কোভিডকালে অনলাইনমুখী ব্যবসার প্রসার ও জালিয়াতি, সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৩ শতাংশ
কোভিডকালে অনলাইনমুখী ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক প্রসারের সুযোগ নিয়েছে সুযোগসন্ধানী অপরাধী চক্র। এ সময়ে অধিক পরিমাণ জালিয়াতির কারণে ২০২০-২১ অর্থবছরে ব্যাংক এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটকে (বিএফআইইউ) রেকর্ড ৫,২৮০টি সন্দেহজনক লেনদেন এবং কার্যকলাপের প্রতিবেদন পাঠিয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে সন্দেহজনক লেনদেন বেড়েছে ৪৩ শতাংশ। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) মানি লন্ডারিং প্রতিরোধে গঠিত কেন্দ্রীয় সংস্থাটির বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ পেয়েছে।
সংস্থাটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর অবস্থানের ভূমিকার কথাও উল্লেখ করেছে।
মঙ্গলবার সাংবাদিকদের সঙ্গে বিএফআইইউ এর এক মতবিনিময় সভায় এই বার্ষিক রিপোর্ট তুলে ধরেন সংস্থাটির ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার কামাল হোসেন। তার মতে, এই প্রবণতা আসলে ইতিবাচক কারণ, এই হার বৃদ্ধি অর্থপাচার ও সন্ত্রাসে অর্থায়ন প্রতিরোধে ব্যাংক এবং অন্যান্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর দৃঢ় প্রতিশ্রুতিই নির্দেশ করে।
এদিকে বিএফআইইউ-এর প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, সন্দেহজনক লেনদেন রিপোর্টিং (এসটিআর) এবং সন্দেহজনক কার্যক্রম রিপোর্টিংয়ের (এসএআর) অধিক পরিমাণ বৃদ্ধির কারণ এই নয় যে, দেশে টাকা পাচারের পরিমাণ বেড়েছে। এটা বরং এ সংস্থার আরও সক্রিয় ভূমিকার প্রমাণ।
তিনি বলেন, "এটি একটি ভাল লক্ষণ যে সংশ্লিষ্ট ব্যাংক এবং অন্যান্য রিপোর্টিং এজেন্সিগুলো অর্থ পাচার এবং সন্ত্রাসী অর্থায়নের বিরুদ্ধে সন্দেহজনক লেনদেন এবং কার্যকলাপের দিকে বেশি মনোযোগ দিয়েছে।"
"মহামারিকালীন সময়ে, ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম এবং ই-কমার্স খাতে বাংলাদেশ উল্লেখযোগ্য প্রসার ঘটিয়েছে। একই সময়ে অজস্র অর্থ আত্মসাৎ এবং আর্থিক জালিয়াতির অভিযোগও উঠে এসেছে। মানি লন্ডারিংয়ে তাদের সম্পৃক্ততা যাচাই করতে এ সংস্থা সফলভাবে কিছু কোম্পানির আর্থিক লেনদেন গভীরভাবে বিশ্লেষণ করেছে", যোগ করেন তিনি।
সংস্থাটি গত বছর বিভিন্ন সরকারি সংস্থাকে ১,৪১৪টি ঘটনার আর্থিক তথ্য দিয়েছে – যা পূর্বের চেয়ে ৮০ শতাংশ বেশি। আগের অর্থবছর এ সংখ্যা ছিল ৭৮৭টি।
স্বাস্থ্য খাতে কেলেঙ্কারি
২০২০-২১ অর্থবছরে সংস্থাটি বিভিন্ন তদন্ত এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার কাছে সন্দেহজনক লেনদেন এবং কার্যকলাপের ৭৩টি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। বিপরীতে আগের বছর এ সংখ্যা ছিল ১১৬। সংস্থার মতে, অফিসের টাইম কমায় গত বছর প্রতিবেদন প্রকাশের সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে।
সবচেয়ে বেশি প্রতিবেদন করা হয়েছে জালিয়াতির কারণে। স্বাস্থ্য খাতের প্রতারণা ও দুর্নীতির জন্য ২১টি প্রতিবেদন করা হয়েছে। এছাড়া ঘুষ লেনদেন জাতীয় প্রতারণায় ১৬টি প্রতিবেদন করা হয়।
তালিকা আছে, কিন্তু প্রকাশ সম্ভব নয়: বিএফআইইউ প্রধান
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক প্রতিবেদনে প্রকাশিত অর্থ পাচারকারীদের তথ্য সম্পর্কে জানতে চাইলে বিএফআইইউ প্রধান মাসুদ বিশ্বাস বলেন, সে তথ্য পরিপূর্ণ নয়।
"আমাদের কাছে অর্থ পাচারকারীদের সম্পর্কে সম্পূর্ণ তথ্য রয়েছে, তবে তা প্রকাশ করা যাচ্ছে না", মন্তব্য করেন তিনি।
মতবিনিময় সভায় সংস্থাটির শীর্ষ কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির তার লিখিত বক্তৃতায় প্রতিবেদনটির প্রশংসা করেন এবং বলেন, বিএফআইইউ ই-কমার্স জালিয়াতি মোকাবিলায় যথেষ্ট সতর্ক।