পরীমণির রিমান্ড: দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট নন হাইকোর্ট
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে করা মামলায় চিত্রনায়িকা পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার রিমান্ড মঞ্জুর করার বিষয়ে দুই বিচারকের ব্যাখ্যায় সন্তুষ্ট হতে পারেননি হাইকোর্ট।
কোন তথ্য-উপাত্তের ওপর ভিত্তি করে পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফার রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে- সে বিষয়ে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট দেবব্রত বিশ্বাস ও আতিকুল ইসলামের দেওয়া লিখিত ব্যাখ্যা পেয়ে বুধবার বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ার কাজলের ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ তাদের প্রতিক্রিয়া জানান।
শুনানিতে হাইকোর্ট বলেন, ' ব্যাখ্যার এই অংশটুকু পড়ছি, যেখানে বলা হয়েছে, রাষ্ট্র মাদকের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে। আর এই মামলার আসামি পরীমনি বিদেশি মদ, এলএসডি, আইসসহ গ্রেপ্তার হন।'
একপর্যায়ে এই প্রসঙ্গে হাইকোর্ট বলেন, 'আমরা তাদের (বিচারক) ব্যাখ্যা দিতে বলেছিলাম যে, কেন পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফায় রিমান্ড মঞ্জুর করা হয়েছে? ব্যাখ্যায় তারা বলছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ছাত্র এলএসডি গ্রহণের পর একজন ডাব বিক্রেতার কাছ থেকে ছুরি নিয়ে নিজের গলায় পোঁচ মেরেছেন! এই ব্যাখ্যা তো সুপ্রিম কোর্টের গাইডলাইন এবং আমাদের প্রচলিত আইনের বিরুদ্ধে। যে কারণে আমরা তাদের জবাবে সন্তুষ্ট নই।'
আরও পড়ুন: পরীমনির দ্বিতীয় ও তৃতীয় দফা রিমান্ড মঞ্জুর করায় ক্ষমা চেয়েছেন দুই বিচারক
হাইকোর্ট আরও বলেন, 'উনারা (বিচারক) ব্যাখ্যায় বলেছেন উপরোক্ত বিষয় সার্বিক বিবেচনায় দুই দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করার আদেশের ক্ষেত্রে কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি হলে নিতান্তই ইচ্ছাকৃত নয়, সরল বিশ্বাসে ভুল।'
বিচারকদের এমন ব্যাখ্যার প্রসঙ্গ টেনে হাইকোর্ট বলেন, 'এখানে যে ত্রুটি হয়েছে তা (বিচারক) বিশ্বাস করেন না। এটা বলে তো হাইকোর্টকে আন্ডারমাইন করা হয়েছে।'
এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২৯ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করেন।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বিকেলে রাজধানীর বনানীর ১২ নম্বর রোডের পরীমনির বাসায় অভিযান চালিয়ে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ সময় বাসা থেকে সাড়ে ১৮ লিটার বিদেশি মদ, চার গ্রাম আইস, এক স্লট এলএসডি এবং একটি পাইপ জব্দের দাবি করে এলিট ফোর্সটি।
ওই ঘটনায় র্যাব-১-এর কর্মকর্তা মো. মজিবর রহমান মাদক আইনে একটি মামলা করেন। ওই মামলায় গত ৫ আগস্ট পরীমনির চার দিনের ও গত ১০ আগস্ট দ্বিতীয় দফায় দুই দিনের রিমান্ডে পাঠান আদালত। ওই রিমান্ড শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়।
পরবর্তীকালে মামলায় তৃতীয় দফা রিমান্ড আবেদনে গত ১৯ আগস্ট পরীমনির জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে আদালত ১ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। ওই রিমান্ড শেষে গত ২১ আগস্ট পরীমনিকে কারাগারে পাঠানো হয়।
এরপর ৩১ আগস্ট ঢাকা মহানগর দায়রা জজ কে এম ইমরুল কায়েস শুনানি শেষে তার জামিন মঞ্জুর করেন। জামিনের কাগজপত্র কারাগারে পৌঁছানোর পর পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টার দিকে তিনি ছাড়া পান। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।