মৃত্যুর আগে সম্পত্তির বড় অংশ এক তুর্কি হোটেল কর্মীর জন্য রেখে গেলেন ব্রিটিশ পর্যটক
ব্রিটিশ পর্যটক চার্লস জর্জ কোর্টনি। প্রতিবছর অবকাশ-যাপন করতে আসতেন তুরস্কের কুসাদাসি জেলার দে লাক্স হোটেলে, যেখানকার অ্যাটেনডেন্ট বা বেলবয় তাসকিন দাসদানের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল তার।
এই বছরের শুরুর দিকে মারা যান চার্লস।
মৃত্যুর পর তার উত্তরাধিকারের উইল পড়ে হতবাক হয়ে যায় তার পরিবার। রেখে যাওয়া সম্পদের মূল অংশই তিনি লিখে দিয়ে গেছেন তাসকিনের নামে। হোটেলের অন্যান্য সদস্যদের জন্যও দিয়ে গেছেন কিছু।
প্রয়াত চার্লসকে স্মরণ করে তাসকিন বলেন, 'তিনি আমাদের সাথে সবসময় এমনভাবে ব্যবহার করতেন যেন আমরাই তার পরিবার। তিনি এমনকি আমার সন্তানদের শিক্ষার খরচও যুগিয়েছিলেন একবার। আমরা বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েছিলাম।'
তাসকিন জানান, এই হোটেলে ১৯৯০ সাল থেকে বেলবয়ের দায়িত্ব পালন করছেন তিনি। এবং চার্লসকেও এই সুবাদেই বহুদিন ধরে চিনতেন।
অতিথিদেরকে আপ্যায়ন করায় তাসকিন বেশ দক্ষ। নিজের কাজ সম্বন্ধে তাসকিন বলেন, 'হোটেলে আমরা সবার সাথে সমান আচরণ করি। আমরা তাদেরকে পরিবার হিসেবে বিবেচনা করি, পর্যটক হিসেবে নয়।'
তাসকিন জানান, তিনি আগে থেকেই জানতেন চার্লস অনেক উদার। কারণ একসময় তার সন্তানদের পড়াশুনার খরচ জোগাতেও সাহায্য করেছিলেন এই প্রবীণ, যার জন্য তাসকিন কৃতজ্ঞ। কিন্তু চার্লসের সর্বশেষ বদান্যতাটুকু একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল তাসকিনের জন্য।
এবছর চার্লস মারা যাওয়ার পর তার উত্তরাধিকারের উইল দেখে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন আত্মীয়স্বজনরা। তার রেখে যাওয়া সম্পত্তির মূল অংশই দিয়ে গেছে তাসকিনকে।
তাসকিন প্রথম এই খবর জানতে পারেন যখন ইংল্যান্ডের কিছু কর্মকর্তা তার সাথে যোগাযোগ করে। তাসকিন বলেন, 'চার্লস মারা যাওয়ার পর আমরা ইংল্যান্ড থেকে একটি ফোনকল পাই, যাতে বলা হয় চার্লস তার উত্তরাধিকারের একটি বড় অংশ আমাদের জন্য রেখে গেছেন।'
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাসকিন স্বীকার করেন, প্রথমে তিনি এবং তার সহকর্মীরা বিশ্বাসই করতে পারেননি এই খবর।
চার্লস কী পরিমাণ অর্থ রেখে গিয়েছিলেন, তার সঠিক পরিমাণটি প্রকাশ করা হয়নি। তাসকিনের যেন জীবনে তার আর কাজ করতে না হয়, সে পরিমাণ অর্থ রেখে গেছেন বলে জানানো হয়েছে।
তবে তাসকিন জানান, কাজ ছেড়ে দেওয়ার কোন পরিকল্পনা তার নেই। তিনি তার কাজকে ভালোবাসেন এবং এই কাজের ফলেই বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে পরিচিত হওয়ার সুযোগ পান।
তাসকিন আরও জানান, সবসময় হোটেলের ৪০১ নাম্বার রুমে থাকতেন এই ব্রিটিশ। কক্ষটিকে সবাই এখন 'চার্লির রুম' হিসেবে ডাকে। কামরাটি হোটেলের কর্মীদের সবসময় স্মরণ করিয়ে দেয় যে, একজন পর্যটক এখানে এসে অতিথি থেকে তাদের পরিবারের সদস্য হয়ে উঠেছিলেন।
- সূত্র: ডেইলি মেইল।