পরচুলার ব্যবসা: চাহিদা বাড়ায় ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে চুল
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হেয়ার ক্যাপের (পরচুলা) কারখানা গড়ে উঠায় এবং এর কাচামাল হিসেবে বেশ চাহিদা থাকায় দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর দিয়ে প্রথমবারের মতো ভারত থেকে আমদানি হচ্ছে নারীদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল। আমদানিকৃত এসব চুল রাজধানী ঢাকাসহ স্থানীয় হেয়ার ক্যাপের কারখানাগুলোতে সরবরাহ করা হচ্ছে।
দেশের বাজারে ভালো চাহিদা থাকায় চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের প্রথম থেকেই হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে এই চুল আমদানি করা হচ্ছে। হিলি স্থলবন্দরের নাশাত ট্রেডার্স ও ঢাকার আশিক এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান এই চুলগুলো আমদানি করছে। ভারতের পশ্চিমবঙ্গের আরকে এক্সপোর্টস ও হিউম্যান হেয়ার নামের দুটি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান চুলগুলো বাংলাদেশে রপ্তানি করছে।
হিলি স্থলবন্দরের মাথার চুল আমদানিকারক মেসার্স নাশাত ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী নুর ইসলাম বলেন, "সম্প্রতি আমাদের এই অঞ্চলে বেশকিছু হেয়ার ক্যাপের কারখানা গড়ে উঠেছে। একইভাবে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে এইসব হেয়ার ক্যাপের কারখানা রয়েছে। এসব কারখানাতে চুল দিয়ে বিভিন্ন ক্যাপ তৈরি করা হয়, যা দেশের চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরে রপ্তানি হয়ে থাকে। এসব কারখানার মূল কাচামাল মেয়েদের মাথার চুল, যার কারণে চুলের বেশ চাহিদা তৈরি হয়েছে। চুলের সেই বাড়তি চাহিদা মেটাতে ভারত থেকে পরিত্যক্ত চুল আমদানি করা হচ্ছে"।
"সাধারণত নারীরা চিরুনী দিয়ে মাথা আঁচড়ানোর সময় চিরুনীর সাথে যে চুল উঠে আসে, যা তারা ফেলে দেন- আমরা এসব চুল আমদানি করছি। দেশের বিভিন্ন স্থানে অবস্থিত চুলের কারখানাগুলোতে এসব চুল সরবরাহ করা হচ্ছে"।
বর্তমানে ভারত থেকে প্রতি কেজি চুল ৬৩ মার্কিন ডলার মূল্যে আমদানি করা হচ্ছে, যা কাস্টমসে শুল্কায়ন করা হচ্ছে একই মূল্যে, ১৫ ভাগ শুল্ক বিদ্যমান থাকায় এতে করে কেজিপ্রতি শুল্ক পরিশোধ করতে হচ্ছে ৮৫০ টাকা করে।
কারখানায় এসব চুল প্রথমে নারীকর্মীরা জট ছাড়ান, তারপর শ্যাম্পু ও বিভিন্ন মেডিসিন ব্যবহার করে ধুয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয়, এরপরের পর্যায়ে এসব চুল দিয়ে হেয়ার ক্যাপ তৈরি করা হয়। বাংলাদেশে তৈরি এই হেয়ার ক্যাপ দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন চীনেও রপ্তানি হচ্ছে।
হিলি স্থলবন্দর শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এস এম নুরুল আলম খান বলেন, "হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে মাথার চুল আমদানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে শুরু করে ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে ৪ হাজার ৭৮০ কেজি চুল আমদানি হয়েছে। আমদানিকৃত এসব চুল থেকে সরকারি রাজস্ব বাবদ ২০ লাখ ২৭ হাজার টাকা আয় হয়েছে। চুল আমদানিতে বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে সরকারি নিয়মমাফিক সবধরনের সুযোগ সুবিধা কাস্টমসের পক্ষ থেকে আমদানিকারকদের দেওয়া হচ্ছে"।
হিলি স্থলবন্দরের জনসংযোগ কর্মকর্তা সোহরাব হোসেন জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত-বাংলাদেশের মাঝে পণ্য আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্য স্বাভাবিক রয়েছে। বন্দর দিয়ে নিয়মিত পণ্যের পাশাপাশি সম্প্রতি কিছুদিন থেকে নতুন করে নারীদের মাথার ফেলে দেওয়া চুল আমদানি শুরু হয়েছে। নতুন এই পণ্য বন্দর দিয়ে আমদানির ফলে সরকারের রাজস্ব আয় বেড়েছে।