নির্দিষ্ট জিনের বাহক হওয়ায় কোভিডের উচ্চ ঝুঁকিতে ৬০% দক্ষিণ এশিয়ান
কোভিড আক্রান্ত হলে ফুসফুস বিকল হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা দ্বিগুণ বাড়িয়ে তোলে এমন জিনের সন্ধান পেয়েছেন বিজ্ঞানীরা। এ আবিষ্কারের ফলে কিছু নির্দিষ্ট জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের কেন অন্যদের তুলনায় গুরুতর উপসর্গ বেশি দেখা যায় তারও কিছু ব্যাখ্যা মিললো।
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা গেছে, জিনটির উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এ ধরনের কারণে শ্বাসনালীর ভেতরের আবরণী কোষ এবং ফুসফুস ভাইরাসের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারে না।
গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত গবেষণাটি থেকে জানা যায়, দক্ষিণ এশিয়ার বংশোদ্ভূত ৬০ শতাংশ মানুষ জিনের এ ধরনটি বহন করেন। অন্যদিকে, ইউরোপীয় বংশোদ্ভূত মাত্র ১৫ শতাংশ মানুষ এ জিনের বাহক।
ভারতীয় উপমহাদেশের কিছু নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের মানুষের মধ্যে কোভিডজনিত মৃত্যুহার ও হাসপাতালে ভর্তির হার বেশি হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে সাহায্য করবে এ গবেষণা।
তবে রোগীদের আর্থসামাজিক অবস্থাসহ আরও নানা বিষয়ের প্রভাব থাকায় এই জিনের উপস্থিতিকেই একমাত্র কারণ ধরে নেওয়া যাবে না বলে সতর্ক করেন গবেষকরা।
আফ্রো-ক্যারিবিয়ান মানুষের ওপর করোনাভাইরাসের ভয়াবহ প্রভাব দেখা গেছে। কিন্তু তাদের মাত্র ২ শতাংশের মধ্যে এ জিনের উপস্থিতি দেখা গেছে।
এলজেডটিএফএল১(LZTFL1) নামে পরিচিত জিনটির বাহক হলে তাদের জন্য ভ্যাকসিন নেওয়া বিশেষভাবে প্রয়োজন বলে উল্লেখ করেন গবেষকরা।
এ গবেষণার ফলে এ জিনের বাহকদের জন্য নির্দিষ্ট চিকিৎসার বিষয়ে গবেষণা হওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হলো। এখন পর্যন্ত আলাদা কোনো ঔষধ বাজারে আসেনি।
অক্সফোর্ডের জেনোমিকসের অধ্যাপক ও গবেষণাটির গবেষক জেমস ডেভিস বলেন, "ভাইরাসের সংক্রমণ শুরু হলে ফুসফুস যে প্রতিক্রিয়া দেখায় তা বেশ গুরুতর। গবেষণাটি বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ চিকিৎসাতেই ভাইরাসের আক্রমণের পর দেহের রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার প্রতিক্রিয়া পরিবর্তন নিয়ে কাজ করা হয়েছে।"
কৃত্তিম বুদ্ধিমত্তা ও অত্যাধুনিক মলিকিউলার প্রযুক্তি ব্যবহার করে জিনটি শনাক্ত করেছেন ডেভিস ও তার সহকর্মীরা।
নির্দিষ্ট অ্যালগরিদম সেটাপের মাধ্যমে মানবদেহের অসংখ্য কোষের বিপুল জেনেটিক তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেন তারা। এরপর নতুন এক প্রযুক্তির মাধ্যমে নির্দিষ্ট এই জেনেটিক সিগন্যালের জন্য দায়ী ডিএনএ খুঁজে পান তারা।
গবেষণাটি প্রকাশিত হওয়ার দিনই ডেভিস এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, "অন্য সবকিছু একই থাকলে, আপনার যদি উচ্চ ঝুঁকির জিনোটাইপ থাকে আর কোভিডে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ হয়ে যান; ৫০ শতাংশ সম্ভবনা হলো এ জিনোটাইপ না থাকলে এমনটা হতো না।"
- সূত্র: ব্লুমবার্গ