চালকদের কর্মবিরতি প্রত্যাহার, ট্রেন চলাচলের ঘোষণা
কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেছে রেলওয়ের রানিং স্টাফরা। রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা পুনর্বহালের জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে, রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের এমন আশ্বাসে কর্মসূচি প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়েছে রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ। ফলে দেশের রেল যোগাযোগ পূর্বের মতো স্বাভাবিক হচ্ছে।
রোববার বিকাল থেকে রাজধানীর রেল ভবনে রেল সচিব ড. মো. হুমায়ুন কবীরের সঙ্গে শ্রমিক নেতাদের কয়েক ঘণ্টার আলোচনা শেষে এমন ঘোষণা আসে।
আলোচনা সভার সিদ্ধান্ত জানিয়ে রেল সচিব স্বাক্ষরিত এক বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়, পেনশন ও আনুতোষিক সুবিধা পূর্বের ন্যায় প্রাপ্তির লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রেলপথ মন্ত্রণালয় ও বাংলাদেশ রেলওয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি স্বল্প সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তির উদ্যোগ নেওয়া হবে। গত বছরের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের আদেশের আগে অবসরে যাওয়া রানিং স্টাফরা পূর্বের নিয়মে পেনশন ও আনুতোষিক প্রাপ্যতা নিষ্পত্তির লক্ষ্যে সুপারিশ করা হবে। সর্বসম্মতিক্রমে রানিং স্টাফদের ঘোষিত কর্মসূচি প্রত্যাহারপূর্বক সুষ্ঠু ট্রেন পরিচালনা অব্যাহত থাকবে।
কর্মসূচি প্রত্যাহারের বিষয়টি নিশ্চত করেছেন রেলওয়ে রানিং স্টাফ ও শ্রমিক কর্মচারী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক মুজিবুর রহমান।
এর আগে গত ২৫ জানুয়ারি থেকে রেলের দেড়শ বছরের পুরাতন মাইলেজ সুবিধা পুর্নবহালের দাবিতে ৮ ঘণ্টার অতিরিক্ত ডিউটি না পালনের কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন রানিং স্টাফরা। ফলে গত ৫ দিনে দেড় শতাধিক যাত্রীবাহী ও পণ্যবাহী ট্রেনের যাত্রা বাতিল করতে হয়েছিল রেল কর্তৃপক্ষকে। সোমবার থেকে পূর্ণ কর্মবিরতিতে যাওয়ার কথা ছিল তাদের। ফলে দেশের ট্রেন যোগাযোগ স্থবির হওয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছিল।
গত বছরের ৩ নভেম্বর অর্থ মন্ত্রণালয়ের এক আদেশে রেলওয়ের রানিং স্টাফদের ১০০ মাইলের বেশি অথবা ৮ ঘণ্টার অধিক সময় দায়িত্ব পালনের জন্য দৈনিক মূল বেতনের ৭৫ শতাংশের বেশি রানিং ভাতা প্রদান বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়। দায়িত্ব পালন করলেও মাইলেজ ভাতা ৩০ কর্মদিবস অর্থাৎ ৩০০০ মাইলের বেশি বিবেচনা করা হবে না। অবসরের পর রানিং স্টাফদের পেনশন ও আনুতোষিক হিসাবের ক্ষেত্রেও মূল বেতনের সঙ্গে ৭৫ শতাংশের বেশি যুক্ত করার বিষয়ে অসম্মতি জানানো হয় ওই আদেশে।
উল্লেখ্য, রেলের পরিবহন বিভাগের রানিং স্টাফদের মধ্যে যথাক্রমে লোকোমাস্টার (এলএম), সহকারী লোকোমাস্টার (এএলএম) ও সাব লোকোমাস্টার বা শান্টিং লোকোমাস্টার (এসএলএম), ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্ট, গার্ড, টিকিট ট্রেকার (টিটি) রয়েছেন। অর্থ মন্ত্রণালয়ের নতুন প্রজ্ঞাপনে ক্যারেজ অ্যাটেনডেন্টদেরও মাইলেজ সুবিধায় আনা হয়েছে।
জানা গেছে, রেলওয়েতে ট্রেন চালক থাকার কথা ১ হাজার ৭৮৬ জন। কিন্তু চালক রয়েছে মাত্র ১ হাজার ১৭ জন। এ কারণে ট্রেন চালানোর পর টানা বিশ্রাম না করেও আবার কাজে যোগ দিতে হয় লোকোমাস্টারদের।
রেলওয়ের নিয়ামানুযায়ী, স্বাভাবিকভাবে রানিং স্টাফদের ৮ ঘণ্টা অথবা চলন্ত ট্রেনে ১০০ কিলোমিটার ডিউটি পালন করতে হয়। ১৯৯৮ সাল থেকে ট্রেন চালকসহ (লোকো মাস্টার) রানিং স্টাফরা অতিরিক্ত প্রতি ৮ ঘণ্টা ডিউটির জন্য একদিনের মূল বেতনের সম পরিমাণ মাইলেজ ভাতা পেয়ে থাকতেন। হেডকোয়ার্টারে (নিয়োগকৃত স্টেশন) নির্ধারিত ডিউটির পর টানা ১২ ঘণ্টা বিশ্রামের সুযোগ পেয়ে থাকেন রানিং স্টাফরা। আর হেডকোয়ার্টারের বাইরে অন্য স্টেশনে এই বিশ্রামের সময় পান টানা ৮ ঘণ্টা। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে রানিং স্টাফদের ডিউটি করতে বাধ্য করা যায় না। তবে বিশ্রামের সময়ে অর্থাৎ আন্ডাররেস্টে ডিউটিতে যোগ দিলে অতিরিক্ত ৫০ শতাংশ মাইলেজ ভাতা (একদিনের মূল বেতনের অর্ধেক) পেয়ে থাকতেন এতোদিন। এছাড়া ডিউটির সময়ের কর্মঘণ্টাও যুক্ত হতো ওভারটাইমে