করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের প্রকোপের মাঝেই মহররম উদযাপনে ইরানিদের ঢল
পবিত্র মহররম মাসের আগমন উপলক্ষে ইতোমধ্যে উৎসবে মেতে উঠেছে ইরান। করোনায় আক্রান্ত হয়ে প্রতি দুই মিনিটে একজন মারা যাচ্ছে, স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের এমন হুঁশিয়ারিতেও ভ্রুক্ষেপ করছেন না সাধারণ জনগণ। খবর আল জাজিরার।
বুধবার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পূর্বের ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৩৬ জন ইরানি মারা গেছেন এবং নতুনভাবে সংক্রমিত হয়েছেন ৪২ হাজার ৫৪১ জন। বর্তমানে ডেল্টা ধরনের প্রকোপে কাবু ইরানে গত বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ৯৫ হাজারেরও বেশি মানুষ মারা গেছেন করোনায় আক্রান্ত হয়ে।
মঙ্গলবার ইরানের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর মাশহাদসহ বেশ কয়েকটি প্রদেশের লোকজনকে মাস্ক ছাড়াই খোলা ও বন্ধ জায়গায় জমায়েত হতে দেখা গেছে বিভিন্ন ভিডিওতে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে মহররম উদযাপনের যে সরকারি নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেটিও এখন স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে বেশ সমালোচিত হচ্ছে। আবদ্ধ জায়গায় ধারণক্ষমতার ২৫ শতাংশ লোককে ঢুকতে দিয়ে ও শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে জমায়েতের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
রাজধানী তেহরানে প্রতিদিন অসংখ্য জানাজা চলতে থাকলেও গণপরিবহনে মানুষের ভিড় কমছে না। শহরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোও খোলাই আছে। দেশের মোট মৃত্যুর এক চতুর্থাংশই এসেছে রাজধানী থেকে।
স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা বলছে জনগণের মাস্ক পরা, শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধির প্রতি আনুগত্য কমছে। ৪০ শতাংশেরও কম মানুষ এখন স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলছে।
অনেক প্রদেশই জানিয়েছে তাদের হাসপাতালগুলোতে জায়গা ফাঁকা নেই। প্রায় স্থানেই হাসপাতালের সব শয্যা করোনার রোগীদের জন্যই বরাদ্দ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে অন্যান্য রোগীরা জায়গা পাচ্ছেন না।
সহযোগী স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইরাজ হরিচি গত মঙ্গলবার জানান যে, করোনায় মৃত্যু আরও এক মাস ধরে বাড়তেই থাকবে। বিভিন্ন জায়গায় চলমান জনসমাগমের ফলে এই সময়টা আরও বাড়তে পারে বলেও মনে করছেন তিনি।
কিন্তু এই শোচনীয় অবস্থার মাঝেও ইরানের করোনা-বিরোধী টাস্ক ফোর্সের প্রধান ও নবনিযুক্ত রাষ্ট্রপতি ইব্রাহিম রাইসি স্বাস্থ্যমন্ত্রী সাইদ নামাকির দেওয়া দুই সপ্তাহের লকডাউনের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছেন।
গত সপ্তাহে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনীকে দেওয়া এক চিঠিতে মন্ত্রী লিখেছেন, যেহেতু অনেক স্বাস্থ্যকর্মী অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তাই দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া না হলে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙে যেতে পারে।
খামেনী নতুন প্রেসিডেন্টের হাতে সিদ্ধান্ত ছেড়ে দিয়েছেন।
টিকা বিতরণ
চীন, রাশিয়া, ভারত, কিউবা এবং বৈশ্বিক কোভ্যাক্স উদ্যোগ থেকে করোনার টিকা আমদানি করেছে ইরান। এছাড়া কিছু দেশীয় প্রতিষ্ঠানও টিকা উৎপাদন করছে।
গত কয়েক সপ্তাহে টিকাদানে কিছুটা গতি আসলেও ৮ কোটি ৩০ লাখ জনগণের কাছে টিকা পৌঁছে দেওয়া থেকে এখনো অনেক দূরে দেশটি।
একটি ডোজ পেয়েছে এমন মানুষের সংখ্যাই সবে ১ কোটি ৩০ লাখ, যা মোট জনসংখ্যার ১৫.৬ শতাংশ। এদের মধ্যে ৩০ লাখ মানুষ ইতোমধ্যে দুই ডোজই পেয়েছেন।
এখন পর্যন্ত ইরানে বিতরণকৃত সিংহভাগ টিকাই এসেছে চীনের সিনোফার্ম থেকে। এরপরই আছে অ্যাস্ট্রাজেনেকা।
প্রথম দেশীয় টিকা উৎপাদনকারী, কোভইরান বারেকাতের টিকা উৎপাদন বেশ কয়েকবার বিলম্বিত হয়েছে। সারা দেশে মাত্র ১০ লাখ টিকা বিতরণ করতে পেরেছে তারা।
খামেনী জুন ও জুলাই মাসে এই বারেকাতেরই দুই ডোজ টিকা নিয়েছেন। এর আগে, জানুয়ারি মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যকে তিনি বিশ্বাস করেন না জানিয়ে এই দুই দেশ থেকে টিকা আমদানি নিষিদ্ধ করে দিয়েছেন।
গত বুধবার খামেনী এক ভিডিও বার্তায় এই মহামারিকে দেশের সবচেয়ে বড় সমস্যা উল্লেখ করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন।
'আমদানিকৃত ও স্থানীয়, দুই রকম টিকাই জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে প্রচেষ্টা দ্বিগুণ বাড়াতে হবে,' ভিডিও বার্তায় বলেন তিনি।
তিনি মহররম উদযাপনে সম্মতি দিলেও সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে বলেছেন।
সূত্র: আল-জাজিরা