২০০ বছর পর ফের জেগে উঠল মরা তিস্তা
দুইশো বছর পর প্রাণ ফিরে পেল মরা তিস্তা নদী। পুনঃখননের পর নদীটি যুক্ত হয়েছে চিকলী ও যমুনেশ্বরী নদীর মূল ধারার সঙ্গে।
ফলে আশপাশের জীববৈচিত্র্য, পরিবেশ, কৃষি ও জনজীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলেছে রংপুরের বদরগঞ্জ উপজেলার মরা তিস্তা।
রংপুরের তারাগঞ্জ, বদরগঞ্জ উপজেলা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে মিঠাপুকুর উপজেলার শেষভাগে করতোয়ার সঙ্গে মিলিত হয় এই নদী। রেনেল মানচিত্রে একে তিস্তা নামেই উল্লেখ করা হয়েছে। ১৭৮৭ সালের ভূমিকম্প ও ভয়াবহ বন্যার কারণে গতিপথ বদলে যায় তিস্তার। মূল তিস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে তৈরি হয় মরা তিস্তা।
রংপুর বরেন্দ্র বহুমূখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) সিনিয়র উপসহকারী প্রকৌশলী ফজলুল হক জানান, ১৭৮৭ সালে ভমিকম্পের কারণে এ শাখা নদীটি বিলুপ্ত হতে শুরু করে। চলতি বছরের ফেব্রয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ইআইআরপি প্রকল্পের মাধ্যমে বদরগঞ্জের হারিয়ে যাওয়া মরা তিস্তা নদীর প্রবাহ এলাকা ১৩ দশমিক ৫০ কিলোমিটার শনাক্ত করে নদী খনন করা হয়।
উৎসমুখ চিকলী নদীর সঙ্গে সংযুক্ত করে বদরগঞ্জ উপজেলা পরিষদ, কুমারপাড়া, শংকরপুর, ঝাড়পাড়া, সরকারপাড়া, কালুপাড়া সর্দারপাড়া, বানিয়াপাড়া ও বৈরামপুর অতিক্রম করে কুতুবপুর ,কাঁচাবাড়ীর পূর্বদিকে কুঠিপাড়া ঘাটের কাছে যমুনেশ্বরী নদীর সঙ্গে মিলিয়ে দেওয়া হয় নদীটিকে।এতেই প্রাণ ফিরে পায় মরা তিস্তা নদী। পাড় সংরক্ষণ ও পরিবেশ উন্নয়নে নদীর পাড়ে ফলদ, বনজ ও ঔষধী গাছের চারা রোপণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
রংপুর রিভারাইন পিপল-এর পরিচালক ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, মরা তিস্তা খননের ফলে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যসহ কৃষিতে আমূল পরিবর্তন আসবে।
রংপুর বিএমডিএ প্রকল্প পরিচালক মো. হাবিবুর রহমান খান বলেন, নদীটি পুনঃখননের ফলে ফিরে পেয়েছে তার হারানো যৌবন। কৃষিতে প্রায় ২০-২৫ গ্রামের ৫-৬ হাজার হেক্টর জমিতে করা হবে চাষাবাদ।
যমুনেশ্বরী নদীতীরবর্তী এলাকা থেকে ফসল বোঝাই করে চাষিদের নৌকাও চলতে দেখা গেছে সদ্য উদ্ধার হওয়া এ নদীতে। জলের আধার, আমিষের উৎস, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষাকারী হিসেবে এ নদী অবদান রাখবে, বলছেন সচেতনরা।
নদী বিশেষজ্ঞরা জানান, ১৭৭৬ সালের রেনেল মানচিত্রে প্রদর্শিত তিস্তার একটি শাখা পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার দক্ষিণাংশ থেকে প্রবাহিত হয়ে বর্তমান নীলফামারী জেলার ডোমার উপজেলা দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করে।
নদীটির তিস্তা নামটি বিলুপ্ত হয়ে এলাকাভিত্তিক দেওনাই, চাড়ালকাটা ও যমুনেশ্বরী নামে পরিচিতি পায়। সময়ের পরিবর্তনে অনেকে নদীর মালিক হয়ে যায়। এ নদীটি একসময় মানুষের বসতভিটা, পুকুর, ধানী জমি, গোচারণভূমিতে পরিণত হয়।
নদী না থাকায় অনেক মৎস্যজীবী পেশা হারিয়েছে। দীর্ঘ ২০০ পর নদীটি প্রাণ ফিরে পাওয়ায় খুশি মৎস্যজীবী ও চাষিরা। বসতভিটা, গোচারণভূমি,ধানী জমিতে পরিণত হওয়া মরা তিস্তার বুকে এখন হাঁসের খেলা, শিশুদের দাপাদাপি ও মাছ শিকারের দেখা মেলে। নদীর পাড়ে নিয়মিত বসছে বিভিন্ন পাখিদের মেলা। খরা মোকাবেলায় জলের বিশাল আধারে পরিণত হওয়া এ নদী সেচ সুবিধা নিশ্চিত করে জলাবদ্ধতা নিরসনেও বড় ভূমিকা রাখছে।