সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা ও বিচারের দাবি বিশিষ্ট নাগরিকদের
দেশের বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রদায়িক হামলার নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচার দাবি জানিয়ে এক বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন আইনজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, অর্থনীতিবিদ ও বুদ্ধিজীবিসহ দেশের ৪৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক।
স্বাক্ষরকারী কয়েকজন হলেন; এমিরেটস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, রাশেদা কে চৌধুরী, আনু মোহাম্মদ, এম হাফিজউদ্দিন খান, সাবেক বিচারপতি আব্দুল মতিন, ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য, ড. এম সাখাওয়াত হোসেন, ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ, আলী ইমাম মজুমদার, ড. বদিউল আলম মজুমদার ও গীতি আরা নাসরিন।
শুক্রবার রাতে গণমাধ্যমে পাঠানো তাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর পূজামন্ডপ ও বাড়িঘরে হামলা, ভাঙচুর ইত্যাদি ন্যাক্কারজনক ঘটনায় আমরা তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। যারা এসব ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে জড়িত, তারা দেশের সকল নাগরিকের সমঅধিকার প্রতিষ্ঠার বিরোধী এবং পক্ষান্তরে স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য চরম হুমকিস্বরূপ।
'অবিলম্বে এইসব দুষ্কৃতিকারীদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য আমরা সরকারের প্রতি দাবি জানাচ্ছি এবং সেই সাথে ক্ষতিগ্রস্তদের যথাযথ ক্ষতিপূরণ প্রদানের আহবান জানাচ্ছি।'
সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তায় প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে সেখানে বলা হয়, কুমিল্লায় সংঘটিত ঘটনার পর প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর আরো সতর্ক, সক্রিয় ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করা উচিত ছিল। কিন্তু ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরবর্তীতে দেশের বিভিন্ন এলাকায় আরও সাম্প্রদায়িক হামলা আমরা প্রত্যক্ষ করলাম, যার দায় প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।
'প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এই নিষ্ক্রিয়তার কারণ কী তা খুঁজে বের করতে হবে। অন্যদিকে, কিছু জায়গায় জড় হওয়া জনতাকে ছত্রভঙ্গ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলি বর্ষণের যে ঘটনা ঘটেছে- তাতে শক্তিপ্রয়োগ পরিমিত ও আইনানুগ ছিল কিনা- তাও তদন্ত করতে হবে।'
দেশে সাম্প্রদায়িকতা নিয়ে অপরাজনীতি বন্ধের আহবানও জানান বিশিষ্ট নাগরিকরা।
এব্যাপারে তারা বলেছেন, দেশের বিভিন্নস্থানে ঘটা এসব নিন্দনীয় সহিংস ঘটনার পর আমরা চরম উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছি যে, আমাদের প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে এগুলো প্রতিহত করার পরিবর্তে, একে অপরকে দোষারোপ করার পুরোনো অভ্যাসে লিপ্ত হয়েছে। যথাযথ তথ্য-প্রমাণ বিবর্জিত এধরনের দোষারোপের রাজনীতি প্রকৃত অপরাধীদের প্রকারান্তরে আড়ালে থাকতে এবং পার পেয়ে যেতে সহায়তা করে। আমরা রাজনীতিবিদদেরকে এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন কার্যক্রম থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানাই। একইসাথে আমরা আইনশৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীকে ঢালাওভাবে মামলা দায়ের, বিচারের নামে হয়রানি না করার এবং গ্রেফতার বাণিজ্যে লিপ্ত না হওয়ার অনুরোধ জানাই।
বিবৃতিতে অতীতের সকল সাম্প্রদায়িক হামলার বিচার দাবিও করেন তারা।
'এই বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে এই ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটছে। ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে গত কয়েক দিনে যে সব ব্যক্তি ও গোষ্ঠী এইসব অপরাধী কর্মকান্ডে লিপ্ত হয়েছে, তাদেরকে দ্রুত বিচারের আওতায় আনার আমরা জোর দাবি জানাচ্ছি। একইসঙ্গে, সমাজের সকল শুভ শক্তিকে একত্রিত করে ধর্মীয় সম্প্রীতি ও সকল নাগরিকের সমধিকার নিশ্চিত করার জন্য অবিলম্বে একটি বাস্তব কর্মসূচি গ্রহণের জন্য আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।'
বিবৃতিতে স্বাক্ষরকারীরা হলেন:
১. ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
এমিরেটাস অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২. ব্যারিস্টার আমির-উল ইসলাম
সংবিধান প্রণয়ন কমিটির সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী
৩. এম হাফিজউদ্দিন খান
অবসরপাপ্ত মহা হিসাব-নিরীক্ষক এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৪. ড. আকবর আলী খান
অবসরপ্রাপ্ত মন্ত্রীপরিষদ সচিব ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৫. রাশেদা কে চৌধুরী
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৬. বিচারপতি আব্দুল মতিন
সাবেক বিচারপতি, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৭. ড. এম সাখাওয়াত হোসেন
সাবেক নির্বাচন কমিশনার
৮. সুলতানা কামাল
মানবাধিকারকর্মী ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা
৯. ড. হামিদা হোসেন
মানবাধিকারকর্মী
১০. ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ
সাবেক গভর্নর, বাংলাদেশ ব্যাংক
১১. আলী ইমাম মজুমদার
সাবেক মন্ত্রীপরিষদ সচিব
১২. আবু আলম শহীদ খান
সাবেক সচিব, স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়
১৩. মহিউদ্দিন আহমদ
সাবেক সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়
১৪. ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য
অর্থনীতিবিদ
১৫. খুশী কবির
মানবাধিকারকর্মী
১৬. অধ্যাপক পারভীন হাসান
ভাইস চ্যান্সেলর, সেন্ট্রাল উইমেন্স ইউনিভার্সিটি
১৭. ড. বদিউল আলম মজুমদার
সম্পাদক, সুজন-সুশাসনের জন্য নাগরিক
১৮. অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ
অধ্যাপক, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়
১৯. অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদ
স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ
২০. তারিক করিম
সাবেক রাষ্ট্রদূত
২১. ড. শাহদীন মালিক
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট
২২. শিরিন হক
সদস্য, নারীপক্ষ
২৩. সালমা আলী
সভাপতি, বাংলাদেশ মহিলা আইনজীবী সমিতি
২৪. ব্যারিস্টার সারা হোসেন
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
২৫. শাহীন আনাম
নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
২৬. ফারাহ কবির
কান্ট্রি ডিরেক্টর, অ্যাকশন এইড
২৭. গীতি আরা নাসরিন
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
২৮. সঞ্জীব দ্রং
সাধারণ স¤পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
২৯. ড. শহিদুল আলম
আলোকচিত্রশিল্পী
৩০. শারমিন মুরশিদ
প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, ব্রতী
৩১. সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান
অ্যাডভোকেট, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট
৩২. আসিফ নজরুল
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৩. অধ্যাপক রেহনুমা আহমেদ
লেখক
৩৪. আকমল হোসেন
সাবেক অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৩৫. স্বপন আদনান
অধ্যাপক ও গবেষক, সোয়াস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন
৩৬. ফিরদৌস আজিম
অধ্যাপক, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়
৩৭. সৈয়দ আবু নাসের বখতিয়ার আহমেদ
সাবেক ব্যাংকার
৩৮. সেলিম রায়হান
নির্বাহী পরিচালক, সানেম
৩৯. রোবায়েত ফেরদৌস
অধ্যাপক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
৪০. গোলাম মোনোয়ার কামাল
নির্বাহী পরিচালক, আইন ও সালিশ কেন্দ্র
৪১. অধ্যাপক নায়লা জামান খান
পরিচালক, ক্লিনিকাল নিউরোসাইন্স সেন্টার, বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী ফাউন্ডেশন
৪২. জাকির হোসেন
প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৪৩. ফারুক ফয়সাল
আঞ্চলিক পরিচালক, আর্টিকেল ১৯
৪৪. ড. ফস্টিনা পেরেরা
মানবাধিকারকর্মী
৪৫. নূর খান লিটন
মানবাধিকারকর্মী
৪৬. নিয়াজ আসাদুল্লাহ
অধ্যাপক, মালয় বিশ্ববিদ্যালয়
৪৭. ড. নোভা আহমেদ
সহযোগী অধ্যাপক, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়