স্কুল খোলা: শিশুদের জন্য আনন্দের, অভিভাবকদের জন্য উদ্বেগের
স্কুল কলেজ খোলা পেয়ে আনন্দিত শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীরা। তবে অভিভাবকদের মধ্যে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।
দীর্ঘদিন পর সন্তান স্কুলে যাওয়ায় অভিভাবকদের অনেককেই বেশ আনন্দিত দেখা গেছে। তারা মনে করছেন এতে করে বাচ্চাদের মানসিক বিকাশ ত্বরান্বিত হবে, যা এতদিন সম্ভব হয়নি। আবার কিছু অভিভাবক মনে করছেন এখনও করোনা সংক্রমণ কমেনি আরও কিছুদিন অপেক্ষা করা দরকার ছিল।
বেসরকারি চাকরিজীবী মাহমুদুর রহমান বলেন, "আমার ছেলে রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজে একাদশ শ্রেণীতে পড়ছে। স্কুল-কলেজে সামাজিক দূরত্ব এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা মানা কঠিন। আমি কিছুটা চিন্তিত। আমার মনে হচ্ছে সরকার কিছুটা তাড়াহুড়ো করে ফেলেছে। আর ১৫ কেক ২০ দিন অপেক্ষা করা উচিত ছিল। সংক্রমণ আর একটু কমলে স্কুল কলেজ খোলার সুবিধা হত।"
অন্য আরেকজন অভিভাবক অ্যাডভোকেট আমিনের সন্তান রেসিডেনশিয়াল মডেল স্কুলের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়ে।
তিনি বলেন, "স্কুল-কলেজ বন্ধ হওয়াতে বাচ্চাদের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন এসেছে। তাদের মানসিক বিকাশ থমকে গেছে। তাদের শেখার আগ্রহ দুর্বল হয়ে পড়েছে। তাদের অ্যাক্যাডেমিক জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এর প্রতিক্রিয়া আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের ওপর পড়বে। আমরা সচেতন থাকলে বাচ্চাদের মধ্যে করোনার সংক্রমণ হওয়া কঠিন। তাই আমি মনে করি স্কুল কলেজ খোলা রাখা উচিত। এবং সেটা আরো আগেই খুলে দেওয়া উচিত ছিল। "
আরেক অভিভাবক মরিয়ম আক্তার বলেন, "ডিসেম্বরে পরীক্ষা হবে। ছেলেমেয়েদের মানসিক অবস্থা যা হয়েছে তাতে এর আগে সব সিলেবাস শেষ করতে পারবে বলে মনে হচ্ছে না।"
এদিকে ছাত্রছাত্রীরা খুবই আনন্দিত। স্কুল-কলেজ খোলায় তারা বন্দী জীবন থেকে মুক্তি পেয়েছেন।
রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের দ্বাদশ শ্রেণীর তানভির হাসান বলেন, "সামনে আমাদের পরীক্ষা। এই মুহূর্তে কলেজে আমাদের ক্লাস হওয়াটা জরুরি। আমরা বাসায় বসে পড়াশোনা করেছি, কিন্তু সেটা খুব একটা কার্যকরী হবে না। অনেক কিছুই আমরা না বুঝে মুখস্থ করেছি। কলেজে এসে দেখলাম শিক্ষকরা প্রতিটি শিফটকে অনেকগুলো ভাগে ভাগ করেছে যাতে একসঙ্গে অনেক শিক্ষার্থী ক্লাসে অবস্থান করতে না পারে। এক গ্রুপ থেকে আরেক গ্রুপের মাঝে ১৫ মিনিট করে বিরতি দেওয়া হচ্ছে ঢোকা এবং বের হওয়ার জন্য। আমি মনে করি না ভয়ের কিছু আছে।"
দ্বাদশ শ্রেণীর আর এক ছাত্র শান্ত বলেন, আমাদের টেস্ট পরীক্ষা হয়নি। যেটা হওয়া জরুরি। আজ খুলল, জানিনা শিক্ষকরা কী বলবেন। সম্ভবত পরীক্ষার চেয়ে তারা সিলেবাস শেষ করায় বেশি মনোযোগী হবেন।"
এদিকে সরকারি আইডিয়াল প্রাইমারি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সাবনাম বানু বলেন, "আমরা খুবই আনন্দিত স্কুল খোলা পেয়ে। ছাত্রছাত্রীরা খুবই আনন্দিত। আমরা প্রতিদিন দুটো শ্রেণি খোলা রাখছি। কিন্তু অন্যান্য শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীরা চলে এসেছে। আসলে তাদের ঘরে আর ভালো লাগছে না। যদিও আমরা তাদেরকে ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছি।"
অনলাইন ক্লাসের ব্যাপারে তিনি বলেন, "আমরা অনলাইনে ক্লাস নিয়েছি কিন্তু সবাই সেটা ভালোভাবে করতে পারেনি। অনেকেরই ডিভাইস নেই। এখন খোলাতে আশা করি ভাল ভাবে ক্লাস নেওয়া সম্ভব হবে।"
"তবে আমরা খুব আনন্দিত যে আমরা আবার আমাদের কর্মজীবনে ফেরত এসেছি। আমরা গৃহবন্দি হয়ে পড়েছিলাম। স্বাস্থ্য সুরক্ষার জন্য আমরা প্রতি বেঞ্চে একজন করে শিক্ষার্থীকে বসাচ্ছি। হাত ধোয়াসহ অন্যান্য সকল স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিধিমালা স্কুলে মানা হচ্ছে। তারপরও সবারই কমবেশি আতঙ্কে আছে," বলেন তিনি।
সারাদেশে শুরু হয়েছে সশরীরে পাঠদান
মানিকগঞ্জের অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ সকাল ১০টার দিকে ক্লাস শুরু হয়েছে। তবে, জেলার হরিরামপুর, শিবালয় এবং দৌলতপুর উপজেলার প্রায় পঁচিশটি বন্যাকবলিত স্কুল তাদের কার্যক্রম চালাতে পারেনি। বন্যার কারণে ডুবে গেছে এসকল স্কুলের প্রাঙ্গণ।
চলতি বছরের বর্ষা মৌসুমে পদ্মা ও যমুনার তীর ভাঙনের ফলে মানিকগঞ্জের বেশ কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। গত সপ্তাহ থেকে বন্যার পানি কমতে শুরু করায় শীঘ্রই তারা কাজ শুরু করতে পারবে বলে আশা করছে স্কুলগুলোর কর্তৃপক্ষ।
এদিকে, আজ থেকে ফের তাদের কার্যক্রম শুরু করেছে বরিশাল শহরের সব স্কুল–কলেজ। জানা গেছে, শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের সবাই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে পুনরায় ক্লাস চালু করার বিষয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত।
বরিশাল সরকারি স্কুলের দশম শ্রেণির ছাত্র রহিম বলেন, "আমি অধীর আগ্রহের সাথে আমার শিক্ষক ও বন্ধুদের সাথে দেখা করার এ দিনটির অপেক্ষায় ছিলাম। এটা আমার কাছে নতুন জীবনের মতো মনে হচ্ছে।"
এদিকে, সাতক্ষীরাতে শিক্ষার্থীরা স্কুলে ফিরে আসা শুরু করলেও জেলার শিক্ষা কর্মকর্তারা এখনও তাদের সঠিক সংখ্যা জানাননি। সাতক্ষীরা জেলার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মো. রুহুল আমিন জানান, "জেলায় ১,০৯৫ টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২ লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী রয়েছে। আমি কলারোয়া উপজেলার একটি বিদ্যালয় পরিদর্শনের সময় ৬৫ শতাংশ শিক্ষার্থীর উপস্থিতি লক্ষ্য করেছি।"
সাতক্ষীরার মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, "৩০৭টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২১৪টি মাদ্রাসা, ৫৮টি কলেজ এবং ১১টি স্কুল ও কলেজে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির সংখ্যা রেকর্ড করা হচ্ছে।"