রপ্তানি কমায় মহাদুর্যোগের দিকে এগিয়ে চলছে ভোজ্যতেলের দাম
ইউক্রেন যুদ্ধের ফলে কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেলের ৬০ শতাংশ রপ্তানি গন্তব্যে আসতে দেরির মুখে পড়ছে। দুঃসংবাদ আছে পাম ও সয়াবিন তেল নিয়েও। সব মিলিয়ে ভোজ্যতেলের বাজার এগিয়ে চলেছে এক মহাদুর্যোগের দিকে, এমন মন্তব্য করেছেন বৈশ্বিক কৃষি বাজার পরামর্শক সংস্থা এলএমসি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যান জেমস ফ্রাই।
সামনেই আসন্ন সূর্যমুখী ও ভুট্টা বপণের সময়, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেন ও রাশিয়ায় এবার তা কম পরিসরে হবে এমন আশঙ্কার কথাও জানান তিনি।
অথচ মাত্র এক মাস আগেই কোম্পানিটি কৃষ্ণসাগর অঞ্চল থেকে সূর্যমুখী তেল রপ্তানি আগের বছরের সাড়ে ১৩ লাখ টন থেকে বেড়ে ২০২১-২২ বাজারবর্ষে ২০ লাখ টনের বেশি হওয়ার প্রত্যাশা করেছিল। প্রত্যাশিত এই বাড়তি রপ্তানির কতটুকু এবার যুদ্ধের কারণে হতে পারবে না- সে প্রশ্নও রেখেছেন ফ্রাই।
"ভোজ্যতেলের মজুদ ও সরবরাহ দুইই পড়তির দিকে। এ বাস্তবতায় চড়া মূল্য চাহিদাকে কমিয়ে বাজারে আবার ভারসাম্য ফেরাবে অসহায়ের মতো এমন আশাই করতে হচ্ছে।"
তিনি ধারণা করছেন, বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাম তেল উৎপাদনকারী মালয়েশিয়ার স্থানীয় বাজারে জুলাই পর্যন্ত অপরিশোধিত পাম তেলের দর টনপ্রতি ৬,৬০০ রিঙ্গিত (১,৫৭৮ মার্কিন ডলার) থেকে বেড়ে ৮,১০০ রিঙ্গিতে লেনদেন হবে। একথার মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাজারে আরও আগুন দামের ইঙ্গিত দেন ফ্রাই।
উল্লেখ্য, বুধবার (৯ মার্চ) নাগাদ কুয়ালামাপুরে পাম তেলের প্রধান সূচকগুলোয় টনপ্রতি ৬,৮২৩ রিঙ্গিতে পর্যন্ত পাম তেলের স্টক লেনদেন হয়েছে।
অভিজ্ঞ এ কৃষিবাজার বিশ্লেষক জানান, দক্ষিণপূর্ব এশিয়া থেকে পাম তেলের চালান চলতি বাজারবর্ষের তৃতীয় প্রান্তিকের আগে ২০২০ সালের মাত্রা ছাড়াবে না। এর আগে গত সোমবার তিনি এক আভাসে জানিয়েছিলেন, শ্রমিক সংকটের কারণে এবছর মালয়েশিয়ায় উৎপাদন মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ বাড়বে। তবে ভোজ্যতেলের বাজারে আসল দুর্যোগ নামবে আগামী ছয় মাসের মধ্যেই।
২০২১-২২ বাজারবর্ষে রপ্তানিকারক দেশগুলোয় শক্তিশালী চাহিদা থাকায়; আমদানিকারক দেশে সয়াবিন তেলের সরবরাহও কমবে।
চলতি বাজারবর্ষে সয়াবিন ভাঙানো এক কোটি ৬০ লাখ টন থেকে কমে ৪৫ লাখ টন হওয়ার আভাস আগেই দেওয়া হয়েছিল। তার ওপর এখন নতুন করে সরবরাহ কমার দুঃসংবাদ এলো।
ফ্রাই বলছেন, ভোজ্যতেলের মতো অতি-দরকারি ভোক্তাপণ্যের দামের চাপে মূল্যস্ফীতি হবে অসহনীয়, কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোকে শেষমেষ তাদের সুদহার বৃদ্ধি করতে হবে। খাদ্য ও জ্বালানির চাহিদাও কমাতে হবে।
পাম তেলের অন্যতম রপ্তানিকারক ইন্দোনেশিয়া যদি রপ্তানি সীমা শিথিল করে অথবা বায়োডিজেলে পাম তেল ব্যবহারের লক্ষ্যমাত্রা কর্তন করে তাহলে স্বল্প-মেয়াদে চাপ কিছুটা কমবে। তবে এমন পদক্ষেপ আদৌ জাকার্তা নেবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন জেমস ফ্রাই।
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি চাহিদা আছে পাম তেলের। ধীরে ধীরে সরবরাহ বাড়লে এবং বছরের দ্বিতীয়ার্ধে চাহিদা কমলে- দাম কিছুটা কমার আশা রয়েছে।
- সূত্র: ব্লুমবার্গ