২০২১ সালে ধনী দেশগুলোর কার্বন নিঃসরণ বেড়েছে
বিশ্বের সবচেয়ে ধনী ২০ দেশে কার্বন নিঃসরণ বাড়ছে। নতুন এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ তথ্য।
ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে বলা হয়েছে, চলতি বছর জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোর কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিঃসরণ ৪ শতাংশ বাড়বে। ২০২০ সালে মহামারি শুরুর সময় এ নিঃসরণ ৬ শতাংশ কমেছিল।
এদিকে ২০১৯ সালের নির্ধারিত মাত্রার চেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করেছে চীন, ভারত ও আর্জেন্টিনা।
গবেষণায় বলা হয়েছে, জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার না কমায় তাপমাত্রা বৃদ্ধি কমানোর সব প্রচেষ্টা বিফলে যাচ্ছে। এদিকে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা শিল্পযুগপূর্ব সমেয়ের চেয়ে ১ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেড়ে গেছে।
আসন্ন গ্লাসগো জলবায়ু সম্মেলন কপ-২৬ সফল হতে হলে সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণকারী দেশগুলোকে উচ্চাকাঙ্ক্ষী নীতিমালা প্রণয়ন করতে হবে। কিন্তু নতুন গবেষণা প্রতিবেদন বলছে, সেটি খুব তাড়াতাড়ি হচ্ছে না।
বৈশ্বিক মোট কার্বন নিঃসরণের ৭৫ শতাংশই করে জি-২০ গ্রুপভুক্ত ধনী দেশগুলো। কোভিড মহামারির কারণে অর্থনীতি বন্ধ থাকায় এই মাত্রা গত বছর উল্লেখযোগ্য হারে কমে গিয়েছিল।
কিন্তু এ বছর জীবাশ্ম জ্বালানি, বিশেষ করে কয়লার ব্যবহার বাড়ায় কার্বন নিঃসরণের মাত্রাও বাড়বে।
গবেষণাটিতে পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে, এ বছর জি-২০ দেশগুলোর নিঃসরণ ৫ শতাংশ বাড়বে। এর জন্য প্রধানত চীন দায়ী। বাড়তি কার্বনের ৬০ শতাংশই নিঃসরণ করছে দেশটি। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয় শীর্ষ অর্থনীতির দেশেই কয়লার ব্যবহার ক্রমেই বাড়ছে।
বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের ধারায় ফেরায় জ্বালানির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় চীনে কয়লার ব্যবহার বাড়ছে।
এক বছরে কয়লার দাম বেড়েছে প্রায় ২০০ শতাংশ।
এর ফলে চীনের কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো অলাভজনক হয়ে যাওয়ায় এসব কেন্দ্রে বিদ্যুৎ উৎপাদন কমে গেছে। ফলে দেশটিতে নিদারুণ বিদ্যুৎ সংকট দেখা দিয়েছে গত কয়েক মাসে।
ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে উঠে এসেছে, ২০১৫-২০২০ এই পাঁচ বছরে জি-২০-ভুক্ত দেশগুলোতে গ্যাসের ব্যবহার বেড়েছে ১২ শতাংশ।
কোভিডের ধাক্কা কাটিয়ে ওঠার জন্য জি-২০-ভুক্ত দেশগুলো এক লাখ ৮০ হাজার কোটি ডলার খরচ করবে। তার মধ্যে ৩০ হাজার কোটি ডলার খরচ হবে সবুজ প্রকল্পে। কিন্তু উল্টো দিকে জি-২০ দেশগুলো ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত আঠারো মাসে জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পে ২৯ হাজার ৮০০ কোটি ডলার ভর্তুকি দিয়েছে।
প্রতিবেদনে কিছু ইতিবাচক দিকও তুলে ধরা হয়েছে। বলা হয়েছে, ধনী দেশগুলোতে সৌর ও বায়ুশক্তির ব্যবহার বাড়ছে। ২০২০ সালের তুলনায় চলতি বছর এই দেশগুলোতে নবায়নযোগ্য শক্তির সরবরাহ ২ শতাংশ বেড়েছে।
জি-২০-ভুক্ত দেশগুলো নতুন ২০৩০ কার্বন পরিকল্পনা সাজাতে সম্মত হয়েছে। তবে চীন, ভারত, অস্ট্রেলিয়া ও সৌদি আরব এখনও এতে সম্মতি দেয়নি।
ক্লাইমেট ট্রান্সপারেন্সি রিপোর্টে উঠে আসা মূল বিষয়গুলো:
১. ২০২১ সালে কয়লার ব্যবহার প্রায় ৫ শতাংশ বাড়বে। এই বাড়তি কয়লার ৬১ শতাংশ ব্যবহার করবে চীন, ১৮ শতাংশ যুক্তরাষ্ট্র, এবং ভারত ব্যবহার করবে ১৭ শতাংশ।
২. জি২০-ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়া মাথাপিছু সবচেয়ে বেশি কার্বন নিঃসরণ করে।
৩. ১৯৯৯ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৫ লাখ মানুষ মারা গেছে, আর্থিক ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে ৩ লাখ কোটি ডলার। ২০১৮ সালে ভারত, চীন, জাপান, জার্মানি ও যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।
৪. জি২০-ভুক্ত দেশগুলোতে বর্তমানে নতুন গাড়ি বিক্রিতে বৈদ্যুতিক বাহনের (ইভি) গড় বাজার অংশীদারিত্ব এখনও কম, মাত্র ৩ দশমিক ২ শতাংশ (ইইউ বাদে)। জার্মানি, ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যে ইভির মার্কেট শেয়ার সবচেয়ে বেশি।
- সূত্র: বিবিসি