রাজস্থানের অবিশ্বাস্য জয়ের নায়ক কার্তিক, অবদান রাখলেন মুস্তাফিজও
প্রথম ওভারে ৪, পরের ওভারে ৮; মন্দ ছিল না মুস্তাফিজুর রহমানের শুরু। কিন্তু এরপর রাজস্থান রয়্যালসের যে বোলারই বল হাতে তেড়ে গেছেন, তাদেরকে দিক ভুলিয়ে দিয়েছেন পাঞ্জাব কিংসের অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল।
মুস্তাফিজের ওভার বাঁচিয়ে রেখে বিপদ বেড়েছে, ১৭তম ওভারে গিয়ে দলের মনও ভরাতে পারেননি তিনি। বাংলাদেশ পেসার খরচা করেন ১৪ রান। কিন্তু ১৯তম ওভারে ৪ রান দিয়ে ম্যাচ বাঁচিয়ে রাখার কারিগরও আবার মুস্তাফিজই। তার ওই ওভারের কারণেই শেষ ওভারে মাথা খাটিয়ে বল করার সুযোগ পান কার্তিক ত্যাগী।
এতে অবশ্য রাজস্থানের ম্যাচ জয়ের নায়ক কার্তিকের অবদানও আড়াল করা হয়। ইনিংসের শেষ ওভারে অবিশ্বাস্য বোলিং করেছেন ডানহাতি এই পেসার। শেষ ৬ বলে পাঞ্জাবের ৪ রান দরকার ছিল, ম্যাচ সেরা কার্তিকের খরচা মাত্র ১ রান। সঙ্গে দুটি উইকেটও। শেষ ওভারে ভারতীয় এই পেসারের অসাধারণ সব ওয়াইড ইয়র্কারে পাঞ্জাবের ব্যাটসম্যানরা কুপোকাত। হারতে বসা ম্যাচে রোমাঞ্জকর ২ রানের জয় পেয়েছে রাজস্থান।
দম বন্ধ হওয়া ম্যাচে দাপুটে বোলিং করতে পারেননি মুস্তাফিজ। ৪ ওভারে ৩০ রান খরচায় কোনো উইকেট পাননি বাংলাদেশ পেসার। তবে তার করা ১৯তম ওভারটি যে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছে, সেটা না মানার উপায় নেই। শেষ দুই ওভারে পাঞ্জাবের দরকার ছিল ৮ রান। ১৯তম ওভারে মুস্তাফিজ দেন ৪ রান।
আইপিএলের ম্যাচে মঙ্গলবার দুবাইতে আগে ব্যাটিং করতে নামা রাজস্থান ২০ ওভারে সব কটি উইকেট হারিয়ে ১৮৫ রান তোলে। জবাবে উদ্বোধনী জুটিতেই জয়ের ভিত পেয়ে যাওয়া পাঞ্জাব জয়ের পথেই ছিল। কিন্তু তীরে গিয়ে ডুবেছে তাদের তরী। ১৮৩ রানে থামে তাদের ইনিংস।
বড় লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দেন অধিনায়ক লোকেশ রাহুল ও মায়াঙ্ক আগারওয়াল। দারুণ শুরুর পর শাসন করে খেলে যেতে থাকেন এই দুই ব্যাটসম্যান। রাজস্থানের কোনো বোলারই তাদের সামনে দেওয়াল তুলে দাঁড়াতে পারেননি। অবশ্য মুস্তাফিজ দুবার সুযোগ তৈরি করেছিলেন, কিন্তু দুইবারই ক্যাচ হাতছাড়া করেন রাজস্থানের ফিল্ডাররা।
উদ্বোধনী জুটিতে ১১.৫ ওভারে ১২০ রান পায় পাঞ্জাব। লোকেশ রাহুলের বিদায়ে ভাঙে এই জুটি। পাঞ্জাব অধিনায়ক ৩৩ বলে ৪টি চার ও ২টি ছক্কায় ৪৯ রান করে আউট হন। পরে ওভারে বিদায় নেন ব্যাট হাতে ঝড় তোলা আগারওয়ালও। এর আগে ৪৩ বলে ৭টি চার ও ২টি ছক্কায় ৬৭ রানের চোখ ধাঁধানো ইনিংস খেলেন তিনি।
এরপরও জয়ের পথে ছিল পাঞ্জাব। নিকোলাস পুরান ২২ বলে ৩২ রান করে অনেকটা পথ এগিয়ে দিয়ে আসেন। ২৬ রানে অপরাজিত থাকা এইডেন মার্করামও ব্যাটে-বলে করতে পারছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ১ রান নেওয়ার পর আর স্ট্রাইকে ফিরতেই পারেননি তিনি। কার্তিকের তোপে বাকিরা কোনো রানই নিতে পারেননি। ম্যাচ সেরা কার্তিক ২৯ রানে ২ উইকেট নেন। একটি করে উইকেট পান চেতন শুকারিয়া ও রাহুল তেওয়াটিয়া।
এর আগে ব্যাটিং করা রাজস্থান রয়্যালসের পুরো ইনিংজুড়ে ছিল চার-ছক্কার ফুলঝুরি। তাদের চারজন ব্যাটসম্যান মূলত দলকে এগিয়ে নিয়ে যান। উদ্বোধনী জুটিতে ৫৪ রান যোগ করেন দুই ওপেনার এভিন লুইস ও যশবি জয়সওয়াল। ২১ বলে ৩৬ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলে বিদায় নেন ক্যারিবীয় ব্যাটসম্যান লুইস। দ্বিতীয় উইকেট দ্রুতই হারায় দলটি। অধিনায়ক সঞ্জু স্যামসন ৪ রান করেই থামেন।
যশবি জয়সওয়াল দেখেশুনে খেলতে থাকেন। তার সঙ্গে যোগ দিয়ে মাঝারি কিন্তু কার্যকর একটি ইনিংস খেলেন লিয়াম লিভিংস্টোন। ইংল্যান্ডের এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার ১৭ বলে ২৫ রান করেন। যশবি-লিভিংস্টোন জুটিতে ১১৬ রারনে পৌঁছে যায় রাজস্থান। এক পাশ আগলে খেলতে থাকা যশবি কিছুক্ষণ পর বিদায় নেন। এর আগে ৩৬ বলে ৬টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংস সেরা ৪৯ রান করেন তিনি।
যশবির বিদায়ের পর মহিপাল লোমররই যা রান করেন। ব্যাট হাতে ঝড় তুলে মাত্র ১৭ বলে ২টি চার ও ৪টি ছক্কায় ৪৩ রান করেন বাঁহাতি এই অলরাউন্ডার। এর পরের ব্যাটসম্যানরা কেউই রান করতে পারেননি। শেষের তিন ওভারে মাত্র ১৬ রান তোলে রাজস্থান। পাঞ্জাবের বাঁহাতি পেসার আর্শদীপ সিং ৫টি উইকেট নেন। ৩টি উইকেট নেন মোহাম্মদ শামি। এ ছাড়া ইশান পোরেল ও হারপ্রীত ব্রার একটি করে উইকেট পান।