৮৯তম জন্মদিনে সাফল্যের যে ৬ মূলমন্ত্র শেখালেন ওয়ারেন বাফেট
গত ৩০ আগস্ট ঊননব্বইয়ে পা দিয়েছেন ধনকুবের ওয়ারেন বাফেট। সেইসঙ্গে স্ত্রী অ্যাস্ট্রিডের সঙ্গে পালন করছেন ১৩তম বিবাহবার্ষিকী। এ উপলক্ষে নিজের অভিজ্ঞতা থেকে তরুণদের জন্য আধডজন উপদেশ দিয়েছেন বাফেট। চলুন জেনে নেওয়া যাক উপদেশগুলো।
ঠিক মানুষটিকে বিয়ে করা
বাফেট কাঁড়ি কাঁড়ি টাকা কামিয়েছেন বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে বিনিয়োগ করে। তবে তাকে যদি জিজ্ঞেস করেন, তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তটা কোনটি ছিল, তার উত্তরে কিন্তু টাকার উল্লেখ পাবেন না। বাফেট বলেন, জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হলো, বিয়ে করার জন্য আপনি কোন মানুষটিকে বেছে নিচ্ছেন।
২০১৭ সালে বিল গেটসের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় তিনি বলেন, মানুষ এমন মানুষের সঙ্গেই সম্পর্ক গড়তে চায়, যাদের সঙ্গে তার মিল আছে। আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো জীবনসঙ্গী বাছাই করা।
এই উপদেশটি বাফেট বছরের পর বছর ধরে দিয়ে আসছেন। ২০০৯ সালেও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ের বার্ষিক সভায় তিনি বলেন, 'ঠিক মানুষটিকে বিয়ে করুন। ...এটা আপনার জীবনে বড় ব্যবধান গড়ে দেবে।'
নিজের ওপর বিনিয়োগ করা
এ বছর ইয়াহু ফাইন্যান্সের এডিটর-ইন-চিফকে বাফেট বলেন, 'সবচেয়ে ভালো বিনিয়োগ হলো নিজের ওপর করা বিনিয়োগ।'
প্রথমেই লিখিত ও ব্যক্তিগত উভয় পর্যায়েই ভালোমতো যোগাযোগ করার উপায় শিখে নেওয়ার উপদেশ দিয়েছেন এই ধনকুবের। ২০১৮ সালে ফেসবুকে পোস্ট করা এক ভিডিওতে তিনি বলেন, এই দক্ষতা আয়ত্তে আনতে পারলে যে-কারও মূল্য অন্তত ৫০ শতাংশ বেড়ে যায়।
এরপর অল্প বয়সে শরীর ও মনের যত্ন নেওয়ার উপদেশ দিয়েছেন বাফেট। তিনি বলেন, 'জীবনে আপনি একটাই শরীর ও মন পাবেন। আর বয়স ৫০ হয়ে গেলে এই দুটো জিনিসের যত্ন নেওয়া শুরু করতে পারবেন না। যত্ন না নিলে তদ্দিনে আপনার দেহে মরচে পড়ে যাবে।'
'হাই-গ্রেড মানুষে'র সঙ্গে সম্পর্ক গড়া
২০১৫ সালে এক সাক্ষাৎকারে বাফেট বলেন, আমরা কার সঙ্গে সম্পর্ক রাখছি, এই ব্যাপারটি গুরুত্বপূর্ণ।
তিনি বলেন, 'জীবনে সবচেয়ে ভালো যে কাজগুলো আপনি করতে পারেন, তার একটা হলো, নিজের চেয়ে ভালো লোকজনের সঙ্গে সম্পর্ক রাখা।'
বাফেটের ভাষায় এই মানুষগুলো হলো 'হাই-গ্রেড মানুষ'। নিজের চেয়ে ভালো মানুষের সঙ্গে থাকলে আমরাও তাদের মতোই চিন্তা-ভাবনা ও কাজ করতে আরম্ভ করি।
বর্ষীয়ান এই ধনকুবের বলেন, আমরা যদি নিজেদের চেয়ে খারাপ লোকজনের সঙ্গে ওঠাবসা শুরু করি, তাহলে অচিরেই আমাদের আচার-আচরণও তাদের মতোই হয়ে যাবে।
যাদের শ্রদ্ধা করি, তাদের জন্য কাজ করা
বাফেট এক সাক্ষাৎকারে বলেন, 'যাকে আপনি সবচেয়ে বেশি শ্রদ্ধা করেন, তার জন্য কাজ করার চেষ্টা করুন। ১০ বছর পর হয়তো আপনি ওই একই কাজ করবেন না, তবে পথ চলার সঙ্গে সঙ্গে অনেক রকম কাজের সুযোগ পাবেন।'
বেতন গুরুত্বপূর্ণ হলেও, বাফেটের মতে, স্রেফ টাকার জন্য কোনো চাকরি করা উচিত ন।
বাফেট একবার তার গুরু ও হিরো বেঞ্জামিন গ্রাহামের সঙ্গে কাজ করার প্রস্তাব গ্রহণ করেন। চাকরিটা নেওয়ার সময় তিনি একবারও বেতনের কথা জানতে চাননি। মাসের শেষে বেতনের চেক হাতে পাওয়ার পরই কেবল তিনি নিজের বেতনের কথা জানতে পেরেছিলেন।
মানুষের কথায় কান না দেওয়া
বিনিয়োগ আবেগের জায়গা হতে পারে, কিন্তু শুধু খবরের পাতা উল্টে বিনিয়োগটা কেমন সে সম্পর্কে ধারণা আমরা পাব না।
তাছাড়া অর্থবাজারগুলোর অবস্থা কখন কেমন হবে, সে ব্যাপারে কেউ কখনও নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারে না। সবচেয়ে ভালো কৌশল হচ্ছে, বাজারের অবস্থা রমরমা থাকলেও মাথা ঠিক রাখা।
২০১৬ সালে বাফেট বলেছিলেন, 'সত্যি বলতে কী, অর্থনীতিবিদরা কী বলছেন আমি তাতে কান দিই না। [অর্থনীতিবিদদের] ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখতে পাবেন, তারা স্টক বেচাকেনা করে বিস্তর টাকা কামান না। অথচ যারা স্টক বেচাকেনা করে, তারা তাদের কথাই শোনে। এই ব্যাপারটা আমার তেমন একটা পছন্দ না।'
টাকায় সাফল্য মাপা যায় না
পৃথিবীর শীর্ষ ধনীদের একজন বাফেট, কিন্তু তিনি কখনও টাকা দিয়ে সাফল্য মাপেন না। তার কাছে ভালোবাসার মানুষদের ধরে রাখাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
২০০৮ সালে এক বক্তৃতায় বাফেট বলেন, 'জীবনের সবচেয়ে বড় আশীর্বাদ হলো নিঃশর্ত ভালোবাসা পাওয়া।'
তিনি বলেন, 'ভালোবাসার সবচেয়ে অবিশ্বাস্য দিক হলো, আপনি এটা থেকে বেরোতে পারবেন না। জীবন থেকে ভালোবাসা ঝেড়ে ফেলতে চাইলে দ্বিগুণ ভালোবাসায় জড়িয়ে যাবেন। কিন্তু জোর করে আঁকড়ে ধরে রাখতে চাইলে ভালোবাসা হারিয়ে যায়। এ এক অসাধারণ ব্যাপার—যেসব লোক ভালোবাসাকে অবহেলায় দূরে ঠেলে দেয়, তারাই এটা দশগুণ ফেরত পায়।'