ভ্যাকসিন নিতে খেলোয়াড়দের প্রতি গার্দিওলার আহ্বান
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের যে কজন ম্যানেজার খেলোয়াড়দের কোভিড-১৯ প্রতিরোধী ভ্যাকসিন নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, ম্যানচেস্টার সিটির কোচ পেপ গার্দিওলা তাদের অন্যতম।
সম্প্রতি প্রিমিয়ার লিগের সদস্যদের মধ্যে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। গত সোমবার ১১ জনের পজিটিভ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
গার্দিওলার পাশাপাশি মিকেল আর্তেরা, নুনো এস্পিরিতো সান্তো, স্টিভ ব্রুস ও গ্রাহাম পটারের মতো ম্যানেজাররাও খেলোয়াড়দের ভ্যাকসিন নেওয়ার জন্য উদ্বুদ্ধ করেছেন। তবে গার্দিওলার ভাষ্য, খেলোয়াড়দের বোঝানোর ক্ষেত্রে তিনি 'উপযুক্ত ব্যক্তি নন।'
'আমার মনে হয় ডাক্তার ও চিকিৎসা বিভাগ এই কাজ করতে পারবে। তাহলে খেলোয়াড়রা বুঝবেন, ভ্যাকসিন আসলে তাদেরকে, তাদের পরিবার ও সমাজকে সুরক্ষা দেওয়ার জন্যই তৈরি। কিন্তু নিজে থেকে না মানলে, তাদের তো বাধ্য করা যাবে না', বলেন তিনি।
বলে রাখা ভালো, গার্দিওলার মা ২০২০ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।
সাবেক বার্সা ম্যানেজার আরও বলেন, 'আমার মনে হয় তাদেরকে ভ্যাকসিনের উপকারিতা-অপকারিতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা দেওয়া উচিত। নিজের জন্য, পরিবারের জন্য এবং সমাজ ও আশেপাশে কর্মরত সব মানুষের জন্য ভাবা উচিত তাদের। এরপরেই তারা সিদ্ধান্ত নিবেন।'
'তবে যখন সব ডাক্তার, বিজ্ঞানী ও বড় বড় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহামারি দূর করা বা একে মোকাবিলা করে সামনে এগিয়ে যাওয়ার একমাত্র উপায়ই হচ্ছে ভ্যাকসিন গ্রহণ, তখন খেলোয়াড়দের অবশ্যই এ কথা বিবেচনা করা উচিত। কারণ আমরা ইতোমধ্যেই মহামারির কারণে জীবন থেকে দুটি বছর হারিয়ে ফেলেছি', যোগ করেন গার্দিওলা।
এদিকে, আর্সেনালের একাধিক খেলোয়াড় কোভিড-১৯ আক্রান্ত হওয়া সত্ত্বেও ব্রেন্টফোর্ডের সঙ্গে তাদের ওপেনিং ম্যাচটি মাঠে গড়ায়। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন গানার'দের ম্যানেজার আর্তেরো।
আর্সেনালের পিয়ের-এমেরিক অবামিয়াং, আলেক্সান্দ্রে লাকাজেত ও রানার অ্যালেক্স- তিনজনই কোভিড পজিটিভ হওয়ায় সেই ম্যাচে মাঠে নামতে পারেননি। এদিন ব্রেন্টফোর্ডের কাছে ২-০ গোলে হেরে যায় আর্সেনাল।
তবে আর্তেরা জানান, তার ক্লাবের অধিকাংশ খেলোয়াড়ই ভ্যাকসিন নিয়েছেন। সেইসঙ্গে সব স্টাফকে ভ্যাকসিন নেওয়া নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছে ক্লাবটি।
তিনি বলেন, 'আমরা তাদেরকে ভ্যাকসিন নেওয়ার মাধ্যমে নিজেকে ও পরিবারকে সুরক্ষিত রাখতে উৎসাহিত করছি। যদিও এটা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়; কিন্তু আমরা তাদেরকে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার চেষ্টা করছি। বোঝানোর চেষ্টা করছি, কেন ভ্যাকসিন নেওয়া উচিত। তবু দিনশেষে এটা যার যার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।'
টটেনহাম বস নুনোর ভাষ্যে, 'মহামারি এখনো আমাদের সঙ্গেই রয়েছে এবং আমরা একে সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে শিখছি।'
'আমি প্রত্যেকের ব্যক্তিগত পছন্দকে সম্মান জানাই। প্রত্যেকেরই নিজ সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার আছে। কিন্তু আমি ভ্যাকসিন নেওয়ার পক্ষে। আর আমি সব খেলোয়াড়কেও ভ্যাকসিন নিতেই উদ্বুদ্ধ করব। ভ্যাকসিন নেওয়ার মানে এই নয়, আপনি আর কখনোই ভাইরাসের সংস্পর্শে আসবেন না। কিন্তু এটি নিঃসন্দেহে আপনাকে আরেকটু বেশি সুরক্ষা দিবে,' বলেন নুনো।
একই অভিমত জানিয়েছেন নিউক্যাসলের কোচ ব্রুসও। তবে তিনি মনে করেন, এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া খেলোয়াড়দেরই 'বিশেষ অধিকার'।
ব্রুস বলেন, 'এটা সত্যি যে আমাদের অনেক খেলোয়াড়ই ভ্যাকসিন নেননি। কিন্তু আমি সবসময়ই বলে আসছি, সিদ্ধান্ত নেওয়াটা পুরোপুরি তাদের হাতে। আমাদের দুই কি তিনজন খেলোয়াড় সত্যিই খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছিলেন। কার্লের শরীরে কোনো উপসর্গই দেখা দেয়নি, অথচ পরবর্তী ২৪-৪৮ ঘণ্টার মধ্যে তাকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হলো। আমার উপদেশ হচ্ছে, আপনারা টিকা নিন।'
বৃহস্পতিবার ব্রাইটনের ম্যানেজার পটার জানিয়েছেন, কোভিডের কারণে সম্প্রতি তিনি তার পরিবারের এক সদস্যকে হারিয়েছেন।
'আমি পরিবারের এমন একজন সদস্যের মৃত্যু সরাসরি দেখেছি, যিনি ভ্যাকসিন নেননি। তার বয়স হয়েছিল ৪৮ বছর। অবশ্যই তা খেলোয়াড়দের বয়সের সমান নয়; কিন্তু তিনি বলতে গেলে তরুণই ছিলেন। দুই সন্তান রেখে মারা গেছেন তিনি। এটা খুবই মর্মান্তিক,' বলেন পটার।
সবাইকে টিকা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে পিটার আরও বলেন, কেউ এ ধরনের করুণ পরিণতির মধ্য দিয়ে যাক, তা তিনি চান না।
-
সূত্র: বিবিসি