বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে স্কুলের পাঠ্যসূচিতে যোগ হচ্ছে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য শিক্ষা
বাংলাদেশে গত দুই দশকের মধ্যে বর্তমানে বাল্যবিয়ের হার সবচেয়ে বেশি। এ পরিস্থিতিতে মাধ্যমিক স্কুলের পাঠ্যসূচিতে যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য বিষয়ক শিক্ষা দেওয়ার নির্দেশনা দিয়েছে শিক্ষা বিভাগ।
আইনানুযায়ী, দেশে নারী-পুরুষের বিয়ের সর্বনিম্ন বয়স ১৮ ও ২১ বছর। কিন্তু বাংলাদেশের বাল্যবিয়ের হার দক্ষিণ এশিয়ায় সর্বোচ্চ। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের তথ্য অনুযায়ী, ১৭ কোটির জনসংখ্যার এ দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৮ বছরের আগে। এরমধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ নারীর বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের আগে।
কোভিড-১৯ মহামারির প্রকোপ শুরু হওয়ার পর লকডাউনে বাল্যবিয়ের এ সমস্যা ভয়াবহভাবে বেড়ে যায়।
প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন ডিসেম্বরে ঘোষণা দেন, বাল্যবিয়ে রোধে স্কুল কারিকুলামে এ বিষয় তুলে ধরতে উদ্যোগ নিয়েছে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়।
এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব নাজমা শেখ আরব নিউজকে বলেন, "নতুন কারিকুলামের রিভিশন চলছে। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে এটি বাস্তবায়ন করা হবে,"
জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ঊর্ধ্বতন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সৈয়দ মাহফুজ আলী বলেন, বাল্যবিয়ে, বয়ঃসন্ধিকালে স্বাস্থ্য সুরক্ষা, মানসিক স্বাস্থ্য এসব বিষয়ে সচেতনতা তৈরি করতে এটি বাধ্যতামূলক পাঠ্যসূচির অন্তর্ভুক্ত করা হবে।
প্রাথমিকভাবে ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণীর শিক্ষার্থীদের বিষয়টি পড়ানো হবে। পরবর্তীতে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদেরও পড়ানো হতে পারে।
অধ্যাপক মাহফুজ আলী আরও বলেন, "বর্তমান পরিস্থিতি অনুযায়ী বাল্যবিয়ের বিষয়টি আমাদের পঞ্চম শ্রেণির কারিকুলামেই রাখা উচিত,"
২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে বাল্যবিয়ে মুক্ত করার অঙ্গীকার নিয়েছে সরকার।
দারিদ্র্যের সঙ্গে বাল্যবিয়ে ওতপ্রোতভাবে জড়িত, মেয়েদের শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ ও নারী শিক্ষার হারের ওপর এর প্রভাব পড়ে। গত সেপ্টেম্বর মাসে পুনরায় স্কুল-কলেজ খুলে দেওয়ার পর দেখা যায়, অসংখ্য মেয়ে শিক্ষার্থী আর স্কুলে আসছে না।
মহামারির সময় দেশে বাল্যবিয়ের পূর্ণাঙ্গ তথ্য নেই এখনো। তবে, ইউনিসেফের ২০১৯ সালের তথ্য অনুযায়ী, ১৫.৫ শতাংশের বেশি বাংলাদেশি মেয়েদের বিয়ে হয়েছে ১৫ বছরের কম বয়সে। ব্র্যাকের অনুমান, বর্তমানে এ হার ১৩ শতাংশ বেঁড়ে গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
"বাল্যবিয়ে বন্ধ আমাদের প্রধান অগ্রাধিকার। এই লক্ষ্য অর্জনে আমরা সবকিছুই করবো," বলেন অধ্যাপক মাহফুজ।
দেশের দক্ষিনাঞ্চলের বরগুনা, বরিশাল, পটুয়াখালী জেলায় তিন বছরের 'জেনারেশন ব্রেকথ্রু (জিবি)' প্রকল্প চালানো হয়েছে। এসব জেলায় বাল্যবিয়ের হার সর্বোচ্চ।
অধ্যাপক মাহফুজ জানান, এসব এলাকায় বাল্যবিয়ে কমাতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে জিবি প্রকল্প। ২০২৩ সাল থেকে পাঠ্যবইয়ে এ কর্মসূচি যুক্ত করা হবে।
তিনি আরও জানান, বাস্তব জীবনে শিক্ষার উপযোগিতা বাড়াতে পাঠ্যসূচিকে ঢেলে সাজানো হচ্ছে।
"প্রজনন স্বাস্থ্য সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে পড়ানো হবে। বছরের পর বছর ধরে সামাজিক ট্যাবুর কারণে এসব বিষয় নিয়ে কথা হয়না,"
নতুন এ পাঠ্যসূচিতে পাঠদান শুরুর এক বছর আগে ছোট ছোট উদ্যোগের মাধ্যমে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছে এনসিটিবি।
"নারী-শিশু নির্যাতন সংক্রান্ত যে কোনো সমস্যায় শিক্ষার্থীরা যাতে সাহায্য চাইতে পারে, নতুন বছরের সব পাঠ্যবইয়ের পেছনে দুটি ইমার্জেন্সি টোল ফ্রি নাম্বার- ৩৩৩ ও ১০৯ ছাপা হয়েছে,"
"আগামী বছর থেকে একটি জাতীয় জরুরি হটলাইন নাম্বার চালু করার পরিকল্পনা আছে, যাতে শিক্ষার্থীরা ফোন দিয়ে বাল্যবিয়ের বিষয়ে সাহায্য চাইতে পারে," বলেন তিনি।
সূত্র: আরব নিউজ