মিতু হত্যা: এক ঘটনায় দুই মামলার চুড়ান্ত প্রতিবেদন, আইনি জটিলতার শঙ্কা
সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার অভিযোগে স্বামী ও বাবার দায়ের করা দুটি মামলাতেই চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। কিন্তু এক ঘটনায় একাধিক মামলা দায়েরের নজির না থাকায় এ নিয়ে আইনি জটিলতার শঙ্কা করেছেন আইনজীবিরা।
তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা এ বিষয়ে উচ্চ পর্যায়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষার কথা বলছেন।
মঙ্গলবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেলে মাহমুদ খানম মিতু হত্যায় তার বাবা মোশাররফ হোসেনের দায়ের করা মামলার (দ্বিতীয় মামলা) চূড়ান্ত প্রতিবেদন চট্টগ্রাম আদালতে জমা দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক।
এ ঘটনায় প্রথম মামলাটি করেছিলেন মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার। গত বছরের ১২ মে আদালতে সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিল। সেই প্রতিবেদনে হত্যাকাণ্ডের জন্য বাদী বাবুলের সম্পৃক্ততা পাওয়ার কথা জানানো হয়।
তদন্ত কর্মকর্তা ও পিবিআই পরিদর্শক আবু জাফর মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, "মিতু খুনের ঘটনায় দু'টি মামলা আছে। এর মধ্যে তার স্বামী বাবুল আক্তার যে মামলা করেছেন, সেটির চূড়ান্ত প্রতিবেদন আমরা আগে জমা দিয়েছিলাম। কিন্তু আদালত সেটি গ্রহণ না করে অধিকতর তদন্তের জন্য বলেছেন।"
"একই ঘটনায় দুই মামলা নিয়ে আদালত পর্যবেক্ষণও দিয়েছেন। আমরা সেই পর্যবেক্ষণ মেনে দ্বিতীয় মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছি। তবে দ্বিতীয় মামলার ডকেট প্রথম মামলার সঙ্গে সংযুক্ত করে তদন্তের জন্য আদালতের অনুমতি প্রার্থনা করেছি," যোগ করেন তিনি।
পিবিআই চেয়েছিল তার দায়ের করা মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে মোশাররফের দায়ের করা মামলাটির তদন্ত এগিয়ে নিতে। কিন্তু, বাবুল আক্তারের মামলায় পিবিআইয়ের দাখিল করা চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রত্যাখান করে অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেয় আদালত।
একইসঙ্গে দু'টি মামলা নিয়ে 'টেকনিক্যাল ত্রুটি' উল্লেখ করে পর্যবেক্ষণও দেয় আদালত।
ফলে একই ঘটনায় দুই মামলার তদন্ত সমান্তরালে এগিয়ে নেওয়া নিয়ে বিপাকে পড়ে পিবিআই। এ অবস্থায় আদালতের পর্যবেক্ষণ মেনে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করেছে সংস্থাটি। তবে মোশাররফের মামলায় চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হলে আইনি জটিলতা তৈরি হবে বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ্য আইনজীবীরা।
পিবিআই পুলিশ সুপার (চট্টগ্রাম মহানগর) কাজী নাঈমা সুলতানা বলেন, "মিতু হত্যার ঘটনায় আমরা বর্তমানে দু'টি মামলা তদন্ত করছি। প্রথম মামলার তদন্তকে আদালতের পর্যবেক্ষণে সফল তদন্ত বলা হয়েছে। ওই মামলায় গুরুত্বপূর্ণ আলামত জব্দ আছে এবং ১৬৪ ধারায় কিছু জবানবন্দিও নেওয়া আছে, যেগুলো মামলার জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সেজন্য আমরা প্রথম মামলাকে অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে অধিকতর তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছি।"
"দ্বিতীয় মামলাটি আমরা আদালতের পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী এবং আমাদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন দিয়েছি। আমরা এমই (সাক্ষ্যস্মারক) ঢাকায় পাঠিয়েছি।"
তবে বাবুল আক্তারের আইনজীবী শেখ ইফতেখার সাইমুল চৌধুরীর দাবি, মিতু হত্যাকাণ্ডে দুইটি মামলা দায়েরের মাধ্যমে আইনের ব্যত্যয় ঘটেছে।
তিনি বলেন, "একটি মামলার তদন্ত চলমান থাকা অবস্থায় সেই তদন্তের সূত্র ধরে আরেকটি মামলা দায়েরের মধ্য দিয়ে আইনি জটিলতা তৈরি হয়েছে। বিচারের পর্যায়ে আমরা অবশ্যই এসব ত্রুটি-বিচ্যুতি আদালতের কাছে উপস্থাপন করবো।"
ফৌজদারি আইন বিশেষজ্ঞ প্রবীণ আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, "দ্বিতীয় মামলা অর্থাৎ মোশাররফ হোসেনের মামলায় যদি চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয়, তাহলে জটিলতা তৈরি হবে। কারণ ওই মামলায় অনেক সাক্ষীর জবানবন্দি এরই মধ্যে নেওয়া হয়েছে। আসামিরও জবানবন্দি আছে।"
তবে বাদী পক্ষের আইনজীবি আইনজীবী আহসানুল হক হেনা বলেন, "দ্বিতীয় মামলায় অনেক গুলো ১৬৪ ধারার জবানবন্দি আছে। এ অবস্থায় যদি দুটি মামলাকে এ্যামালগিমেইড করে একটি করা হয় তাহলেই আইনী জটিলতা এড়ানো সম্ভব।"
পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার কাজী নাঈমা সুলতানা বলেন, "আইনি জটিলতা এড়ানোর জন্য আমরা আইনজ্ঞদের পরামর্শ নিচ্ছি। এক্ষেত্রে মোশাররফ হোসেনের মামলায় যেসব ১৬৪ ধারার জবানবন্দি নেওয়া হয়েছিল, সেগুলো প্রথম মামলায় ব্যবহার করা যাবে। কারণ এখানে ঘটনা একটি। আশা করছি, জটিলতা হবে না।"
এদিকে স্ত্রী মাহমুদা খানম হত্যার অভিযোগে নিজের দায়ের করা মামলায় সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছে আদালত।
মঙ্গলবার দুপুরে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মুহাম্মদ আবদুল হালিম জামিন আবেদনের শুনানি শেষে এই আদেশ দেন।