বেইজিং উইন্টার অলিম্পিক কেন বিতর্কিত?
আসছে ফেব্রুয়ারিতেই অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা বেইজিং উইন্টার অলিম্পিক এবং প্যারালিম্পিক। কিন্তু চীনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের প্রতিবাদে এরই মধ্যে চীনকে কূটনৈতিকভাবে বয়কটের সিদ্ধান্ত নিয়েছে একাধিক দেশ; অর্থাৎ শীতকালীন অলিম্পিকে যোগ দিচ্ছেন না সেসব দেশের শীর্ষ নেতারা।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, অলিম্পিক গেমস কিভাবে এতটা বিতর্কিত হয়ে উঠলো? কিন্তু তার আগে জানতে হবে অলিম্পিক গেমসের আসর ঠিক কত বড় এবং এর গুরুত্ব কতখানি।
অলিম্পিক আসর এবং চীনের আয়োজন
বেইজিং উইন্টার অলিম্পিকের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত, যেখানে বিশ্বের ১০৯টি দেশের ৩০০০ অ্যাথলেট অংশ নিবেন। তাই বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেওয়া যায় যে অলিম্পিকই 'গ্রেটেস্ট শো অন দ্য আর্থ'!
অন্যদিকে শীতকালীন প্যারালিম্পিক চলবে ৪ মার্চ থেকে ১৩ মার্চ পর্যন্ত। এখানে মোট ৭৮টি ইভেন্টে অংশ নিবেন ৭৩৬ জন প্রতিযোগী। তবে কার্লিং বা এ ধরনের কিছু ইভেন্ট মূল পর্বের কয়েকদিন আগেই শুরু হয়ে যাবে।
জানা গেছে, বেইজিং অলিম্পিককে কেন্দ্র করে ৩ দশমিক ৯ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে যাচ্ছে চীন সরকার এবং দেশটির বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান।
শুধু তাই নয়, বিশেষ কিছু অঞ্চলে প্রতিযোগিতার ভেন্যুগুলোতে ১ দশমিক ২ মিলিয়ন কিউবিক মিটার কৃত্রিম তুষারপাতের ব্যবস্থা করবে আয়োজ়কেরা। কিন্তু এই উদ্যোগ পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারে বলে সমালোচনার মুখে পড়েছে চীন।
করোনা মহামারির কারণে প্রতিযোগী এবং কর্মকর্তাদের সুরক্ষিত রাখা হবে এবং দর্শকদের জন্য কোনো টিকিট বিক্রি করা হবে না.
কারা বয়কট করছে অলিম্পিক?
বেইজিং অলিম্পিকের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক বয়কটের ডাক দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, লিথুয়ানিয়া ও কসোভো। উল্লিখিত দেশগুলো তাদের অ্যাথলেটদের পাঠালেও অলিম্পিক আসরে যোগ দিবেন না শীর্ষ কোনো কর্মকর্তা বা মন্ত্রী।
যুক্তরাষ্ট্রের ভাষ্যে, "শিনজিয়াং প্রদেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন ও মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর নৃশংসতার প্রতিবাদে' এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। ব্রিটিশ এমপি ও ইন্টার-পার্লামেন্টারি এলায়েন্স অন চায়না'র প্রতিনিধি ডানকান স্মিথ বলেছেন, "চীনা সরকার উইঘুর অঞ্চল ও তিব্বতে চরম মানবতাবিরোধী কর্মকান্ড চালিয়েছে এবং তাইওয়ানের আকাশসীমায় সামরিক অনুপ্রবেশ করেছে। চীনের এই স্বৈরাচারী শাসনকে আমরা বৈধতা দিতে পারি না।"
এদিকে জাপান পুরোপুরি কূটনৈতিক বয়কট না করলেও, বেইজিং অলিম্পিকে নিজেদের কোনো মন্ত্রী না পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। প্রতিবেশী দেশের এমন সিদ্ধান্তে দুই দেশের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনা বৃদ্ধি পেয়েছে।
অলিম্পিকের বিষয়ে মাঝামাঝি অবস্থানে থাকার চেষ্টা করছে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন।
কিন্তু চীনকে বয়কট করতে রাজি নন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল মাঁখো। মাখো বলেন, আমার মনে হয়না এ ধরনের ইস্যুকে রাজনীতিকরণ করার প্রয়োজ়ন আছে। বিশেষ করে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার মানেই হয়না যা কিনা ক্ষুদ্র এবং প্রতীকী।"
বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিক বয়কট বাদেও বিশ্বব্যাপী মানবাধিকার কর্মীরা চীনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন।
চীনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো কি কি?
চীনের শিনজিয়াং প্রদেশে উইঘুর মুসলিম সংখ্যালঘুদের উপর গণহত্যা ও নৃশংসতা চালানোর অভিযোগ উঠেছে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলোর বিশ্বাস, গত কয়েক বছরে এক মিলিয়নেরও বেশি উইঘুরকে 'রি-এডুকেশন ক্যাম্প' নামক ডিটেনশন ক্যাম্পে আটকে রেখেছে চীনা সরকার।
এছাড়া উইঘুরদের জোরপূর্বক শ্রমে বাধ্য করা এবং উইঘুর নারীদের বন্ধ্যাত্বকরণের অভিযোগও রয়েছে। ক্যাম্পের বেশকিছু উইঘুর জানিয়েছেন ক্যাম্পে থাকাকালীন তাদের শারীরিকভাবে অত্যাচার ও যৌন হয়রানি করা হয়।
'হংকং জাতীয় নিরাপত্তা আইন'-এর নামে হংকং এর স্বাধীনতা খর্ব করায়ও বেইজিংয়ের দিকে আঙুল তুলেছেন রাজনীতিবিদরা।
এদিকে অলিম্পিক গেমসকে বয়কট করার কারণ হিসেবে জার্মান মন্ত্রীরা জানিয়েছেন, তারা টেনিস চ্যাম্পিয়ন পেং শুয়াইয়ের প্রতি চীনের নিপীড়ণের প্রতিবাদে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চীনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট ঝ্যাং গাওলির বিরুদ্ধে যৌন নিপীড়ণের অভিযোগ আনার পর গত তিন সপ্তাহ ধরে লোকচক্ষুর অন্তরালে আছেন এই টেনিস তারকা।
চীনের বক্তব্য কি?
ইতোমধ্যেই টেনিস খেলোয়াড় পেং শুয়াইয়ের যৌন নিপীড়ণের অভিযোগকে অস্বীকার করেছে চীনা সরকার।
শিনজিয়াংইয়ে উইঘুরদের উপর নির্যাতনের কথাও বারবার অস্বীকার করে যাচ্ছে চীন। শুধু তাই নয়, চীনের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ করলে এর ফল ভালো হবে না বলে যুক্তরাষ্ট্র ও জার্মানিকে হুমকি দিয়েছে তারা। বিশেষত, যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক বয়কটের বিরুদ্ধে বেশ জোরেশোরেই প্রতিবাদ জানিয়েছে চীন। চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, "যুক্তরাষ্ট্র এই বয়কটের মাধ্যমে অলিম্পিকের চেতনা নষ্ট করেছে এবং এর জন্য মূল্য দিতে হবে।"
সূত্র: বিবিসি