পুরনো জিনিস কিনতে গিয়ে পেলেন মুন রক!
গ্যারেজ সেলে পুরনো ফলক কিনতে গিয়ে একটুকরো মুন রক বা চাঁদের ভূপৃষ্ঠের পাথর পেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার একজন বন্দুক সংগ্রাহক। জানা যায়, ১৯৭২ সালে অ্যাপোলো-১৭ মিশনের সময় চাঁদের মাটি থেকে আনা হয়েছিল এই পাথর।
নিজের সংগ্রহে থাকা বন্দুকগুলো নড়বড়ে হয়ে গেলে তা মেরামত করতে পুরনো দোকানে কাঠের ফলক খুঁজে বেড়াতেন ফ্লোরিডার এই ভদ্রলোক। গ্যারেজগুলোতে দেওয়া আকর্ষণীয় ছাড়ের সময়ও এগুলো কিনতেন তিনি। সম্প্রতি বহু বছর আগের একটি সংগ্রহের মধ্যে চোখ বুলাচ্ছিলেন, আর তখনই কাঠের ফলকের সাথে লাগানো মুন রকটি চোখে পড়ে তার।
প্রথমে খুব বিস্মিত হয়েছিলেন ওই বন্দুক সংগ্রাহক। তবে যেকোনো কিছুর মোড়ক ছেঁড়ার আগে খুব ভালোভাবে বাইরের দিকটা পড়ে দেখার অভ্যাস আছে তার। তাই এটি যে অ্যাপোলো-১৭ এর চন্দ্রাভিযানে আনা মহামূল্যবান এক পাথর, সেটি বুঝতে বেগ পেতে হয়নি তার। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট রিচার্ড নিক্সন এই কাঠের ফলক ও লুনার নাগেটটি উপহার দিয়েছিলেন লুইজিয়ানা রাজ্যকে। কিন্তু যেকোনো উপায়ে নানা হাত ঘুরে এটি শেষ পর্যন্ত গ্যারেজ সেলে এসে পৌঁছেছে।
বন্দুকে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে কাঠের ফলকটি ঠিক কতদিন আগে, কত টাকা দিয়ে কিনেছিলেন, তাও মনে নেই এই সংগ্রাহকের।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বন্দুক-সংগ্রাহক ইতিমধ্যেই মুন রকের টুকরোটি লুইজিয়ানা স্টেট মিউজিয়ামকে দান করেছেন। জাদুঘরে রাখা দ্বিতীয় আরেকটি মুন রকের সাথে রাখা হয়েছে এটিকে। জাদুঘরের অন্তর্বর্তীকালীন পরিচালক স্টিভ ম্যাকলানস্কি জানান, চাঁদের পাথরের টুকরোটি কিভাবে হারিয়ে গেল, সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে।
"এই মূল্যবান বস্তুটির প্রকৃত মালিক কে, তা আমি জানিনা। তবে আমি খুবই খুশি যে এটা এখন জাদুঘরে ফিরে এসেছে", বলেন স্টিভ।
চন্দ্রাভিযান শেষে 'অ্যাপোলো ১৭' পৃথিবীরে ফিরে আসার পর, প্রেসিডেন্ট নিক্সন যুক্তরাষ্ট্রের সবগুলো রাজ্য, সীমান্তবর্তী অঞ্চল এবং কিছু বিদেশি রাষ্ট্রকে মোট ৩৭৯ টুকরা স্যাটেলাইট স্টোন উপহার দেন। সময়ের সাথে সাথে এই পাথরগুলো হারিয়ে যেতে থাকে। ২০০২ সালে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে, নিখোঁজ পাথর সম্পর্কে বিভিন্ন অঞ্চলের কর্তৃপক্ষের কোনো ধারণাই নেই। এখন পর্যন্ত ১৭১টি পাথর নিখোঁজ অবস্থায় আছে।
চাঁদের পৃষ্ঠ থেকে আনা অন্তত ২০০টি নিদর্শন লুসাইট (সলিড স্বচ্ছ প্লাস্টিক) এবং কাঠের ফলকের মধ্যে আবদ্ধ করা হয়েছে। লুইজিয়ানার এই ফলকের মধ্যেও একটি ৪ বাই ৬ ইঞ্চি যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা লাগানো রয়েছে। মুন রকটি যে ১৯৭২ সালে 'অ্যাপোলো ১৭' মিশনের সঙ্গে করে আনা হয়েছে, তার বর্ণনা দেওয়া আছে অন্য একটি ধাতব ফলকে।
দ্বিতীয় একটি ফলকে লেখা- "এই মুন রকটি চাঁদের তরাস লিথ্রো উপত্যকা থেকে সংগ্রহ করা। নানা উপাদান ও আকারের পার্টিকেলের সমন্বয়ে গঠিত একটি বড় পাথরের অংশবিশেষ এটি। এই পাথর এমন একটি প্রতীক যা সুন্দর-শান্তিপূর্ণ জীবনের জন্য মানবজাতির আকাঙ্ক্ষাকে তুলে ধরে।"
কাঠের ফলকে আরও উল্লেখ করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন' এর পক্ষ থেকে লুইজিয়ানাবাসীকে এই উপহার দেওয়া হয়েছে।
১৯৭২ সালে নভোচারী ইউজেন কারনান এবং হ্যারিসন স্মিথ তাদের অভিযানে চাঁদের বুকে ২২ ঘন্টা কাটান। দুজনে মিলে ২৪০ পাউন্ডেরও বেশি চাঁদের বালু ও পাথর সংগ্রহ করেন। এসব নিদর্শনের বেশিরভাগই এখন নাসার ভল্টে রাখা হয়েছে, যদিও মাঝেমাঝে বৈজ্ঞানিক নানা গবেষণার জন্য সেগুলো বের করে দেওয়া হয়। এই মুহূর্তে হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসের ভেতরে একটি মুন রক রাখা আছে।
মুন রকটি যাতে নষ্ট না হয়, তাই দ্রুত এটিকে লুইজিয়ানা জাদুঘরের কাছে হস্তান্তর করেছেন এই বন্দুক সংগ্রাহক। এমন একটি চমৎকার জিনিস নিজের ঘরে খুঁজে পেয়েই তিনি খুশি!
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন