‘ওয়ার্ডল’: ৫ অক্ষরের শব্দ বানানোর যে গেম বিশ্বব্যাপী ঝড় তুলেছে
ব্রুকলিনের সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জশ ওয়ার্ডল। শব্দ বানানোর ওয়ার্ড গেম খেলতে ভালোবাসেন জশের প্রেমিকা পলক শাহ। আর তাই প্রেমিকার জন্য তিনি নতুন এক শব্দখেলার উদ্ভাবন করেন। নিজের শেষ নাম অনুসারে খেলার নাম রাখেন ওয়ার্ডল।
শুরুতে শুধু দুজন মিলেই খেলতেন। কিন্তু কয়েক মাস খেলার পর রীতিমতো আসক্তিতে পড়ে যান। ততদিনে পরিবারের অন্য সদস্যদেরও এই খেলার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন। পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে চলতে থাকে এই খেলা।
জশের তখন মনে হয় এই জিনিস তাহলে অন্যদের সামনেও তুলে ধরা উচিত। অবশেষে গত অক্টোবরে তিনি গেমটি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করেন।
পয়লা নভেম্বর ৯০ জন মানুষ গেমটি খেলে।
গত রোববার পর্যন্ত মাত্র দুই মাসের মাথায় প্লেয়ার সংখ্যা পৌঁছেছে তিন লাখে।
দিনে মাত্র একবারই খেলা যায় এই গেম। এরকম একটি গেমের রাতারাতি জনপ্রিয় হয়ে ওঠা অবাক হওয়ার মতোই।
খেলাটি অনেকটা রঙ অনুমান করার গেম মাস্টারমাইন্ডের অনুকরণে নির্মিত। খেলার শুরুতে পাঁচ অক্ষরের একটি শব্দ অনুমান করতে হবে। শব্দটি অজানা মূল শব্দের সাথে না মিললেও ব্যবহৃত অক্ষর থেকে পাওয়া যাবে সংকেত।
সঠিক বাক্সে সঠিক অক্ষরটি থাকলেই অক্ষরের রঙ সবুজ হবে। সঠিক কোনো অক্ষর ভুল জায়গায় থাকলে তার রঙ হবে হালকা সবুজ। যেসব অক্ষর মূল শব্দে একেবারেই নেই সেগুলো হবে ধূসর। এভাবে ছয়বারের চেষ্টায় সঠিক শব্দটি অনুমান করতে হবে।
জশ ওয়ার্ডলের বানানো এই খেলাটি খুবই সাদামাটা। ইন্টারনেট দুনিয়ায় সচরাচর জনপ্রিয় কোনো ওয়েবসাইট এত সাধারণ হতে দেখা যায় না। কোনো রঙিন ব্যানার নেই, নেই কোনো বিজ্ঞাপন। কেউ এসে হুট করে টাকা কিংবা চ্যাট করতে চাইবে না। কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে সাদামাটা একটি গেম ওয়ার্ডল।
এক সাক্ষাৎকারে জশ ওয়ার্ডল বলেন, "আমার মনে হয় অনলাইনে একটা জিনিস স্রেফ মজার জন্য আছে দেখেই মানুষ খেলাটি পছন্দ করছে। আপনার ফোন বা কম্পিউটারের ডেটা কিংবা আপনার চোখ নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু করবে না এই গেম। এটা শুধু মজা করার একটি খেলা।"
তবে এটাই রেডিটের সাবেক এই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জশ ইয়ার্ডলির প্রথম কোনো জনপ্রিয় প্রজেক্ট নয়। এর আগে রেডিটে দ্য বাটন এবং প্লেস নামে দুটি সোশাল এক্সপেরিমেন্টাল ফিচার নিয়ে কাজ করে সাড়া ফেলেন জশ।
তবে ওয়ার্ডল বানাতে কোনো প্রকৌশলি দল কাজ করেনি। মহামারির মাঝে সময় কাটাতে জশ এবং তার প্রেমিকা পলক গেমটি খেলতে শুরু করেন।
এর আগে ২০১৩ সালে একই ধাঁচের একটি গেম নির্মাণ করলেও বন্ধুরা তা পছন্দ না করাই সেই আইডিয়া ঝেড়ে ফেলেন। ২০২০ সালে জশ এবং পলক দুজনেই নিউ ইয়র্ক টাইমসের স্পেলিং বি এবং ডেইলি ক্রসওয়ার্ড খেলা নিয়ে মেতে উঠেন। জশ বলেন, "আমি এমন একটি গেম বানাতে চেয়েছিলাম যা খেলে ও সত্যিই খুব আনন্দ পাবে।"
কিন্তু দিনে মাত্র একবার কেন এই গেম খেলা যাবে? জশ বলেন স্পেলিং বি থেকেই তিনি খেলার সুযোগ সীমিত রাখার সিদ্ধান্ত নেন। দিনে একবার খেলা যাবে এই সীমাবদ্ধতার কারণেই মানুষ অধীর আগ্রহে পরের দিন খেলার জন্য অপেক্ষা করে।
বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয়তার কারণে গেমটির পর্তুগিজ, তুর্কিশ এবং তামিল সংস্করণও আসছে।
সূত্র: নিউ ইয়র্ক টাইমস