সন্ত্রাসবাদ দমনের নামে চীনে উইঘুর নির্যাতনের নথি ফাঁস
খনিজ সম্পদে পরিপূর্ণ জিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিমদের চীনের কেন্দ্রীয় সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে এমন বাস্তবতা দীর্ঘদিনের। তবে চীনা সরকারের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে নির্যাতনের প্রকৃত চিত্র সংশ্লিষ্ট তথ্যপ্রমাণ সংগ্রহ করা বেশ কঠিন।
এর মাঝেও সম্প্রতি উইঘুরদের ওপর নির্যাতনের উদ্দেশ্য এবং পরিকল্পনা নিয়ে চীন সরকারের বেশ কিছু গোপন নথি ফাঁস হয়েছে। বার্তা সংস্থা এপির হাতে আসা এসব নথিতে দেখা গেছে, উইঘুরদের সমাজ ব্যবস্থা ভেঙ্গে দেওয়াসহ তাদের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ধ্বংস করতেই চীন সরকার বেছে বেছে সমাজের নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করে।
এমনই একজন ব্যক্তি এমির। তিনি জিনজিয়াংয়ের কারাকাক্স অঞ্চলের এক ইমাম। কয়েক দশক ধরে এমির ছিলেন তার সম্প্রদায়ের মানুষের নির্ভরতার স্থল। প্রতি শুক্রবার জুম্মার নামাজে ইসলামকে শান্তির ধর্ম হিসেবে প্রচার করতেন। কেউ অসুস্থ হলে হেকিমের কাজটাও তিনিই করতেন। নানা প্রকার ঔষধি থেকে ওষুধ তৈরি করাটাও ছিল তার দায়িত্বের অংশ। শীতকালে ঠাণ্ডায় কাতর দরিদ্র মানুষের ঘরেও কয়লার বোঝা নিয়ে হাজির হতেন তিনি।
কিন্তু বছর তিনেক আগে যখন চীন সরকার জিনজিয়াংয়ের বিপুল সংখ্যক মানুষকে কুখ্যাত ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি করার উদ্যোগ নেয়, তখন সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়াই বৃদ্ধ এমিরসহ তার তিন পুত্র সন্তানকেও গ্রেফতার করা হয়। ইতোপূর্বে এসব কিছুকে কারণ ছাড়াই নির্যাতনমূলক গণগ্রেফতার কর্মসূচি মনে করা হলেও এবার চীন সরকারের গোপন নথিতে আসল কারণ পাওয়া গেছে।
বার্তা সংস্থা এপি ফাঁস হওয়া নথির বরাতে জানাচ্ছে, নির্দোষ হলেই পার পাওয়া যাবে না, উইঘুরদের ইসলামি সংস্কৃতি ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন এমন ব্যক্তিদের চীন সরকার হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে।
এর ধারাবাহিকতায় অনেক ব্যক্তিকে শুধুমাত্র দাঁড়ি রাখা, নামাজ পড়তে মসজিদে যাওয়াসহ আরও অনেক তুচ্ছ কারণে গ্রেপ্তার করা হয়। এই প্রক্রিয়ায় সুপরিকল্পিতভাবে এমিরের মতো অনেক উইঘুরের পরিবার ও তাদের অঞ্চলের সংস্কৃতিকে মুছে ফেলেছে চীন।
এদিকে এপির হাতে যেসব নথি এসেছে তা গত বছর ইস্যু করেছিল চীন সরকার। এসব নথিতে আলোচিত অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ৩১১ জন ব্যক্তির পরিচিতি এবং তাদের পরিবার পরিজনের পুঙ্খানুপুঙ্খ বিবরণ আছে। আছে প্রত্যেকের নাম, ঠিকানা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নাম্বার এবং তাদের আটকে রাখা হবে নাকি মুক্তি দেওয়া যাবে, এমন সিদ্ধান্ত সংক্রান্ত নির্দেশনা।
এই নথি হাতে আসার পর বার্তা সংস্থা এপি মন্তব্যের জন্য জিনজিয়াংয়ের প্রাদেশিক সরকারের সঙ্গেও যোগাযোগ করে। কিন্তু তারা এতে কোনো প্রকার সাড়া দিতে অস্বীকৃতি জানায়।
এ ব্যাপারে কলোরাডো বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেরেন বাইলার বলেন, এটা সুস্পষ্ট চীন তাদের ধর্মীয় পরিচয়কে লক্ষ্যবস্তু বানিয়েছে। চীন উইঘুরদের সমাজ, পরিবার ভেঙ্গে দিতে চায়। শেকড়ের বন্ধন না থাকার কারণে নবীনদের সহজেই নতুন মতাদর্শে প্রশিক্ষিত করা সম্ভব।