২০২২ সালে কোভিড পরিস্থিতি কেমন হবে?
গত বছরের এই সময়ের কথা মনে আছে? উন্নত বিশ্বে সবেমাত্র ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয়েছে। বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর টিকাদান কর্মসূচি অনিশ্চিত। কোভিড বাড়বে কি কমবে, সেই নিশ্চয়তাও ছিল না।
একবছর পর ২০২২ সালকে সামনে রেখে আবারও আমরা একই পরিস্থিতির মুখোমুখি। বুস্টার শট পাওয়া নিয়ে রয়েছে অনিশ্চয়তা। ওমিক্রন এসে মহামারির দীর্ঘসূত্রতার সম্ভাবনাও নতুন করে বাড়িয়ে দিয়েছে।
কিন্তু নতুন বছরে ওমিক্রন কি বিশ্বে নতুন এক মৃত্যু মিছিল ডেকে আনবে? আবারও কি পড়বে লকডাউন? ২০২১ সালে হাসপাতাল ও অক্সিজেন সংকট নিয়ে যে ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছিল তার পুনরাবৃত্তিই কি ঘটতে চলেছে?
লাইফ সায়েন্স অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান এয়ারফিনিটির সিইও রাসমাস বেক হানসেন বলেন, 'বৈশ্বিক পরিস্থিতির দিকে লক্ষ্য করলে বলব, আমরা এখনো বেশ চ্যালেঞ্জিং একটি সময়ে আছি। বিশ্বব্যাপী আশঙ্কাজনকভাবে বাড়ছে সংক্রমণ।'
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার শীর্ষ জরুরি বিশেষজ্ঞ মাইক রায়ানের মতে, কোভিড-১৯ মহামারির তীব্রতা আগামী বছর শেষ হতে পারে। তবে, করোনাভাইরাস পুরোপুরি যাবে না।
ওমিক্রন নিয়েও আছে অনেক প্রশ্ন। ওমিক্রন কি অনেক বেশি সংক্রামক? ভ্যাকসিন ও নতুন চিকিৎসাগুলো কি আসলেই কাজে দিবে? ডেল্টার পর যেমন ওমিক্রন এসে হানা দিয়েছে, তেমনি ওমিক্রনের পরেও কি ভাইরাসের নতুন কোনো সংস্করণ আসতে চলেছে?
ফার্মাসিউটিক্যাল প্রতিষ্ঠানগুলো ইতোমধ্যে ওমিক্রন প্রতিরোধ ও চিকিৎসায় কার্যকর ভ্যাকসিন ও ওষুধ খুঁজে পেতে উঠেপড়ে লেগেছে। ফাইজার-বায়োএনটেক এবং মডার্নার মতো কোভিড ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো ওমিক্রন ঠেকাতে কার্যকর ভ্যাকসিন আনতে জোর চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এমআরএনএ ভ্যাকসিনের সফলতার পর শীঘ্রই তারা ওমিক্রনের বিরুদ্ধে কার্যকর ভ্যাকসিন আনতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বায়োএনটেকের সিইও ইউগুর সাহিন চলতি মাসের শুরুতে এক প্রেস কনফারেন্সে বলেন, 'ওমিক্রন রোধে কার্যকর ভ্যাকসিন নিয়ে আমাদের কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলেছে।'
ফেব্রুয়ারি কিংবা মার্চের মধ্যে ওমিক্রন সংক্রমণ রোধে সক্ষম ভ্যাকসিন তৈরি করা সম্ভব হবে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা।
এয়ারফিনিটির প্রতিবেদনের অনুমান, ২০২২ সালে বিশ্বব্যাপী ৮.৭ বিলিয়ন ভ্যাকসিন উৎপাদিত হবে। তবে, ওমিক্রনের জন্য নতুন ভ্যাকসিন শট আনতে হলে কমে যাবে উৎপাদন। সেক্ষেত্রে ৫ বিলিয়নের বেশি উৎপাদন সম্ভব হবে না। অনেক প্রতিষ্ঠান নতুন ভ্যাকসিন উৎপাদনে ব্যর্থ হয়ে বাজার থেকে হারিয়ে যাবে। আবার নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান ভ্যাকসিন নিয়ে আসলে সেগুলো অনুমোদন পেতেও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন হবে।
বিশ্বে বর্তমানে ৩৫৮টি কোভিড ভ্যাকসিন প্রিক্লিনিক্যাল পর্যায়ে কাজ করছে বলে বলে জানিয়েছে এয়াররফিনিটি। এর মধ্যে ১৭৫টি ভ্যাকসিন ক্লিনিক্যাল ডেভলপমেন্ট এবং ৪১টি ফেজ-৩ পর্যায়ে রয়েছে।
বেক হানসেন বলেন, 'সুঁইয়ের ভয়ে যে অনেকে ভ্যাকসিন গ্রহণ থেকে বিরত আছেন, তা নিয়ে সন্দেহ নেই। আর তাই আমরা নাকের মধ্যে দিয়ে দেওয়া যায় কিংবা মুখে খাওয়া যায় এমন কিছু খুঁজছি।'
তিনি আরও বলেন, ২০২২ সালের দিকে তাকিয়ে আমরা উল্লেখযোগ্য কিছু উদ্ভাবন এবং বৈজ্ঞানিক অগ্রগতি আশা করতে পারি যেমনটি ইতোমধ্যে ২০২১ সালেও দেখা গেছে।
কোভিডের অন্যান্য চিকিৎসা
ওমিক্রনের আগমনের সঙ্গে কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসায় নতুন ওষুধ উদ্ভাবনেও ব্যস্ত বেশ কিছু সংস্থা। গ্ল্যাক্সোস্মিথকাইন এবং ভিয়ার বায়োটেকনোলজির অনুমোদিত অ্যান্টিবডি ট্রিটমেন্ট এখন পর্যন্ত ওমিক্রনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে সফলভাবে কাজ করেছে। তবে, দেখা দিয়েছে সরবরাহ সংকট।
অন্যদিকে, রিজেনেরন অ্যান্ড লিলি নতুন ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে ট্রিটমেন্ট নিয়ে কাজ করছে। রিজেনেরনের সিইও লেন শ্লেইফার বলেন, প্রতিষ্ঠানটি ২০২২ সালের প্রথম তিনমাসের ভেতর উন্নত ট্রিটমেন্ট নিয়ে আসবে, যা একাধিক ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে সফলভাবে কাজ করবে।
'পরবর্তী ভ্যারিয়েন্ট দেখা দেওয়ার আগেই বৃহৎ পরিসরে রোগীদের কাছে এই ট্রিটমেন্ট পৌঁছে দিতে হবে। আমাদের কাছে নতুন সব অ্যান্টিবডি রয়েছে যা ওমিক্রন এবং ডেল্টা উভয়ের বিরুদ্ধেই কাজ করতে পারে,' বলেন তিনি।
অন্তর্বর্তী পরীক্ষায় অ্যান্টিভাইরাল মলনুপিরাভির হাসপাতালের ভর্তির ঝুঁকি ও মৃত্যু ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমাতে পারে এমন ফল উঠে আসলেও সার্বিকভাবে বড়িটি তেমন সফল হয়নি। পরবর্তীতে আরও বিস্তারিত প্রতিবেদনে ঝুঁকি কমানোর সম্ভাবনা ৩০ শতাংশ পর্যন্ত দেখা গেছে।
কোভিডের কারণে বাজার অনিশ্চয়তা ও বিভিন্ন বিধিনিষেধের কবলে পরে বহু প্রতিষ্ঠানই বিপর্যস্ত সময় পার করেছে। ২০২১ সালে পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও ওমিক্রনের কারণে কি সেই অবস্থা আবারও ফিরবে?
বিজনেস কনসাল্টিং ফার্ম পিডব্লিউসির কর্মকর্তা গ্লেন হানজিঞ্জারের মতে, 'কোভিডের কারণে ব্যবসার পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার সময় আমরা পার করে এসেছি। মানুষ এখন বুঝে গেছে কীভাবে ব্যবসা করতে হবে। এটাকে বিশ্ব পরিচালনার নতুন স্বাভাবিক অবস্থা বলেই মনে করি।'
- সূত্র: ফিয়ার্স ফার্মা