কবুতর থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে নতুন মডেলের হেলিকপ্টার নির্মাণ করছে চীন?
নিজেদের এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ারের জন্য সম্ভবত নতুন এক ধরনের হেলিকপ্টার নির্মাণ করছে চীন।
চীনের একদল প্রকৌশলীর "আরও নিরাপদে এয়ারক্র্যাফট অবতরণ প্রক্রিয়ার" জন্য একটি অ্যালগরিদম নিয়ে গবেষণা নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়ার জের ধরে এমনটিই অনুমান করছেন বিশ্লেষকরা।
গবেষক দলের প্রকৌশলীরা তিনটি মেইনল্যান্ডভিত্তিক বিশ্ববিদ্যালয়ের, যারা নেভাল বিল্ড আপ, শিপ বিল্ডিং ও এভিয়েশন বিষয়ে বিশেষজ্ঞ। তাদের গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে আমেরিকান সোসাইটি অব সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স প্রকাশিত জার্নাল অব অ্যারোস্পেস ইঞ্জিনিয়ারিং নামক বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নালে।
গবেষকরা ঘরে ফিরতে থাকা কবুতরদের আচরণের অপ্টিমাইজেশন থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে একটি নতুন অবতরণ মডেল খতিয়ে দেখেছেন। তাদের মূল লক্ষ্য হলো টিলট্রোটর হেলিকপ্টারের দুর্ঘটনার ঝুঁকি কমিয়ে আনা।
টিলট্রোটর হেলিকপ্টার গতানুগতিক হেলিকপ্টারের মতো পরিচালিত হতে পারে, আবার ফিক্সড-উইং এয়ারক্র্যাফটের মতোও উড়তে পারে। এর ফলে তারা উল্লম্বভাবে উড্ডয়ন ও অবতরণ করতে পারে, কিন্তু তারপরও তাদের তুলনামূলক অধিক পরিমাণে পরিসীমা ও ওজন বহনের জায়গা থাকে।
কিন্তু অনেক বছর ধরেই এ ধরনের এয়ারক্র্যাফটের নিরাপত্তার বিষয়টি চিন্তার কারণ হয়ে থাকেছে। বিশেষত ব্যস্ত ও গতিশীল এয়ারক্র্যাফট ক্যারিয়ারে অবতরণ করা এ ধরনের হেলিকপ্টারের জন্য আরও বেশি জটিল ব্যাপার হয়ে ওঠে।
চীনের সামরিক বাহিনীর কাছে কোনো টিলট্রোটর হেলিকপ্টার নেই কিন্তু তারা এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এরকম একটি হেলিকপ্টার তৈরির কথা ভেবে আসছে।
প্রকৌশলী গবেষকরা তাদের নিবন্ধে জানিয়েছেন যে তারা একটি নতুন ধরনের মডেল নিয়ে এসেছেন, যেটি দিয়ে ক্যারিয়ারের দিকে ধাবিত টিলট্রোটরের জন্য নির্দিষ্ট পথ তৈরি করা যাবে। এক্ষেত্রে তারা অনুপ্রেরণা নিয়েছেন ঘরে ফিরতে থাকা কবুতর থেকে।
তারা তাদের পদ্ধতিটিকে দুই ভাগে বিভক্ত করেছেন : ওড়ার উপযোগী পরিসর এবং নো-ফ্লাই জোন। তারা আরও জানিয়েছেন, টিলট্রোটর হেলিকপ্টার বিভিন্ন গ্রেডিয়েন্ট কোণ থেকে "ধাপে ধাপে" তিনটি অবতরণ প্রক্রিয়া অনুসরণ করে।
গবেষণা নিবন্ধটিতে এ ধরনের পদ্ধতির জন্য একটি ধারাবাহিক গাণিতিক মডেল দেখানো হয়েছে, যেখানে আবহাওয়া, ক্যারিয়ারের গতিবিধি এবং সামুদ্রিক অবস্থার কথা মাথায় রাখা হয়েছে।
সিঙ্গাপুরের এস রাজারত্নম স্কুল অব ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের সমুদ্র নিরাপত্তা বিশ্লেষক কলিন কো বলেছেন, এই গবেষণা নিবন্ধটি দেখে ধারণা করা যেতে পারে যে চীন হয়তো একটি ক্যারিয়ার-বর্ন টিলট্রোটর এয়ারক্র্যাফট নির্মাণের চেষ্টা করছে, যেটি হবে অনেকটা ভি-২২ অসপ্রে হেলিকপ্টারের মতো।
এ ধরনের টিলট্রোটর ক্র্যাফট কেমন হতে পারে সে প্রসঙ্গে কোহ বলেন, "ওজন বহন সক্ষমতার দিক দিয়ে এটি চিরাচরিত রোটারি উইংয়ের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হবে।
"সৈন্য ও অন্যান্য উপকরণ আকাশপথে বহনের ক্ষেত্রে এটি হতে পূর্বাপেক্ষা শ্রেয়তর একটি এয়ারক্র্যাফট। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সশস্ত্র সংঘাতে - সেটি হতে পারে তাইওয়ান স্ট্রেইট, পূর্ব চীন সাগর বা দক্ষিণ চীন সাগরে - এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।"
এদিকে তাইওয়ানের কাওহসিউং নেভাল অ্যাকাডেমির প্রাক্তন প্রশিক্ষক লু লি-শিহ বলেন, প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধটি থেকে নিরাপদে অবতরণের অনেক মূল্যবান রেফারেন্স পাওয়া যাবে।
"আমি আশা করছি এয়ারক্র্যাফট কোম্পানিগুলো এবং পিএলএ-র নেভাল ও এভিয়েশন ইনস্টিটিউটগুলো মিলিতে হয়ে আগামী তিন বছরের মধ্যেই ক্যারিয়ার-ভিত্তিক ভিটিওএল হেলিকপ্টারের একটি প্রোটোটাইপ প্রস্তুত করতে পারবে।"
ম্যাকাউ-ভিত্তিক সামরিক পর্যবেক্ষক অ্যান্টনি ওং টন বলেন, ব্লু হোয়েল নামে পরিচিত একটি কোয়াড টিলট্রোটর হেলিকপ্টার ২০১৩ সালে তিয়ানজিনে অনুষ্ঠিত একটি চীনা হেলিকপ্টার শো-তে প্রদর্শিত হয়েছিল।
সেই মডেলটি দেখতে ছিল অনেকটা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাবিত, ভি-২২ এর উপর ভিত্তি করে বানানো ভি-৪৪ বেল বোয়িং কোয়াড টিলট্রোটরের মতো।
ওং বলেন, চীন অনেকদিন ধরেই প্রযুক্তি ও উৎপাদন খাতে উন্নত হয়ে উঠেছে, যার ফলে চীনা প্রকৌশলীরা সেবার ভি-২২জেড এর নিজস্ব সংস্করণ নির্মাণে সক্ষম হয়েছিল।
তবে জৌ চেনমিং নামে বেইজিংয়ে অবস্থিত ইউয়ান ওয়াং মিলিটারি সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি ইনস্টিটিউটের একজন গবেষক বলেন, বেইজিং তখনও টিলট্রোটর হেলিকপ্টার নির্মাণের ক্ষেত্রে পুরোপুরি আত্মপ্রত্যয়ী হয়ে উঠতে পারেনি, কেননা তারা অস্থিতিশীলতা সমস্যা নিয়ে চিন্তিত ছিল। তাই তখন তারা সম্ভাব্য অন্যান্য অপশনের খোঁজ করতে শুরু করে।
"নেভির টাইপ ০৭৫এস এবং অন্যান্য বড় নেভাল জাহাজ সমর্থনের জন্য চীনের প্রয়োজন বিশালাকার শিপ-বর্ন ট্রান্সপোর্ট এয়ারক্র্যাফট," জৌ বলেন।
"চীনের ভবিষ্যৎ শিপ-বর্ন হেলিকপ্টার অনুপ্রাণিত হবে আমেরিকান সিকোরস্কি-বোয়িং এসবি-১ ডিফায়ান্ট কমপাউন্ড হেলিকপ্টার থেকে।"
ভি-২২ এবং ভবিষ্যতের ভি-৪৪ থেকে এসবি-১ অনেকটাই ভিন্ন। এ ধরনের হেলিকপ্টারে রয়েছে কোক্সিয়াল রোটর। এয়ারক্র্যাফটটি এখনও নির্মাণাধীন অবস্থায় রয়েছে। আশা করা যাচ্ছে এটি ইউএস আর্মির ইউএইচ-৬০ ব্ল্যাকহক কপ্টারের জায়গা নেবে।
সূত্র: সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট