ঢাকার বাইরেও সম্প্রসারিত হবে মেট্রো রেল
রাজধানী ঢাকার বাইরেও মেট্রো রেল সেবা সম্প্রসারিত করতে চায় সরকার, এরমধ্যে আছে ঢাকা জেলার পার্শ্ববর্তী কিছু শহর ও উপশহর। নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর জেলার কিছু পয়েন্ট অগ্রাধিকার তালিকায় আছে, ধীরে ধীরে নরসিংদী, মুন্সিগঞ্জ ও মানিকগঞ্জ জেলার সঙ্গেও সংযোগ স্থাপন করা হবে।
সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের অধীনে ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষ (ডিটিসিএ) এবং ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেড (ডিএমটিসিএল) এসব এলাকায় মেট্রোর রুট বসানোর পরিকল্পনা চূড়ান্ত করার কাজ করছে।
এশিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) ও জাপান ফান্ড ফর পোভার্টি রিডাকশনের (জেএফপিআর) সহায়তায় সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনা (আরএসটিপি) হালনাগাদ করার প্রকল্প বাস্তবায়ন শুরু করেছে ডিটিসিএ।
ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ২০৩০ সালের মধ্যে ১২৯.৯০ কিলোমিটার মেট্রো রেল নির্মাণের গতিপথ চূড়ান্ত হয়ে আছে। এর মধ্যে কমলাপুর থেকে নারায়নগঞ্জ পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৪ প্রকল্পটিও রয়েছে।
তিনি বলেন, প্রথম ধাপের কাজ শেষ হলেই গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভারের বাইপাইল, নারায়নগঞ্জের রূপগঞ্জ ও বড়পা, কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল পর্যন্ত মেট্রো রেল নির্মানের কাজ শুরু হবে। এর ফলে মেট্রো রেলের দৈর্ঘ্য আড়াইশ কিলোমিটার ছাড়িয়ে যাবে। তবে কোন লাইনটি কোন গন্তব্যে যাবে তা চূড়ান্ত হবে আরএসটিপি হালনাগাদ হওয়ার পর।
মহানগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত পর্যন্ত একাধিক মেট্রো রেল নির্মাণের মাধ্যমে যানযট কমাতে মেট্রো রেলের মতো প্রকল্পে বিশাল বিনিয়োগের যৌক্তিকতা নিয়ে বরাবরই প্রশ্ন রয়েছে পরিবহন বিশেষজ্ঞ ও নগর পরিকল্পনাবিদদের।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. শামসুল হক দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, পরিকল্পিত ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ছোট বিনিয়োগের মাধ্যমেই রাজধানীর যানজট নিরসন করা যায়। রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণ, ছোট শহর ও পল্লী এলাকায় থাকতে লোকজনকে উৎসাহ দিতে মেট্রো রেলের মতো প্রকল্প নেওয়া উচিত।
এমএএন সিদ্দিক বলেন, মেট্রো রেল সম্প্রসারণের মূল লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে ঢাকা মহানগরীতে যানজটের পরিমাণ কমিয়ে আনা।
পরবর্তীতে দ্বিতীয় ও তৃতীয় ধাপে ঢাকার আশেপাশের জেলাগুলোর বিভিন্ন এলাকা মেট্রো রেলের আওতায় আনা হবে। এর ফলে ঢাকা শহরের ওপর জনগণের চাপ কমে আসবে।
"বিভিন্ন সুযোগ সুবিধা এখন বিভিন্ন এলাকার জনগনকে ঢাকা শহরের দিকে টানছে। এ সব এলাকায় মেট্রো রেল হলে তা প্রভাবক হিসেবে কাজ করবে। তখন আশেপাশের জেলার মানুষ সেখান থেকেই প্রতিদিন ঢাকায় যাতায়াত করতে পারবে," যোগ করেন তিনি।
২০৩০ সালের মধ্যে মোট ১২৯.৯০ কিলোমিটার মেট্রো রেল নির্মানের পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে ডিএমটিসিএল। নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে সব লাইনের দৈর্ঘ্য দাড়াবে ২২০ কিলোমিটারে। এ সব লাইনের মাধ্যমে প্রতিদিন ৭৫ লাখ যাত্রী পারাপর করা যাবে। বর্তমান পরিকল্পনায় যাত্রী পরিবহণ করা যাবে প্রায় ৪৮ লাখ।
এমআরটি লাইন-৬ যাবে গাজীপুর
সংশ্লিষ্টদের তথ্যমতে, উত্তরা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত প্রথম মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।
২০১৫ সালে প্রণয়ন করা কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (এস্টিপি) এ লাইনটি ঢাকা টাঙ্গাইল মহাসড়কের বাইপাইল পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা ছিল।
একইভাবে হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর-১০, কচুক্ষেত বনানী হয়ে ভাটারা পর্যন্ত নির্মানাধীন এমআরটি লাইন-৫ (উত্তর) প্রকল্পটিও বাইপাইল পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। এ অবস্থায় এমআরটি লাইন-৬ এর আওতায় আশুলিয়া পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখার পরিকল্পনা চূড়ান্ত হয় ২০১৬ সালে প্রক্রিয়া করা সংশোধিত কৌশলগত পরিবহন পরিকল্পনায় (আরএসটিপি)।
অন্য দিকে বিমানবন্দর থেকে কমলাপুর পর্যন্ত মেট্রো লাইনটি গাজীপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের পরিকল্পনা থাকলেও একই লাইনে বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় এ পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছে সরকার।
এ অবস্থায় হালনাগাদ পরিকল্পনায় এমআরটি লাইন-৬ প্রকল্পটি গাজীপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণের প্রস্তাব রাখা হবে বলে জানান এমএএন সিদ্দিক। এর ফলে ২১.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের লাইনটি উন্নীত হবে ৪১.৮ কিলোমিটারে। আর দৈনিক যাত্রী পরিবহণের সক্ষমতা ৪.৮৩ লাখ থেকে বেড়ে দাড়াবে ১৮.১৭ লাখে।
অন্যদিকে, ২০১৯ সালে প্রকল্প অনুমোদনের পর হেমায়েতপুর থেকে মিরপুর-১০, হয়ে ভাটারা পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মেট্রো রেল নির্মাণের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী বছর। এ লাইনটি পশ্চিম দিকে বাইপাইল পর্যন্ত আর পূর্ব দিকে রূপগঞ্জ হয়ে ঢাকা সিলেট মহাসড়কের ভূলতা পর্যন্ত সম্প্রসারণ করা হবে। এর মাধ্যমে লাইনটির দৈর্ঘ্য হবে প্রায় ৬০ কিলোমিটার।