চিনিকলগুলো বন্ধ থাকায় হিলি স্থলবন্দর দিয়ে বেড়েছে চিটাগুড়ের আমদানি
আগে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিটাগুড় রপ্তানি হলেও এখন চিত্র পুরোটাই পাল্টে গিয়েছে। বর্তমানে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করা হচ্ছে। দেশের সুগার মিলগুলো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় চিটাগুড়ের সংকট দেখা দেওয়ার কারণে ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করা হচ্ছে। যার কারণে হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পূর্বের তুলনায় চিটাগুড়ের আমদানি অনেকটা বেড়েছে। এদিকে বন্দর দিয়ে চিটাগুড়ের আমদানি বাড়ায় সরকারের রাজস্ব আহরণ অনেকটা বেড়েছে।
পাবনা থেকে হিলি স্থলবন্দরে চিটাগুড় নিতে আসা পাইকার রফিকুল ইসলাম বলেন, "বাংলাদেশে চিটাগুড়ের যে চাহিদা কিন্তু সেই তুলনায় সুগার মিলগুলোতে এখন চিটাগুড়ের তেমন উৎপাদন নেই। যার কারণে আমাদের ডেইরি ফার্মে আগে যেভাবে চিটাগুড়ের সরবরাহ ছিল সেই সরবরাহে অনেকটা বিঘ্ন ঘটছে। সেই সাথে দামও আগের তুলনায় বেড়েছে তারপরেও চাহিদামত পাওয়া যাচ্ছে না।আমরা শুনেছি হিলি স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি হচ্ছে যার কারণে ফার্মের চিটাগুড়ের সেই চাহিদা মেটাতে আমরা হিলি স্থলবন্দরে এসেছি চিটাগুড় কিনতে।"
ভারত থেকে চিটাগুড় নিয়ে আসা ভারতীয় ট্রাকচালক শান মোহাম্মদ বলেন, "ভারতের পাঞ্জাব প্রদেশ থেকে প্রায় ১ হাজার ৭৫০ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে চিটাগুড় নিয়ে বাংলাদেশে এসেছি। ভারত থেকে বাংলাদেশে আসতে ৫ থেকে ৬ দিন পর্যন্ত সময় লাগে আমাদের। এরপর বন্দরে চিটাগুড় খালি করে আবার ভারতে চলে যায়।"
হিলি স্থলবন্দরে চিটাগুড় নিতে আসা ট্রাকচালক আল আমিন হোসেন বলেন, "আমাদের জয়পুরহাটের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান ভারত থেকে এসব চিটাগুড় আমদানি করছেন। যার কারণে আমি জয়পুরহাট থেকে হিলি স্থলবন্দরে চিটাগুড় লোড করতে এসেছি। এখান থেকে এসব চিটাগুড় লোড করে নিয়ে রাজশাহী, খুলনা বরিশাল, ময়মনসিংহ, ভালুকা, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা, চট্টগ্রাম, ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ডেইরি ফার্ম ও ফিড মিলগুলোতে এসব সরবরাহ করা হয়ে থাকে। এগুলো দিয়ে সাধারণত গরুর খাবার তৈরি করে থাকে। গো-খাদ্যের পাশাপাশি ফিড মিলগুলোয় গবাদি পশু, হাঁস-মুরগী ও মাছের খাদ্য তৈরীতে ব্যবহার হয়ে থাকে চিটাগুড়।"
চিটাগুড় আমদানিকারক আনোয়ারুল হক বলেন, গত ১৯৮৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত চিটাগুড় বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হতো। এর মধ্যে বেশীরভাগ চিটাগুড় আমিই রপ্তানি করতাম। এছাড়া আরো দুয়েকজন ছিল যারা কম পরিমাণে রপ্তানি করতেন। আমাদের দেশীয় যে সুগার মিলগুলো রয়েছে সেখানে চিটাগুড়ের উৎপাদন কমে যাওয়ায় ২০১৫ সালের পর থেকে চিটাগুড় আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে রপ্তানি হচ্ছে না। গত ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে অবস্থিত ১৪টি সুগার মিলের মধ্যে লোকেশনের কারণে ৭টি সুগারমিল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। যার কারণে আগে দেশে যে পরিমাণ চিটাগুড় উৎপাদন হতো এখন সেই পরিমাণ কমে গেছে। যা ছিল তার চেয়ে অর্ধেকে নেমেছে চিটাগুড়ের উৎপাদন। অপরদিকে গত ৫/৭ বছরের মধ্যে দেশে চিটাগুড়ের ব্যবহার ব্যাপকহারে বাড়ছে। এর মধ্যে বিশেষ করে ডেইরি শিল্পে সবচেয়ে বেশি চিটাগুড়ের চাহিদা বেড়েছে। যেখানে বছরে এই শিল্পে চিটাগুড়ের চাহিদা রয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টন। অথচ দেশে যে কয়টি সুগারমিল চালু রয়েছে সেখানে চিটাগুড়ের উৎপাদন সক্ষমতা ২০ হাজার টনের মতো, এখন হয়তো সেই পরিমাণ আরো কমেছে। এছাড়া অন্যান্য বিভিন্ন প্রজেক্টে চিটাগুড়ের বহুবিধ ব্যবহার রয়েছে যার কারণে দেশে দিন দিন চিটাগুড়ের চাহিদা বাড়ছে। দেশের বাজারে চিটাগুড়ের সেই চাহিদা মেটাতে বর্তমানে ভারত থেকে চিটাগুড় আমদানি করা হচ্ছে।"
হিলি স্থল শুল্ক স্টেশনের রাজস্ব কর্মকর্তা এসএম নুরুল আলম খান জানান, হিলি স্থলবন্দর দিয়ে পূর্বে বাংলাদেশ থেকে ভারতে চিটাগুড় রপ্তানি হলেও বর্তমানে ভারত থেকে বাংলাদেশে চিটাগুড় আমদানি হচ্ছে। চলতি অর্থবছরের গত জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে ১২ হাজার ৭২১ মেট্রিকটন চিটাগুড় আমদানি হয়েছে। যা থেকে সরকারের রাজস্ব আহরণ হয়েছে ৩ কোটি ৮ লাখ টাকা। প্রতি টন চিটাগুড় এর আমদানি শুল্ক ৩ হাজার ৮০০ টাকা। এই স্থলবন্দর দিয়ে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ৪ থেকে ৫ ট্রাক করে চিটাগুড় আমদানি হয়।