ন্যাজাল টিকা উৎপাদন করবে ইনসেপ্টা
অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে ব্রিটিশ বায়োমেডিকেল ফার্ম 'ভিরাকর্প'-এর সঙ্গে মিলিত হয়ে সুঁচবিহীন করোনা টিকা তৈরি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানি ইনসেপ্টা। অত্যাধুনিক এই টিকা তৈরি হবে ইন্ট্রা-ন্যাজাল প্রযুক্তি ব্যবহার করে।
বিশ্বব্যাপী এখন পর্যন্ত প্রি-ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে টিকাটি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল শেষে আগামী বছরের দ্বিতীয়ার্ধে এই টিকা বাজারে আসতে পারে বলে জানিয়েছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিউটিক্যালস।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "ল্যাঙ্কাস্টার ইউনিভার্সিটি ও ভিরাকর্প ল্যাবে টিকাটি সফলভাবে উন্নয়ন হয়েছে। এখন বিশ্বব্যাপী ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল চলছে। টিকাটি বাজারে নিয়ে আসার জন্য একটি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানির প্রয়োজন; আর সেটিই হলো ইনসেপ্টা।"
তিনি আরও বলেন, "এটি আমরা স্থানীয়ভাবে সরবরাহ করবো, অথবা দেশের বাইরে রপ্তানি করবো।"
টিকা উৎপাদনে সময় লাগবে আরও ৭ থেকে ৮ মাস; তাই এখনও এর দাম নির্ধারণ করা হয়নি। তবে এটি মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকবে বলে জানিয়েছে ইনসেপ্টা কর্তৃপক্ষ। এই টিকার কয়েক ডোজ নিতে বলে বলেও জানা গেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই টিকার একটি অনন্য ফর্মুলেশন ও ডেলিভারি পদ্ধতি রয়েছে। এটি করোনা থেকে সুরক্ষা তো দেবেই, সেইসঙ্গে বাজারের অন্যান্য টিকার তুলনায় আরও কিছু বাড়তি সুবিধাও দেবে। এই টিকা পরিবহনের জন্য বিশেষ কোনো পরিবহন ব্যবস্থার প্রয়োজন নেই। শীতল রাখার প্রচলিত পরিবহন ব্যবস্থা ব্যবহারের মাধ্যমেই এই টিকা এক স্থান থেকে আরেকস্থানে নিয়ে যাওয়া যাবে। এছাড়া, টিকাটি সুঁচবিহীন পন্থায় নাক দিয়ে স্প্রে করে শরীরে প্রবেশ করানো যাবে।
সুঁচবিহীন পরবর্তী প্রজন্মের কোভিড-১৯ টিকার পথপ্রদর্শক ড. মুহাম্মদ মুনির বলেন, "সহজে পরিবহনযোগ্য ও নাকের ভেতরে স্প্রের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করানো যায় বলে, এই টিকা কর্মসূচি চালাতে ভারী অবকাঠামো ও প্রশিক্ষণের তেমন প্রয়োজন নেই। ফলে বিশ্বের সবচেয়ে প্রত্যন্ত অঞ্চলগুলোতেও সহজেই এই টিকা পৌঁছাতে পারবে।" মুহাম্মদ মুনির ভিরাকর্পের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন।
টিকা উৎপাদনের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, এই টিকা দেওয়ার জন্য নার্স বা অন্য কারো সাহায্যের প্রয়োজন হবেনা। যে কেউ এটি ফার্মেসি থেকে কিনে নিজেই দিতে পারবেন।
চলতি বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে বিনামূল্যে করোনাভাইরাসের টিকা দিচ্ছে সরকার। এখন পর্যন্ত ৬.৭৪ কোটি মানুষ টিকার প্রথম ডোজ ও ৪.৪১ কোটি মানুষ দ্বিতীয় ডোজ পেয়েছে। রোববার থেকে ট্রায়ালের ওপর ভিত্তি করে বুস্টার ডোজ দেয়া শুরু করবে সরকার।
এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে ইনসেপ্টার ন্যাজাল টিকাটি ফার্মেসিতে পাওয়া যাবে কিনা জানতে চাইলে ইনসেপ্টার ওই কর্মকর্তা বলেন, "বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর। সরকার যদি সব মানুষকে দুই ডোজ দেয়ার পর বুস্টার ডোজ কিনতে বলে তখন সেটি আমাদের কাছ থেকে কিনতে পারবেন। বা এই টিকা সরকারই আমাদের কাছ থেকে কিনে জনগণকে ফ্রিতে দিতে পারবে। এটি ফার্মেসিতে নাকি হাসপাতালে দেয়া হবে পুরো বিষয়টি নির্ভর করছে সরকারি সিদ্ধান্তের ওপর।"
ইনসেপ্টা বছরে একক ডোজ হিসেবে ১৮০ মিলিয়ন এবং মাল্টি-ডোজ হিসেবে ১ বিলিয়ন টিকা উৎপাদন করতে পারে।
ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. আব্দুল মুক্তাদির বলেন, "ইনসেপ্টা সর্বদা নতুন টিকা পদ্ধতির পাশাপাশি উৎপাদন প্রযুক্তি অর্জন, বিকাশ ও সেগুলোর সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিতকরণের চেষ্টা করে। এই সহযোগিতা ভ্যাকসিনেশনের ক্ষেত্রে আমাদের মতো উন্নয়নশীল দেশে ও প্রত্যন্ত জনগোষ্ঠীর জন্য একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে।"
নাকে ব্যবহারের টিকার পাশাপাশি সরকারের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে সিনোফার্ম টিকা ও আরেকটি প্রোটিন টিকা উৎপাদনেও কাজ করছে ইনসেপ্টা ফার্মাসিটিক্যালস।
এর আগে দেশে সুইডেনের কেরোলিনস্কা ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত ন্যাজাল স্প্রে টিকার ট্রায়াল ও উৎপাদনের জন্য গত আগস্টে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হয়েছিল।
টিকাটি বাংলাদেশে এনে ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল ও উৎপাদনের প্রচেষ্টায় জড়িত বিশেষজ্ঞ দলের সদস্য ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মোঃ অধ্যাপক আহমেদুল কবির টিবিএস-কে বলেন, "সুইডেন থেকে টেকনোলজি ট্রান্সফারের জটিলতার কারনে ওই টিকার ট্রায়াল পিছিয়ে গেছে। কবে থেকে ট্রায়াল শুরু করা হবে তা এখনই বলা যাচ্ছেনা।"
এখন পর্যন্ত কোন দেশে করোনাভাইরাসের কোন ন্যাজাল টিকা অনুমোদন পায়নি। ভারত বায়োটেক (ভারত), কোডাজেনিক্স (যুক্তরাষ্ট্র), হংকং বিশ্ববিদ্যালয় (চীন), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ (এনআইএইচ) ন্যাজাল টিকার বিভিন্ন পর্যায়ের ট্রায়াল শেষ করেছে।