নিলামে বিক্রি করা হবে কারনেট সুবিধায় আনা ১২৫ বিলাসবহুল গাড়ি
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের অনলাইন নিলামে (ই-অকশন) বিক্রি হবে কারনেট সুবিধায় আনা ১২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অনুমোদন পেয়ে দীর্ঘ ৮ বছরেরও অধিক সময় ধরে চট্টগ্রাম বন্দরে পড়ে থাকা এসব গাড়ি চলতি অক্টোবরে নিলামে তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেছে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
নিলামের প্রক্রিয়ায় থাকা বিলাসবহুল গাড়ির মধ্যে রয়েছে মিৎসুবিশি, মার্সিডিজ বেঞ্জ, বিএমডব্লিউ, ল্যান্ড রোভার, রেইঞ্জ রোভার, ল্যান্ড ক্রুজার, লেক্সাস, জাগুয়ার সহ বিশ্বের নামিদামী ব্রান্ডের গাড়ি। এগুলোর একেকটির বাজারদর কোটি টাকারও বেশি।
এক দেশের গাড়ি সাময়িক সময়ে ব্যবহারের জন্য দেশে নিয়ে আসার বিশেষ সুবিধাকে বলা হয় কারনেট সুবিধা। বিদেশি বিশেষ ব্যাক্তি, বাংলাদেশি বংশোদ্ভুত বিভিন্ন দেশের নাগরিক, কূটনৈতিকভাবে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক কারনেট বা পর্যটন সুবিধায় এসব গাড়ি বাংলাদেশে নিয়ে আসেন। নিয়ম অনুযায়ী ফেরার সময়ে সে দেশে এসব গাড়ি ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কথা। এই সুবিধার অপব্যবহারের ফলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কড়াকড়ির কারণে গাড়িগুলো খালাস নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে কারনেট সুবিধায় আনা এসব গাড়ি অনলাইন নিলামে তোলায় ফের গতি পাচ্ছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ই-অকশন কার্যক্রম। ২০২০ সালের ২৭ অক্টোবর ই-অকশন চালুর পর চলতি বছরের ২০ জানুয়ারি আরো একটি ই-অকশন আয়োজন করতে পেরেছিলো কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। সফটওয়্যারজনিত ত্রুটি, ক্যাটালগভিত্তিক পণ্যের ছবি আপলোডে জটিলতা, পে-অর্ডার জালিয়াতির আশংকাসহ নানা প্রতিবন্ধকতায় গতি পায়নি ই-অকশন কার্যক্রম।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম শাখার উপ-কমিশনার মো আল আমিন টিবিএসকে বলেন, "বিলাসবহুল গাড়ি ই-অকশন তোলার ফলে সারা দেশের প্রতিষ্ঠান এবং ব্যক্তি নিলামে অংশ নিতে পারবে। এতে প্রতিযোগীতা বাড়বে। দরও ভালো পাওয়া যাবে"।
তিনি আরো বলেন, "এখন পর্যন্ত আমাদের হিসাবে কারনেট সুবিধায় আনা ১২৫টি বিলাসবহুল গাড়ির তথ্য আছে। অনলাইন নিলামে সবগুলো গাড়িই তোলা হবে। এর ফলে কাস্টমসের ই-অকশনেও গতি আসবে"।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্র জানায়, কারনেট গাড়ি নিলামে তোলার অনুমতি পেতে গত ২৪ জুন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের কাছে আবেদন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার। এ আবেদনের ভিত্তিতে গত ১৭ আগস্ট অনুমতি দেয় এনবিআর।
অনুমতি পেয়ে অনলাইনে নিলামে তুলতে তৎপরতা শুরু করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কারনেট ডি প্যাসেজ সুবিধায় আনা অখালাসকৃত এসব গাড়ি দ্রুত নিলামের মাধ্যমে নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠন করা হয়েছে টেকনিক্যাল কমিটি। গাড়িপ্রতি মূল্য নির্ধারণ করতে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার বৈঠকে বসছে নিলাম কমিটি। চলতি মসের সুবিধাজনক সময়ে নিলামের দিনক্ষণ নির্ধারণ করা হবে ওই সভায়। ওই নিলামে সারাদেশের গ্রাহকরা নিলামে অংশ নেবে এমন প্রত্যাশা কাস্টমস কর্তৃপক্ষের। এতে চট্টগ্রাম বন্দরের জায়গা খালি হওয়া সহ কাস্টমসের বিপুল পরিমাণ রাজস্ব আয় হবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্টরা।
সরকারী নিলাম আয়োজনকারী প্রতিষ্ঠান কে এম কর্পোরেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মোরশেদ বলেন, "আমরা ২০১৮ সাল থেকে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের নিলাম পরিচালনা করছি। এই সময়ের মধ্যে কারনেট সুবিধায় আনা গাড়ির ২টি নিলাম অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। এর মধ্যে একটি নিলামে ২২টি এবং অন্যটিতে ১১১টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়। কিন্তু উপযুক্ত দর না পাওয়ায় একটি গাড়ি ডেলিভারি দেওয়া যায়নি"।
এর আগে প্রথম দফায় ২০১৬ সালের আগস্টে ৮৫টি এবং ২০১৭ সালে মে মাসে ১১টি গাড়ি নিলামে তোলা হয়েছিলো। নিলামের দর কম হওয়ায় সেবারও দরদাতাদের ডেলিভারি দিতে পারেনি কাস্টমস কর্তৃপক্ষ।
কাস্টমস কর্তৃক ঘোষিত দরের ন্যূনতম ৬০ ভাগ দাম না হলে পণ্য ডেলিভারি দিতে পারে না কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। অনলাইন নিলাম হওয়ায় প্রতিযোগিতা বাড়বে, কাঙ্খিত দরও পাওয়া যাবে। এমনটাই প্রত্যশা কর্তৃপক্ষের।
কাস্টমসের নিয়ম অনুযায়ী, নিলামে যে কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান অংশ নিতে পারে। নিলামে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে শিডিউলের সাথে প্রতিষ্ঠানের হালনাগাদ ট্রেড লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট অথবা টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি এবং টিআইএন সার্টিফিকেটের কপি দাখিল করতে হবে। প্রস্তাবিত দরের ১০ শতাংশ ব্যাংক ড্রাফট অথবা পে-অর্ডার দরপত্রের সাথে জমা দিতে হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এসময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এ পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। প্রতিমাসে একটি করে নিলামের আয়োজন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। আবার মাসে একাধিক নিলামেরও আয়োজন করা হয়।