রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কাটার ঘটনায় সাক্ষ্য গ্রহণ করলো তদন্ত কমিটি
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে অবস্থিত রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চুল কাটার ঘটনায় ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী, প্রত্যক্ষদর্শী, ওই বিভাগের শিক্ষক, অন্য বিভাগের শিক্ষার্থী ও স্টাফসহ অন্তত ৬০ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছে গঠিত তদন্ত কমিটি।
কমিটির সভাপতি ও রবীন্দ্র অধ্যয়ন বিভাগের চেয়ারম্যান লায়লা ফেরদৌসী হিমেল জানান, রোববার (৩ অক্টোবর) সকাল থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে চুল কাটার ঘটনার বিষয়ে আলাদা আলাদাভাবে সবার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অস্থায়ী প্রশাসনিক ভবনের সেমিনার কক্ষে সাক্ষ্য প্রদানকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। এসময় কমিটির সদস্য সচিবসহ তিন সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ভুক্তভোগী ১৪ শিক্ষার্থী, ওই দিন পরীক্ষায় অংশ নেওয়া ৩০ শিক্ষার্থী, অন্য বিভাগের ছয়জন শিক্ষার্থী, ওই বিভাগের পাঁচজন শিক্ষক, দুইজন কর্মচারী ও একজন ক্লিনার কমিটির সামনে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্য গ্রহণের সময় শুধু চুল কাটার ঘটনা নয়, গত ৩ বছরে শিক্ষিকা ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনের দ্বারা বিভিন্নভাবে হওয়া নির্যাতনের চিত্রও তুলে ধরেন তার বিভাগের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা। এসময় অনেকে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
সাক্ষ্য প্রদানের জন্য সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের সাময়িক বহিষ্কৃত ফারহানা ইয়াসমিন বাতেনকে লিখিতভাবে চিঠি দেওয়া হলেও তিনি সাক্ষ্য দিতে আসেননি। তবে তিনি মানুষিক ও শারীরিকভাবে অসুস্থতার কথা জানিয়ে সময়ের আবেদন করে ই-মেইল করলেও অসুস্থতার বিষয়ে আবেদনের সঙ্গে কোন চিকিৎসা সনদ যুক্ত করেননি বলেও জানান তদন্ত কমিটির সভাপতি।
তিনি আরও বলেন, প্রতিবেদন দাখিলের বিষয়ে আজই কমিটির বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা আজ সোমবার কোন কর্মসূচি পালন করছে না। তারা তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য অপেক্ষা করছেন বলে জানিয়েছেন।
এ বিষয়ে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের ১ম বর্ষের ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী নোমান সিদ্দিকী শান্ত বলেন, দীর্ঘ ৭/৮দিন টানা আন্দোলন কর্মসূচি পালনের কারনে অনেক শিক্ষার্থী শারীরিকভাবে অসুস্থ। যে কারণে আজ সোমবার কোন কর্মসূচি পালিত হচ্ছে না। আমরা কমিটির তদন্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় রয়েছি। দাখিলকৃত প্রতিবেদনে যদি আমাদের চাহিদার প্রতিফলন না ঘটে তাহলে আমরা আবারও লাগাতার আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করবো।
প্রসঙ্গত, গত ২৬ সেপ্টেম্বর প্রথম বর্ষের পরীক্ষা হলে প্রবেশের সময় রবীন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬ ছাত্রের মাথার চুল কাঁচি দিয়ে কেটে দেওয়ার অভিযোগ ওঠে বিশ্ববিদ্যালয়টির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য ও বাংলাদেশ অধ্যয়ন বিভাগের শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনের বিরুদ্ধে। চুল কেটে দেওয়ায় অপমান সহ্য করতে না পেরে নাজমুল হাসান তুহিন নামে একজন অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ওই শিক্ষকের অপসারণের দাবিতে আন্দোলনে নামে। তারা ক্লাস ও সকল পরীক্ষা বর্জন করে একাডেমিক এবং প্রশাসনিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেয়। এ অবস্থায় চুল কাটার একটি সিসি টিভি ফুটেজ ভাইরাল হয়। লাগাতার আন্দোলনের মুখে গত বৃহস্পতিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষক ফারহানা ইয়াসমিনকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রচারের পর সারাদেশে আলোচনা সমালোচনার ঝড় উঠে।
এ অবস্থায় ২ অক্টোবর শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনির আশ্বাসে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নিয়ে আন্দোলন শিথিল করেন। তবে প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নিয়ে ফারহানা ইয়াসমিনের স্থায়ী বরখাস্ত না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন শিক্ষার্থীরা।