মেলিন্ডাকে শেয়ার হস্তান্তরের পর বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তির অবস্থান হারালেন বিল গেটস
প্রাক্তন স্বামী বিল গেটসের কাছ থেকে নতুন করে স্টক ট্রান্সফারের পর মেলিন্ডা ফ্রেঞ্চ গেটসের মোট সম্পদের পরিমাণ এখন আনুমানিক ৫.৭ বিলিয়ন ডলার। গত সপ্তাহে তাদের বিবাহবিচ্ছেদের পর থেকে এ জুটি নিজেদের সম্পদ ভাগ করে নেওয়ার প্রক্রিয়ায় রয়েছে।
ফোর্বসের রিয়াল টাইম বিলিয়নিয়ার র্যাঙ্কিং অনুসারে, বিশ্বের চতুর্থ ধনী ব্যক্তি হিসেবে নিজের স্থান হারানোর জন্য মেলিন্ডার কাছে বিলের স্টক ট্রান্সফারই ছিল যথেষ্ট। ফোর্বসের মতে, বিল গেটসের সম্পদের পরিমাণ বর্তমানে ফেসবুক সিইও মার্ক জাকারবার্গের চেয়ে কিছুটা কম। ১২৯.৬ বিলিয়ন ডলারের মালিক বিল এখন বিশ্বের পঞ্চম ধনী ব্যক্তি।
নতুন এসইসি ফাইলিং অনুযায়ী, বিল গেটসের বিনিয়োগ প্রতিষ্ঠান ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্ট এলএলসি গত বৃহস্পতিবার মেলিন্ডার কাছে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন ডলারের স্টক হস্তান্তর করে। গত মে মাসে, এ দম্পতি তাদের বিবাহবিচ্ছেদের ঘোষণার কয়েক দিন পর মেলিন্ডার কাছে ৩.২ বিলিয়ন ডলারের স্টক হস্তান্তর করেন বিল।
এছাড়াও এসইসি ফাইলিংস জানায় যে, ৩৯২ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের প্রতিষ্ঠান অটোনেশন থেকে ৩.৩ মিলিয়ন ডলারের শেয়ার পেয়েছেন মেলিন্ডা। তিনি এখন ফ্লোরিডা ভিত্তিক এই গাড়ির খুচরা বিক্রেতা প্রতিষ্ঠানের ৮.৮ শতাংশের মালিক। ক্যাসকেড কৃষি যন্ত্রপাতি নির্মাতা ডিয়ার অ্যান্ড কোং থেকে ২.৮ মিলিয়ন এবং কানাডিয়ান ন্যাশনাল রেইলওয়ে কোং থেকে ৯.৫ মিলিয়নের শেয়ারও হস্তান্তর করে। এ দুটি প্রতিষ্ঠানের বর্তমান বাজারমূল্য এক বিলিয়ন ডলার।
মেলিন্ডা শেষমেশ কতটা সম্পদ পাবে তা এখনো অস্পষ্ট। রিয়াল এস্টেট বা বেসরকারি কোম্পানির অংশদারত্বের জন্য তিনি বিলের কাছ থেকে অতিরিক্ত সম্পদও পেয়ে থাকতে পারেন। এছাড়া বিলের ক্যাসকেড ইনভেস্টমেন্টের তালিকায় থাকা কোনো কোম্পানিতে তার মালিকানা যদি ৫ শতাংশের কম হয়, তাহলে তারা জনসম্মুখে স্টক স্থানান্তরের পরিমাণ জানাতে তিনি বাধ্য নন। তবে এ দম্পতির ভাগ্য কিভাবে বিভক্ত হবে তা একটি নন-পাবলিক বিচ্ছেদ চুক্তিতে উল্লেখিত আছে। এ চুক্তিটি মে মাসে বিল ও মেলিন্ডার বিচ্ছেদের ঘোষণা আসার আগে সাক্ষরিত।
তাদের বিবাহ বিচ্ছেদের মূল আবেদনপত্রে বিল এবং মেলিন্ডা বলেছিলেন যে, তাদের সম্পর্ক "আর জোড়া লাগানো সম্ভব নয়"। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল অনুযায়ী, মৃত যৌন নিপীড়ক জেফ্রি এপস্টেইনের সঙ্গে বিলের চলাফেরায় মেলিন্ডা আগে থেকেই ক্ষুব্ধ ছিলেন।
এমনকি তিনি ২০১৯ সাল থেকেই বিবাহ বিচ্ছেদের আইনজীবীদের সাথে পরামর্শ শুরু করেছিলেন। বিলের এক মুখপাত্রও তার বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কের কথা স্বীকার করেছেন বলে জানায় ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল। ২০০০ সালে মাইক্রোসফট এমএসএফটি এর একজন কর্মচারীর সাথে বিলের সম্পর্ক ছিল, যা নিয়ে ২০১৯ সালে কোম্পানির বোর্ড তদন্ত শুরু করে।
গত সপ্তাহে বিল প্রথমবারের মত এপস্টেইনের সাথে তার সম্পর্ক নিয়ে মুখ খোলেন। সিএনএন-এর অ্যান্ডারসন কুপারকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, "এপস্টেইনের সাথে কাটানো সময় একটি "বড় ভুল" ছিলো। "এই মুহূর্তে আমাকে এগিয়ে যেতে হবে। পরিবারের সাথে কাটানো সময়ের মাধ্যমেই আমরা যতটা সম্ভব সুস্থ হয়ে উঠব," বলে যোগ করেন তিনি।
তবে, এত ঝড়ঝাপটার পরও বিল এবং মেলিন্ডা ২০০০ সালে প্রতিষ্ঠিত 'গেটস ফাউন্ডেশনের' সহ-সভাপতি থাকার ঘোষণা দিয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এটি একটি জনহিতকর সংগঠনে পরিণত হয়। তবে, যদি দেখা যায় যে, বিল এবং মেলিন্ডা একসঙ্গে কাজ করতে পারবেন না, তাহলে মেলিন্ডা আগামী দু'বছরের মধ্যে পদত্যাগ করবেন বলে গত মাসে ঘোষণা দেয় ফাউন্ডেশনটি।
সূত্র: ফোর্বস