লাইটার জাহাজ নিয়ন্ত্রণকারী চক্রের হাতে জিম্মি আমদানিকারকরা
ব্যবহারকারীদের সুবিধা দিতে সুনিয়ন্ত্রিতভাবে লাইটার জাহাজ পরিচালনায় গঠিত হয় ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিউটিসি), কিন্তু প্রতিষ্ঠানটি এখন চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য পরিবহনকারী ব্যবসায়ীদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছে।
গত কয়েক বছরে চট্টগ্রাম চেম্বারের এ প্রতিষ্ঠান পণ্যবাহী নৌযান মালিকদের একটি সংঘবদ্ধ চক্রে পরিণত হয়েছে, লাইটার জাহাজ ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পাশাপাশি ভাড়ার দর বাড়িয়ে, তা দিতে বাধ্য করে ব্যবসা পরিচালনার খরচ বাড়িয়েছে তারা, এমনটাই অভিযোগ ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীদের।
এমনকি বাল্ক আকারে ভোক্তাপণ্য ও শিল্পের কাঁচামাল আমদানিকারকদেরও তাদের নিজস্ব জাহাজ পরিচালনার ক্ষেত্রে ডব্লিউটিসি নির্ধারিত সময়সূচির ওপর নির্ভর করতে হচ্ছে।
গত মাসে ডব্লিউটিসি সিরিয়াল না থাকা একটি লাইটার জাহাজে প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে থাকা কিছু ব্যক্তির হামলায় কয়েকজন নাবিকও আহত হয়েছেন।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেল (ডব্লিওটিসি) সমন্বয় ছাড়া নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ করে, এব্যাপারে স্টেকহোল্ডার সাথে কোন পরামর্শও করে না, যা ব্যবসা পরিচালনার খরচ বাড়িয়েছে। গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকায় প্রতিটন পণ্যে ভাড়া কিছু কিছু ক্ষেত্রে ১৭৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্যানুযায়ী, ২০১৬ থেকে ২০২১ অর্থবছর পর্যন্ত গড়ে বার্ষিক ৭ কোটি ৮০ লাখ মেট্রিক টন পণ্য আমদানি হয়। এর মধ্যে, ৭০ ভাগ পণ্য খালাস হয় বহির্নোঙ্গরে। বাকি ৩০ ভাগ খালাস হয় বন্দরের জেটিতে। বহির্নোঙ্গরে খালাস হওয়া পণ্যগুলো লাইটার জাহাজে করে দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে এবং শিল্প-কারখানায় পৌছে দেওয়া হয়, এসব জাহাজের অধিকাংশই ডব্লিওটিসি নিয়ন্ত্রণ করে।
২০১৮ সালে ডব্লিওটিসি প্রায় ১ কোটি ৪৫ লাখ মেট্রিকটন পণ্য পরিবহন করে, যার ভাড়া ছিল কমপক্ষে ৮০০ কোটি টাকা। ২০১৯ সালে করোনার আগে ডব্লিওটিসি একাই ১ কোটি ৭২ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করে। যার ভাড়ার পরিমাণ ছিলো কমপক্ষে ১ হাজার কোটি টাকা। ২০২০ সালে করোনার মহামারির মধ্যে ডব্লিওটিসি ১ কোটি ২৮ লাখ মেট্রিক টন পণ্য পরিবহন করে, কমপক্ষে ৭১০ কোটি টাকা আয় করে।
বর্তমানে ডব্লিওটিসির নিয়ন্ত্রণে ১ হাজার ৩০০টি জাহাজ রয়েছে। তবে সব মিলিয়ে প্রায় আড়াই হাজার লাইটার জাহাজ চট্টগ্রাম বন্দরের বর্হিনোঙ্গর থেকে দেশের ৩৪টি রুটে পণ্য পরিবহন করে।
২০১৩ সালে লাইটার জাহাজের সংকট দেখা দিলে, তখন থেকেই অনেক শিল্পগোষ্ঠী নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন শুরু করে। বর্তমানে বড় শিল্প প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন এমন ৪০০টি জাহাজ বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে যুক্ত।
এদিকে নিজস্ব লাইটার জাহাজ পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের ঝামেলায় সিমেন্ট ও ইস্পাত প্রস্তুতকারকদের মতো শিল্প প্রতিষ্ঠানের সার্বিক খরচও বাড়ে। আকারের ওপর ভিত্তি করে এ ধরনের (১-৩ হাজার টন সক্ষমতার) একেকটি জাহাজের দাম ৪ থেকে সাড়ে ১২ কোটি টাকা পর্যন্ত হতে পারে। তার ওপর আরও ২৫-৫০ লাখ টাকা পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণ খরচ তো আছেই।
বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিএমএ) ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. শহিদুল্লাহ বলেন, "তারা (ডব্লিউটিসি) আমাদের সময়মতো লাইটার জাহাজ দেয়নি, যেকারণে শুধু সিমেন্ট শিল্পই নিজস্ব পণ্য পরিবহনে লাইটার জাহাজ কিনতে ৩ হাজার কোটি টাকা খরচ করেছে।"
তবে শিল্প মালিকদের অভিযোগ, ডব্লিউটিসির জাহাজ পরিচালনায় ব্যাপক অদক্ষতার অভিযোগ থাকার পরও প্রতিষ্ঠানটি তাদের মালিকানাধীন জাহাজগুলোর চলাচলও নিয়ন্ত্রণ করতে চায়।
তারা জানিয়েছেন, ডব্লিওটিসির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত অনেক জাহাজের নাবিক মাস্টার অদক্ষ। সমুদ্রে সিগনাল এবং নিয়মনীতি না মেনে জাহাজ পরিচালনার কারণে; অনেক সময় সাগরে জাহাজডুবির ঘটনা ঘটে। তবে অধিকাংশ জাহাজের বিমা না থাকায় চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হন আমদানিকারকরা।
অনেক সময়, প্রতিষ্ঠানটি সময়মতো লাইটার জাহাজ না দিতে পারায় আমদানিকারকদের মাদার ভেসেলকে বহির্নোঙ্গরে অপেক্ষায় থাকার জন্য ক্ষতিপুরণ দিতে হয়। এতে বেড়ে যায় আমদানি খরচ।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালকব আমিরুল হক টিবিএসকে বলেন, "আমি ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের প্রতিষ্ঠাতাদের একজন ছিলাম। এটি গঠনের উদ্দেশ্য ছিল, বন্দরের বহির্নোঙ্গর থেকে পণ্য পরিবহনের সমন্বয় করা। কিন্তু, তারা এখন নৌ রুটে পণ্য পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। ফলে ব্যবসাটি এখন ১৫০ জন ব্যবসায়ীর কাছে জিম্মী হয়ে আছে। গত পাঁচ বছরে নৌপথে পণ্য পরিবহনে প্রায় ২০ হাজার কোটি টাকা ক্ষতি করেছে ডব্লিওটিসি।
বিএসএম গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল বশর চৌধুরী টিবিএস'কে বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠানের ১৭টি লাইটার জাহাজ রয়েছে। ডব্লিওটিসির সিরিয়াল নিয়ে শিল্পপ্রতিষ্ঠান মালিকদের মধ্যে মিশ্রঃপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। আমদানি পণ্য মাদার ভেসেল থেকে নিজস্ব জাহাজে পরিবহনের জন্যই লাইটার জাহাজে বিনিয়োগ করা হয়েছে। এক্ষেত্রে, আমাদের কেন ডব্লিউটিসির সিরিয়ালের ভিত্তিতে পণ্য পরিবহন করতে হবে?
নিজেদের ইচ্ছামত ভাড়া নির্ধারণ
শিল্প মালিক বা আমদানিকারকদের সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় নদীপথে প্রতিটন পণ্য পরিবহনে ভারা ১০ বছর আগে ছিল ১৫০-১৮০ টাকা। যা বর্তমানে ৫৪৮ টাকা। তবে করোনার কারণে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত প্রতিটনে ভাড়া ৪১৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
ব্যবসায়ীদের তথ্যমতে, গত দশ বছরে চট্টগ্রাম বন্দর থেকে ঢাকা অঞ্চলে প্রতিটন পণ্যে ভাড়া বেড়েছে প্রায় সর্বনিম্ন ১১০ থেকে ১৭৫ শতাংশ। ব্যবসায়ীরা বলেন, বর্তমানে জাহাজের সংখ্যা বেড়েছে। প্রতিযোগিতামুলক বাজারে ভাড়া না কমে, তা বেড়েছে অস্বাভাবিকভাবে।
লাইটারে করে বন্দর থেকে পণ্য পরিবহনে ভাড়া নির্ধারনের প্রয়োজন দেখা দিলে তা সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন-সহ সংশ্লিষ্ট স্টেকহোন্ডারের প্রতিষ্ঠানের নেতৃস্থানীয় প্রতিনিধিগণের সমন্বয়ে যৌক্তিক কারণসমুহ বিবেচনা করে লাইটার জাহাজের ভাড়া সমন্বয় করতে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের নির্দেশনা রয়েছে।
কিন্তু, ডব্লিওটিসি কখনো এই ভাড়া নির্ধারণের সময় কারো সাথে পরামর্শ না করে উল্টো বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বাড়ায় বলে জানান চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাহবুবুল আলম।
সম্প্রতি চট্টগ্রাম বন্দর থেকে দেশের ৩৪টি নৌরুটের মধ্যে ৩০টিতে ভাড়া কমিয়েছে ডব্লিওটিসি। এর মধ্যে, বরিশাল রুটে টন প্রতি ৫৭৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৯০ টাকা, চাঁদপুর রুটে ৫২৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৩৯৬ টাকা, খুলনা রুটে ৮০৭ টাকা থেকে কমিয়ে ৭১৫ টাকা, মংলা রুটে ৭৫৩ টাকা থেকে কমিয়ে ৬৭৩ টাকা, বাঘাবাড়ি রুটে ৮৮৯ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৮০ টাকা, ভোলা রুটে ৬২৪ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৪৪ টাকা, ছাতক রুটে ১০০২ টাকা থেকে কমিয়ে ৯২২ টাকা, আরিচা রুটে ৮৩১ টাকা থেকে কমিয়ে ৭৮১ টাকা, মানিকগঞ্জ রুটে ৮৬৫ টাকা থেকে কমিয়ে ৮১৫ টাকা, পটুয়াখালি রুটে ৫৭৮ টাকা থেকে কমিয়ে ৫৬৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়।
প্রিমিয়ার সিমেন্ট মিলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আমিরুল হক বলেন, সকলের সাথে আলোচনার ভিত্তিতে পণ্য পরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করার কথা। কিন্তু তারা তাদের নিজেদের মনগড়া ভাবে ভাড়া নির্ধারণ করেছে। যে কারণে ব্যবসার খরচ অনেক বাড়ছে। যা দিন শেষে ভোক্তাদেরকেই পরিশোধ করতে হচ্ছে। করোনার কারণে স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসে ভাড়া সমন্বয় করা হয়নি বলেও জানান তিনি।
ডব্লিওটিসির কনভেনার নুরুল হক বলেন, নৌ পখে পণ্য পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ অস্বীকার করেন, 'তবে মহামারির কারণে সকল স্টেকহোল্ডারদের সাথে বসে ভাড়া ঠিক করা সম্ভব হয়নি' বলে স্বীকার করে নেন।
মো. শহিদুল্লাহ বলেন, "চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় পরিবহন ভাড়া এখন প্রতিটনে ৪১৫ টাকা, যা এখনও অযৌক্তিকভাবে বেশি। আমরা এটিকে ৩০০ টাকায় নামানোর দাবি করছি।"
নাবিকদের মারধর
নৌ পরিবহন অধিদপ্তর বিজ্ঞপ্তি জরির পর ডব্লিওটিসি শিল্প মালিক মালিকানাধীন ও নিজেদের আওতা বহির্ভূত জাহাজগুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার চেষ্টা চালায়। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের সদস্যরা বর্হিনোঙ্গরসহ দেশের বিভিন্ন নৌ রুটে নাবিকদের মারধর করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। স্পিডবোটে করে বন্দরের বর্হিনোঙ্গর, বিভিন্ন ঘাট এবং সাগরে টহল দিচ্ছে চক্রটি।
হামলার শিকার এমভি আনিশা-১ জাহাজের মাস্টার মো: নুর নবী টিবিএসকে বলেন, গত ১ সেপ্টেম্বর বন্দরের বহির্নোঙ্গরে মাদার ভেসেল থেকে ঢাকা রুটের জন্য সিমেন্ট ক্লিংকার বোঝাই করছিলাম। এমন সময় স্পিড বোটে করে কয়েকজন যুবক ডব্লিওটিসির সিরিয়াল ছাড়া জাহাজ পরিচালানা করা যাবে না বলে জানায়। জাহাজ অন্যত্র সরিয়ে নিতে চাপ দেয় তারা। জোয়ারের কারণে জাহাজ সরাতে দেরি হওয়ায় অতর্কিত হামলা চালান তারা। এতে জাহাজের সুকানি জাহাঙ্গীর আলম সহ ৫ জন নাবিক আহত হয়।
তিনি আরো বলেন, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে চট্টগ্রাম বন্দরের বহির্নোঙ্গর এলাকায় ডব্লিওটিসির হামলায় এমভি আমিন- ২ জাহাজের মাস্টার জসিম উদ্দিনকে মারধর করা হয়। শেখ ব্রাদার্স জাহাজের মাস্টার মো: ইমাম হোসেনকে মারধর করে তার কাছে থাকা নগদ টাকা নিয়ে যায় হামলাকারীরা। এছাড়া মাছুম বিল্লাহ নামে আরো এক নাবিককে মারধর করা হয়।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের যুগ্ন-সাধারণ সম্পাদক নবী আলম বলেন, সিমেন্ট কারখানার মালিকদের জাহাজ ব্যতীত অন্যান্য শিল্প মালিক এবং ব্যক্তি মালিকানাধীন জাহাজগুলো যাতে ডব্লিওটিসির সিরিয়াল অনুযায়ী চলে সেটি নিশ্চিত করতে অভিযান চালানো হয়েছে। কিছু জাহাজের মাস্টার এতে বাধা দেওয়ায় তাদের মারধর করা হয় বলে তিনি স্বীকার করেন।
বাংলাদেশ নৌযান শ্রমিক ফেডারেশনের তথ্য মতে, আকার ভেদে ১ হাজার ২০০ মেট্রিক টন থেকে ৫ হাজার মেট্রিক টন পণ্য বহন করে লাইটার জাহাজ। এর মধ্যে ৫০ শতাংশ জাহাজের ধারণ ক্ষমতা ২ হাজার মেট্রিক টন, ২০ শতাংশ জাহাজের ৫ হাজার মেট্রিক টন এবং বাকী ৩০ শতাংশ জাহাজের ১ হাজার ২ শ মেট্রিক টন।
বাংলাদেশ কার্গো ভেসেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ও ডব্লিওটিসির কনভেনার নুরুল হক বলেন, ডব্লিওটিসি নৌপথে পণ্য পরিবহন ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করছে এমন অভিযোগ সত্য নয়। নৌ অধিদপ্তরের সিন্ধান্ত অনুযায়ী, শুধুমাত্র সিমেন্ট উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের নিজস্ব জাহাজে পণ্য পরিবহন করতে পারবে। উৎপাদনে নেই এমন শিল্প গ্রুপের জাহাজও ডব্লিওটিসির সিরিয়াল অনুযায়ী চলবে।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের দ্বৈত সিদ্ধান্ত
চট্টগ্রাম বন্দর থেকে লাইটার জাহাজযোগে পণ্য পরিবহন ব্যবস্থা সুশৃঙ্খলভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে ২০২০ সালের ২৯ জুন নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে সকল পক্ষের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিলো। অধিদপ্তরের তৎকালীন মহাপরিচালক কমোডর সৈয়দ আরিফুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত ওই সভায় ৬টি সিন্ধান্ত নেওয়া হয়।
এর মধ্যে একটি সিন্ধান্ত ছিল, সিমেন্ট ম্যানুফেকচারিং কোম্পানি, গ্রুপ অব কোম্পানির মালিকানাধীন নৌযানগুলো তাদের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চলবে।
এছাড়া ব্যক্তি মালিকানায় পরিচালিত সকল মালবাহী নৌযান ডব্লিওটিসি এর সিরিয়াল অনুসারে চলাচল করবে। গ্রুপ অব কোম্পানি তাদের নিজস্ব নৌযান ব্যবহারের পর, অতিরিক্ত নৌযানের প্রয়োজন হলে ডব্লিওসিটির সিরিয়ালভুক্ত জাহাজ ব্যবহার করবে।
এদিকে গত ২৩ আগষ্ট নৌ পরিবহন অধিদপ্তর একটি জরুরি নৌ বিজ্ঞপ্তি জারি করে। যেটি পূর্বের নেওয়া সভায় সিন্ধান্তের সাথে সাংঘর্ষিক।
অধিদপ্তরের নতুন মহাপরিচালক কমোডর এজেডএম জালাল উদ্দিন স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, চট্টগাম বন্দর, বন্দরের উভয় পাড়ে অবস্থিত সকল প্রকার জেটি এবং সমুদ্রে নোঙ্গরে অবস্থানরত মাদার ভেসেল থেকে পণ্য পরিবহনের কাজে নিয়োজিত লাইটার জাহাজের ক্ষেত্রে নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের অধিভুক্ত লাইটার জাহাজযোগে বাংলাদেশের সমুদ্র বন্দর সমুহে পণ্য পরিবহন নীতিমালা ২০১৩ অনুসরনপূর্বক ওয়াটার ট্রান্সপোর্ট সেলের সিরিয়ালভুক্ত হয়ে পণ্য বোঝাই ও খালাস করতে হবে।
এই আদেশ অমান্যকারী নৌযান মালিক, মাস্টার এবং নাবিকদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক কমোডর এজেডএম জালাল উদ্দিনের সাথে ৪ অক্টোবর থেকে একাধিকবার মুঠোফোনে যোগাযোগ এবং এসএমএস দেওয়ার পর তিনি গত ৫ অক্টেবার সাড়া দেন। এ বিষয়ে কথা বলতে, তিনি অধিদপ্তরের চিফ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড শিপ সার্ভেয়ার মো: মনজুরুল কবীরের সাথে যোগাযোগ করতে বলেন।
মনজুরুল কবীরের সাথে ৫ অক্টোবর দুপুরে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, পণ্য পরিবহনে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে তারা একটি পদক্ষপে বাস্তবায়ন করছেন। "এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নকালে কোন পক্ষের লোক যদি কোন জাহাজের নাবিককে মারধর কর, তাহলে এর দায় তাদের ব্যক্তিগতভাবে নিতে হবে।"
তবে ব্যবসায়ীরা বলেছেন, নৌ পরিবহন অধিদপ্তরের সিদ্ধান্ত সাংঘর্ষিক এবং ব্যবসাবান্ধব নয়।