ইউক্রেন যুদ্ধ: পশ্চিমা গণমাধ্যমে বর্ণবাদী প্রচারণার নিন্দা জানালেন আরব সাংবাদিকরা
পশ্চিমা গণমাধ্যমে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে প্রচারিত সংবাদ বর্ণবাদী বলে নিন্দা জানিয়েছে আরব ও মধ্যপ্রাচ্যের সাংবাদিক সংগঠন এএমইজিএ'র সাংবাদিকরা।
সংবাদ মাধ্যমগুলোকে যুদ্ধ বিষয়ক সংবাদ প্রচারের ক্ষেত্রে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে আরও সতর্ক হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
ইউক্রেনে রাশিয়ার আক্রমণ বিষয়ক সংবাদ পরিবেশনের সময় সিবিএস, টেলিগ্রাফ, আল-জাজিরার মতো খ্যাতনামা নিউজ আউটলেটগুলো বর্ণবাদী সংবাদ প্রচার করছে জানিয়ে রোববার সংগঠনটি একটি বিবৃতি প্রকাশ করে।
এএমইজিএ'র প্রেস বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি সিবিএস নিউজের এক পর্যায়ে প্রতিবেদক শার্লি ডি'অগাতা ইউক্রেন সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বলেন, "সম্মানের সঙ্গেই বলছি যে এটা ইরাক কিংবা আফগানিস্তানের মতো কোনো জায়গা নয়, যেখানে কয়েক দশক ধরে সংঘাত চলছে। ইউক্রেন অপেক্ষাকৃত সভ্য, অপেক্ষাকৃত ইউরোপীয় একটি অঞ্চল। আমি বেশ ভেবেচিন্তেই শব্দগুলো বলছি। এটা এমন অঞ্চল যেখানে আপনি এসব বিষয় ঘটতে পারে বলে আপনি আশা করেন না।"
টেলিগ্রাফে ড্যানিয়েল হানান লিখেছেন, "তারা দেখতে যেন আমাদের মতোই। আর এ জায়গাতেই সবচেয়ে বড় ধাক্কা লাগে। যুদ্ধ এখন এমন কোন বিষয় নয়- যা দূরের কোনো দারিদ্র্যপীড়িত জনগোষ্ঠীকে আঘাত হানবে। যে কেউ এর কবলে পড়তে পারে।"
আল-জাজিরা ইংরেজির উপস্থাপক পিটার ডোবি বলেন, "তাদেরকে দেখতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী বলে মনে হবে না। এরা উত্তর আফ্রিকার বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও পালানোর চেষ্টা করছে না। এরা দেখতে আপনার পাশের বাসায় থাকা যেকোনো ইউরোপীয় পরিবারের মতোই।"
বিএফএম টিভির প্রতিবেদক ফিলিপ করবে বলেন, "আমরা সিরিয়ার ওপর পুতিনের হামলায় পালাতে থাকা সিরিয়ানদের কথা বলছি না। আমরা ইউরোপীয়দের কথা বলছি যারা দেখতে আমাদের মতোই। প্রাণ বাঁচাতে তারা গাড়িতে করে দেশ ছাড়ছে।"
এএমইজিএ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, এই ধরনের মন্তব্যগুলো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা, দক্ষিণ এশিয়া ও লাতিন আমেরিকার মতো দেশের পরিস্থিতিকে স্বাভাবিক হিসেবে প্রচার করছে। বিষয়টি প্রচণ্ড অমানবিক। যুদ্ধ নিয়ে মধ্যপ্রাচ্যের অভিজ্ঞতাকে তারা স্বাভাবিক এবং প্রত্যাশিত বিষয় হিসেবে তুলে ধরছে।
সমালোচনার মুখে আল-জাজিরার গণসংযোগ বিভাগ টুইটারে ইউক্রেনের যুদ্ধের সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যে যুদ্ধের তুলনা করার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেছে।
বর্ণবাদী ও ইউরোপকেন্দ্রীক প্রতিবেদনের জন্য বিবিসিও সমালোচনার সম্মুখীন হয়েছে। বিবিসিতে ইউক্রেনের ডেপুটি চিফ প্রসিকিউটর ডেভিড স্যাকভেয়ারলিজের বক্তব্য তুলে ধরা হয়। সেখানে তিনি বলেন, সোনালী চুলের, নীল চোখের ইউক্রেনীয়দের মৃত্যু তাকে ব্যথিত করছে।
বিবিসিতে স্যাকভেয়ারলিজের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন রস অ্যাটকিনস। তিনি টুইটারে বলেন , "এক্ষেত্রে আমার যে প্রশ্নটি করার ছিল- তা আমি করতে পারিনি। যারা বিষয়টি তুলে ধরেছেন তাদের ধন্যবাদ। আপনারা সঠিক কাজটিই করেছেন।"
এএমইজিএ তাদের বিবৃতিতে আরও জানায় যে, "আমেরিকান বা ইউরোপবাদী পক্ষাপাতদুষ্টতা থেকে বেরিয়ে এসে নিউজ রুমগুলোর উচিত সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে প্রতিবেদন করার আগে প্রতিবেদকদের সেসব বিষয়ে সূক্ষ্মভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া।"
যুক্তরাজ্যের অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার ক্রিশ্চিয়ান বেনেডিক্ট দ্য নিউ আরবকে বলেন, "ইউক্রেনীয় সংকটের একটি দুর্ভাগ্যজনক দিক অগোচরেই থেকে যাচ্ছে। এরকম একটি সময়ে যারা সশস্ত্র এই সংঘাত থেকে পালিয়ে বাঁচার চেষ্টা করছে, তাদের ঘিরে বিভিন্ন অমানবিক মন্তব্য সামনে আসছে।"
"সবাই নিরাপত্তার জন্য নিজের ঘর ছাড়তে বাধ্য হচ্ছে। তারা যেখান থেকেই আসুক না কেন, সবাই সংহতি, সমর্থন ও সম্মানের দাবীদার।"
গেল সপ্তাহের বৃহস্পতিবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) ইউক্রেনে রাশিয়া আক্রমণ করার পর- এপর্যন্ত দেশটির কয়েক লাখ মানুষ ঘর ছেড়েছেন।
- সূত্র: দ্য নিউ আরব