পারমাণবিক প্রযুক্তিতে তুলার নতুন জাত; পোশাক শিল্পে আশার আলো
পারমাণবিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে দেশে প্রথমবারের মতো উদ্ভাবন করা হয়েছে সাশ্রয়ী এবং দ্রুত বর্ধনশীল তুলার জাত।
পোশাক শিল্পের প্রধান কাঁচামাল তুলা। প্রতি বছর প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার তুলা আমদানি করতে হয় এ খাতের জন্য। তাই নতুন জাতের এই তুলা আবিষ্কারে আশাবাদী হয়ে উঠেছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারকরা।
নতুন এই জাতটি শুষ্ক মৌসুমে সহজেই চাষ করা যাবে, খুব বেশি সেচের প্রয়োজন হবে না। এছাড়াও এটি চরম জলবায়ু-সহনশীল জাত।
ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হলে নতুন জাতটি দেশের জন্য সামষ্টিক অর্থনৈতিক সুবিধা নিয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নতুন তুলার জাতটি এখন বাংলাদেশের ১৩টি স্থানে চাষ করা হচ্ছে। আর ১ হাজারের বেশি কৃষককে এই জাত চাষের ওপর প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে।
বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, দ্রুত বর্ধনশীল এই জাত কৃষকদের আয় ৪০ শতাংশ বাড়াবে।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের অধীন তুলা উন্নয়ন বোর্ড (সিডিবি) এখন দেশের সর্বত্র নতুন এই তুলার জাত ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
বোর্ডের নির্বাহী পরিচালক মো. আখতারুজ্জামান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, সিডিবি ১৩টি জোনের অধীনে সারা দেশে কৃষকদের মধ্যে নতুন জাতে বীজ বিতরণের পরিকল্পনা করেছে।
নতুন এই জাতটির নাম রাখা হয়েছে 'সিডিবি তুলা এম-১'।
২০২১ সালের ১৩ মার্চ এই নতুন জাতের তুলা আনুষ্ঠানিকভাবে অবমুক্ত ও নিবন্ধন করা হয়।
নতুন জাতটির প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, অন্যান্য জাতের তুলনায় এই জাতের তুলা অন্তত ৩০ দিন আগে সংগ্রহ করা যায়।
এছাড়াও এই তুলা জায়গা নেয় কম। ফলে এই জাতটি অত্যন্ত ঘন করে রোপণের উপযোগী। তাছাড়া এর উৎপাদনশীলতাও বেশি।
অন্যান্য জাতের তুলা রোপণের বেলায় সাধারণত সারি-থেকে-সারিতে ৯০ সেন্টিমিটার এবং চারা-থেকে-চারায় ৪৫ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখতে হয়। কিন্তু নতুন জাতটির ক্ষেত্রে সারি-থেকে-সারিতে মাত্র ৭০ সেন্টিমিটার এবং চারা-থেকে-চারায় ৩০ সেন্টিমিটার দূরত্ব রাখাই যথেষ্ট।
প্রকল্প পরিচালক জানিয়েছেন, নতুন জাতটির সম্ভাব্য হেক্টরপ্রতি ফলন প্রায় সাড়ে ৫ টন, যেখানে অন্যান্য জাতের ফলন মাত্র ৪ টন।
স্টেকহোল্ডাররা জানিয়েছেন, দেশীয় উৎস থেকে পর্যাপ্ত উচ্চমানের তুলার সরবরাহ না থাকায় তুলা শিল্প বর্তমানে আমদানির উপর নির্ভরশীল।
বর্তমানে দেশে বছরে প্রায় ৭৫ লাখ বেল তুলার চাহিদা রয়েছে, যার মাত্র ২ দশমিক ৩৫ শতাংশ দেশে উৎপাদিত হচ্ছে।
২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রায় ৭১ লাখ বেল তুলা আমদানি করা হয়েছে। এসব তুলা আমদানি হয় মূলত ভারত, মালি, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রাজিল থেকে।