে পাঁচ বছর ধরে আটকে ছিল এ প্রস্তাবনা।
এ অবস্থায় গত ১৭ নভেম্বর সিলেট জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সিটি করপোরেশন সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে অংশ নিয়ে সিলেট-১ আসনের সাংসদ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন নগরীর আয়তন বাড়ানোর প্রস্তাবে একাত্মতা পোষণ করেন। এ ব্যাপারে করণীয় সম্পর্কে দিকনির্দেশনাও দেন তিনি। ওই বৈঠকের পর সিটি করপোরেশন সম্প্রসারণের উদ্যোগে গতি পেয়েছে বলে মনে করছেন নগরকর্তারা।
সিটি করপোরেশন সূত্র জানায়, ১৮৭৮ সালে পৌনে দুই বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছিল সিলেট পৌরসভা। ২০০২ সালে সিলেট সিটি করপোরেশনে উন্নীত হলে পরিধি বাড়ে। তখন ২৬ দশমিক ৫০ বর্গকিলোমিটার করা হয় সিটি করপোরেশনের আয়তন। সিটি করপোরেশন গঠনের প্রায় এক যুগ পর ১৬০ দশমিক ৬২ বর্গকিলোমিটার আয়তনে মহানগর করার প্রস্তাব দেওয়া হয়। ওই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে সিসিকের ২৭টি ওয়ার্ডের সংখ্যা বেড়ে অর্ধশতাধিক হবে।
সিসিকের জনসংযোগ দপ্তর জানায়, সিলেট নগরীর বর্তমান লোকসংখ্যা প্রায় ৫ লাখ। তবে নগরীর আশপাশের এলাকার আরও কয়েক লাখ বাসিন্দা সিসিকের নাগরিক সুবিধা ভোগ করেন। কিন্তু ওইসব এলাকা নগরীর ভেতরে না হওয়ায় সেখানকার বাসিন্দাদের কাছ থেকে রাজস্ব আদায় করা যাচ্ছে না। এতে সিটি করপোরেশনের রাজস্বে ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।
সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) পরিধি বাড়ানো হলে নগরবাসীকে আরও বেশি নাগরিক সুবিধা ও অধিকতর রাজস্ব আদায় হবে বলে মনে করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে মোমেন। তিনি বলেন, সিলেট সিটি করপোরেশনের পরিধি বাড়লে সেবার মানও বাড়বে। আরও বেশি মানুষকে নাগরিক সুবিধা দেওয়া সম্ভব হবে। এতে অধিকতর রাজস্ব আদায় হবে।
অনেক আগেই নগরীর আয়তন বাড়ানো উচিত ছিলো দাবি করে সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, আমরা অনেক আগেই সিসিকের আয়তন বৃদ্ধির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। কিন্তু এতোদিন তা আটকে ছিলো। এবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী উদ্যোগ নেওয়ায় আশা করছি দ্রুতই এটি বাস্তবায়ন হবে।
তিনি বলেন, দেশের মধ্যে সবচেয়ে ছোট হচ্ছে সিলেট সিটি করপোরেশন। সিলেট মহানগর পুলিশ (এসএমপি) এলাকা হওয়ার পর থেকে সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকা সম্প্রসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়। আয়তন বাড়লে রাজস্ব, বরাদ্ধ এবং উন্নয়ন কর্মকান্ড- সবই বাড়বে।
জানা যায়, গত নভেম্বরে এ বিষয়ে মেয়রসহ সিলেটের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকে নগর সম্প্রসারণের ব্যাপারে জেলা প্রশাসন ও সিটি করপোরেশনকে পৃথক দুটি প্রস্তাব তৈরির সিদ্ধান্ত হয়। এ প্রস্তাব তৈরি হলে চূড়ান্ত পর্যায়ে আলোচনার পর মহানগর বর্ধিত করার কাজ শুরু করা হবে বলে সভায় জানানো হয়।
২০১৪ সালে মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সিসিকের এ সংক্রান্ত প্রস্তাবনায় উত্তরে খাদিমনগর চা বাগান, দলদলি চা বাগান ও সালুটিকর, দক্ষিণে শুড়িগাও, মামুদপুর, রুস্তমপুর, কালাইরচক, ঢুমশ্রী ও ছাত্তিঘর, পশ্চিমে চাতল, উত্তর ঘোপাল, কসকালিয়া, বাওনপুর, ইনায়েতপুর, হরিপুর, রঘুপুর, দর্শা, মেদিনীমহল, লক্ষীপাশা, হাজরাই, তালিবপুর ও লক্ষীপুর, এবং পূর্বে বটেশ্বর, বাঘা, হাতিমনগর, আমদরপুর, উত্তরভাগ, বাগরখলা, হিলালপুর, মাইজভাগ, দাউদপুর ও তিরাশিগাওকে সিটি করপোরেশনে অন্তর্ভুক্ত করার প্রস্তাব দেওয়া হয়।
এ প্রস্তাবনা পাস হলে বিলুপ্ত হয়ে যেতে পারে সিলেট সদর ও দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন। এরমধ্যে রয়েছে- সদর উপজেলার খাদিমপাড়া, টুলটিকর, টুকেরবাজার, খাদিমনগর ও কান্দিগাঁও ইউনিয়ন এবং দক্ষিণ সুরমা উপজেলার কুচাই, বরইকান্দি, ও মোল্লারগাও ইউনিয়ন। এছাড়া গোলাপগঞ্জ উপজেলার বাঘা ইউনিয়নের আংশিক এলাকা যুক্ত হতে পারে।
এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার বিভাগ সিলেটের উপ পরিচালক মীর মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, নগর সম্প্রসারণে আমাদের একটি প্রস্তাবনা তৈরি করতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে আগেই একটি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়েছিলো। আমরা সেটি যাচাই-বাছাই করে প্রস্তাবনা তৈরি করছি।
১৭৭২ সালের ১৭ মার্চ সিলেট জেলা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৮৭৪ সাল পর্যন্ত এ জেলা ঢাকা বিভাগের অমত্মর্ভূক্ত ছিল। ওই বছরই সিলেটকে নবসৃষ্ট আসাম প্রদেশের অন্তর্ভূক্ত করা হয়। দেশ ভাগের সময় ১৯৪৭ সালে গণভোটের মাধ্যমে সিলেট জেলা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্গত হয়। সিলেট জেলা তখন চট্টগ্রাম বিভাগের আওতাধীন ছিল। ১৯৮৩-৮৪ সালে বৃহত্তর সিলেট জেলাকে ৪টি নতুন জেলায় বিভক্ত করা হয় এবং ১৯৯৫ সালের ১ আগস্ট সিলেট বিভাগের সৃষ্টি হয়।