জনপ্রিয় শব্দ বানানোর গেম ওয়ার্ডলের মালিক এখন নিউ ইয়র্ক টাইমস
বিশ্বজুড়ে অভাবনীয় ঝড় তোলা পাঁচ অক্ষরের শব্দ বানানোর গেম ওয়ার্ডলের মালিকানা এখন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষস্থানীয় সংবাদপত্র প্রকাশক গোষ্ঠী দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমসের দখলে।
ওয়ার্রডলকে নিজেদের করে নিতে ঠিক কী পরিমাণ অর্থ তারা ব্যয় করেছে, তা খোলাসা করেনি টাইমস। তবে এটুকু ইঙ্গিত তারা দিয়েছে যে ওয়ার্ডলের মালিকানা পেতে তাদের খরচ হয়েছে সাত অঙ্ক। অর্থাৎ, অন্তত এক মিলিয়ন ডলার।
বিনামূল্যে, খুব সহজেই খেলা যায় ওয়ার্ডল। গেমটির নির্মাতা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার জশ ওয়ার্ডল। গেল অক্টোবরে রিলিজের পর থেকে ইতোমধ্যেই লক্ষ লক্ষ খেলোয়াড় বুঁদ হয়ে রয়েছে মাথা খাটিয়ে শব্দ খোঁজার এই গেমে।
শোনা গেছে, জশের প্রেমিকা পলক শাহ নাকি ভালোবাসেন এ ধরনের ওয়ার্ড গেম খেলতে। তার জন্যই নিজের নামে নাম দেওয়া এই গেমটি বানিয়েছিলেন জশ। শুরুতে খেলতেন কেবল তারা দুজনই। এরপর পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও খেলতে শুরু করেন পারিবারিক হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। আর এখন তো গেমটির দুর্দান্ত জনপ্রিয়তার আঁচ পড়েছে আমাদের বাংলাদেশেও।
জশ জানান, গেমটির এমন সাফল্য তার জন্য "কিছুটা অভিভূত হওয়ার মতো ব্যাপার" হয়েই দেখা দিয়েছে। নিউ ইয়র্ক টাইমসের সঙ্গে নতুন চুক্তির ঘোষণা দিতে পেরেও তিনি যারপরনাই আনন্দিত।
গেমটির নতুন মালিকপক্ষ জানিয়েছে, প্রথমদিকে বরাবরের মতো ফ্রিতেই খেলা যাবে ওয়ার্ডল।
দিনে একবারই খেলা যায় এই গেম। গেমটি প্রত্যেক খেলোয়াড়কে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয় সর্বোচ্চ ছয়বার অনুমানের ভেতরই একটি পাঁচ অক্ষরের শব্দ খুঁজে বের করার।
প্রতিদিন নতুন একটি করে পাজল প্রকাশিত হয়। খেলোয়াড়রা চাইলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করে সবাইকে জানাতে পারে যে কত দ্রুত তারা রঙিন গ্রিডটির সমাধান করেছে। অবশ্য ওই পোস্টের মাধ্যমে কোনোভাবেই অন্যদের পক্ষে বোঝা সম্ভব হয় না, সেদিনের পাজলের উত্তরটি আসলে কী। জশের মতে, এমন বৈচিত্র্যময় কনসেপ্টের কারণেই বহু মানুষের মনে জায়গা করে নিয়েছে গেমটি।
ওয়ার্ডল ছাড়াও নিউ ইয়র্ক টাইমস বর্তমানে আরও বেশ কিছু গেমের মালিক। এক বিবৃতিতে তারা জানিয়েছে, "টাইমসের মূল ফোকাস হলো একটি জরুরি সাবস্ক্রিপশন হয়ে ওঠা প্রত্যেক ইংরেজিভাষী ব্যক্তির জন্য, যারা বিশ্বটাকে বুঝতে চায় এবং বিশ্বের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করতে চায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস গেমস সেই লক্ষ্যেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।"
তারা আরও জানায়, "আমাদের গেমগুলো ইতোমধ্যেই প্রতিদিন অরিজিনাল, হাই কোয়ালিটি কনটেন্ট উপহার দিচ্ছে। ওয়ার্ডলও এখন সেই নিত্যদিনের অভিজ্ঞতার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠবে।"
ওয়ার্ডলের উৎপত্তির পেছনে নিউ ইয়র্ক টাইমস গেমসের বিশেষ অবদান রয়েছে বলেও জানান জশ। তিনি বলেন, মহামারি চলাকালীন তিনি বড় একটা সময় কাটিয়েছেন নিউ ইয়র্ক টাইমস ক্রসওয়ার্ড ও স্পেলিং গেমগুলো খেলে। তাই এবার তার নিজের তৈরি গেমও নিউ ইয়র্ক টাইমস গেমসের অংশে পরিণত হওয়াকে তার কাছে মনে হচ্ছে একটি "খুবই স্বাভাবিক পদক্ষেপ"।
ওয়ার্ডলই জশের তৈরি প্রথম গেম নয়। তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম রেডিটের জন্যও গেম বানান। জানুয়ারি মাসে বিবিসি'র টুডে অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ওয়ার্ডলের প্রোটোটাইপ তিনি সেই ২০১৩ সালেই তৈরি করেছিলেন। কিন্তু তখন তার বন্ধুরা গেমটির ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ দেখায়নি।
"গত বছর, আমি ও আমার প্রেমিকা ক্রসওয়ার্ড ও ওয়ার্ড গেমগুলোতে বুঁদ হয়ে যাই। আমি চেয়েছিলাম এমন একটি গেম তৈরি করতে, রোজকার রুটিনের অংশ হিসেবে আমরা যেটি খেলতে পারব প্রতিদিন সকালে।"
সে সময় জশ এ কথাও বলেছিলেন যে ওয়ার্ডলের মাধ্যমে তিনি টাকা কামাতে চান না। "আমি জানি না কেন কোনোকিছু কেবল আনন্দের জন্যই করা যাবে না। এই গেমের বিনিময়ে আমার লোকের কাছ থেকে টাকা নেওয়ার প্রয়োজন নেই, এবং আমি ব্যাপারটিকে সেরকমই রাখতে চাইব।"
সূত্র: বিবিসি