শেষ সময়ে টিকা নিতে মানুষের ঢল
রাজধানীর ওয়াপদা রোডে ফার্নিচারের দোকানে কাজ করেন মোহাম্মদ সাগর (১৯)। ৬দিন আগে ভ্যাকসিন নেয়ার জন্য রেজিস্ট্রেশন করে শনিবার রাজধানীর মহানগর প্রজেক্টের মহানগর জামে মসজিদের অস্থায়ী ভ্যাকসিন সেন্টারে ভ্যাকসিন নিয়েছেন তিনি।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে মোহাম্মদ সাগর বলেন, "২৬ তারিখের পর টাকা দিয়ে ভ্যাকসিন নিতে হবে শুনেছেন তিনি। তাই সকাল দশটা থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বেলা দুইটার সময় ভ্যাকসিন পেয়েছেন। মসজিদের ভিতরে দুইটা বুথে একটিতে নারী ও আরেকটিতে পুরুষদের ভ্যাকসিন দেয়া হচ্ছে।"
ভ্যাকসিন সেন্টার দূরে হওয়ায় এতোদিন ভ্যাকসিন নেননি মহানগর প্রজেক্টে গৃহকর্মীর কাজ করা মজিদা বেগম (৪৫)। বাসার কাছে ভ্যাকসিন সেন্টারে ভ্যাকসিন দেওয়া হবে শুনে শনিবার সকাল নয়টায় লাইনে দাঁড়িয়েছেন। তবে দুপুর দুইটার পরও ভ্যাকসিন পাননি তিনি।
তিনিও জানান , শনিবার ভ্যাকসিন না নিলে আর ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে না তাই সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন।
শনিবার দুপুর দুইটার দিকে মহানগর জামে মসজিদ সেন্টারের সামনে ভ্যাকসিন নিতে আসা নারী ও পুরুষের দীর্ঘ লাইন দেখতে পাওয়া যায়। একেকবারে দশজন করে কেন্দ্রের ভেতরে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে। প্রবেশের পর প্রথমে একটি বুথে টিকা নিতে ব্যক্তির নাম, বয়স ও মোবাইল নম্বর লিখে রাখা হচ্ছে। একই তথ্য একটি কার্ডে লিখে দেওয়া হচ্ছে। কার্ডটি নিয়ে পাশের বুথে গেলে দেওয়া হচ্ছে করোনার টিকা। ২৭ মার্চ একই কেন্দ্রে এসে টিকা নিতে বলা হচ্ছে।
শুধু মহানগর জামে মসজিদ নয়, ঢাকা মেডিকেল কলেজসহ দেশের সব ভ্যাকসিন সেন্টারে ছিল ভ্যাকসিন গ্রহীতাদের উপচেপড়া ভিড়। যারা এতদিন টিকা নিতে পারেননি, এমন হাজার হাজার মানুষ শনিবার সকাল থেকে ভিড় করছেন দেশের বিভিন্ন টিকাদান কেন্দ্রে।
প্রথমে ২৬ ফেব্রুয়ারি ধরা হলেও পরে সরকার ২৮ ফেব্রুয়ারি তারিখের মধ্যে প্রথম ডোজ টিকাদান শেষ করার লক্ষ্যের কথা ঘোষণা দেয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের (ডিজিএইচএস) অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক মীরজাদি সেব্রিনা ফ্লোরা জানান, "শেষদিনে টিকা কেন্দ্রগুলোতে প্রচণ্ড ভিড়ের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।"
মহানগর জামে মসজিদের টিকাকেন্দ্রের দায়িত্বরত হাতিরঝিল থানার সাব-ইন্সপেক্টর আরিফুল রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এর আগের ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্পেইনে এত ভিড় ছিল না তাই আমরা মুভমেন্টের ওপর ছিলাম। কিন্তু এখন প্রথম ডোজ নেয়ার শেষ সময় এবং রেজিস্ট্রেশন ছাড়াই দেওয়া হচ্ছে তাই ভিড় বেশি। বিশৃঙ্খলা এড়াতে প্রতিটি কেন্দ্রে তিন থেকে চারজন পুলিশ থাকছে।"
সিটি করপোরেশন থেকে ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত অস্থায়ী টিকাদান কেন্দ্রের পাশাপাশি সারাদেশে মোট ৩০ হাজার টিকাদান বুথ স্থাপন করা হয়েছে। প্রায় ১ লাখ ৪৫ হাজার স্বাস্থ্যকর্মী এসব বুথ ও কেন্দ্রে কাজ করছেন।
ধারণার চেয়ে বেশি মানুষ ভ্যাকসিন নিতে এসেছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
কর্তৃপক্ষের ধারণার চেয়েও বেশি মানুষ গণ টিকাদান কার্যক্রমে টিকা নিতে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।
জাহিদ মালেক বলেন, "সারাদেশে এক কোটি টিকা দেওয়ার কার্যক্রম শুরু করেছি। শান্তিপূর্ণভাবে টিকাদান চলছে। বিপুল সংখ্যক মানুষ টিকাকেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। আমাদের ধারণার বাইরে বেশি লোক টিকা নিতে এসেছে। আমরা এক কোটি টিকা দেওয়ার টার্গেট নিয়েছিলাম, তবে আমাদের ধারণা এক কোটি ছাড়িয়ে যাবে।"
শনিবার বিকেলে কোভিড-১৯ গণ টিকাদান পরবর্তী করণীয় বিষয়ক ভার্চুয়াল মিটিংয়ে এসব কথা বলেন তিনি।
"পর্যাপ্ত টিকা মজুদ আছে। টিকার কোন কমতি নেই। ফার্স্ট, সেকেন্ড ও বুস্টার ডোজ বজায় থাকবে," বলেন তিনি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জানান, টিকা দেওয়ার সংখ্যার দিকে বাংলাদেশ পৃথিবীর দুইশোটি দেশের মধ্যে ১০ নম্বরে রয়েছে।
"টিকাদানে আমাদের পিছনে রাশিয়া, ফ্রান্স, জার্মানির মত বড় বড় দেশ রয়েছে। এ পর্যন্ত ১১ কোটি প্রথম ডোজ দিয়েছি। এবার আরও এক কোটি দেওয়া হলে ১২ কোটি প্রথম ডোজ দেওয়া হবে," যোগ করেন তিনি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দেওয়ার নির্দেশনা ছাড়িয়ে যাবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
"এছাড়া আমাদের দেশের টার্গেটেড পপুলেশনের ৯৫% বেশি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে।"
স্বাস্থ্য সচিব লোকমান হোসেন মিয়া বলেন, "ভ্যাকসিন নিতে মানুষের বাঁধভাঙ্গা উল্লাস ছিলো। আমাদের ক্যাম্পেইন সফল হয়েছে। দু'দিন বাড়ানো হয়েছে।"
দেশে করোনার ভ্যাকসিন দেওয়া শুরু হয় গত বছরের ৭ ফেব্রুয়ারি। এরপর থেকে গত শুক্রবার (২৫ ফেব্রুয়ারি) পর্যন্ত করোনার প্রথম ডোজ টিকা পেয়েছেন ১২ কোটি ৮২ লাখের বেশি মানুষ। আর এখন পর্যন্ত দ্বিতীয় ডোজ টিকা পেয়েছেন ৮ কোটি ১৯ লাখের বেশি মানুষ। আর বুস্টার ডোজ পেয়েছেন ৩৫ লাখের বেশি মানুষ।