সবজি ডোনেট বক্স: কেনার সামর্থ্য না থাকলে ফ্রিতে নিয়ে যান
সবজির দোকানে টানানো ফেস্টুনে লেখা "যাদের সামর্থ্য আছে, তারা ডোনেট বক্সে সবজি রাখবেন। আর যাদের সবজি কেনার টাকা নেই, তারা ডোনেট বক্স থেকে সবজি নিতে পারেন।" দোকানের বাইরে রাখা প্লাস্টিকের ক্যারেট বক্সে ক্রেতারা সাধ্যমতো সবজি রেখে যাচ্ছেন। আর সামর্থ্যহীনরা নিচ্ছেন প্রয়োজনমতো।
চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার মদুনাঘাট বাজারে মাত্র ১৫ স্কয়ার ফুটের একটি সবজি দোকানে এমন চিত্রের দেখা মেলে, যেখানে প্রতিদিন ৮-১০ কেজি সবজি জমা হয়। আর বিনামূল্যে ১০-১৫ জন দরিদ্র মানুষ সবজি নেন রান্নার জন্য। গত তিনদিন ধরে চলছে এমন কার্যক্রম। মানুষের নজরও কেড়েছে উদ্যোগটি।
সবজির দোকানী মো. হারুন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "এলাকার কয়েকজন যুবক মিলে এই বক্স বসিয়ে দিয়েছেন। আমার পরিচালনা করি। ক্রেতারা দেখে উৎসাহিত হন। তারা কেনা সবজির কিছু অংশ এখানে দিয়ে যান। আর দরিদ্র মানুষ বা ভিক্ষুক সহায়তা নেন। এটি পরিচালনা করতে আমারও ভালো লাগে। মানুষও ভালোভাবে নিয়েছেন।"
সবজির এই ডোনেট বক্সের উদ্যোগ শুরু মুসাইদাহ নামে একটি সংগঠনের হাত ধরে। সংগঠনটির উদ্যোক্তা মো. আবু হাসান ও ব্যবসায়ী কায়সার আলম চৌধুরী চট্টগ্রাম এবং রাঙামাটির ৮টি স্থানে সবজির ডোনেট বক্স বসিয়েছেন। গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম নগরীর খুলশী থানার শাহ গরীবুল্লাহ হাউজিং সোসাইটির কাঁচাবাজারে প্রথম ডোনেট বক্স স্থাপন করা হয়। সাড়া পেলে ধাপে ধাপে নগরীর চকবাজার, পূর্ব বাকলিয়া, কামাল বাজার, মোহরা, রাঙামাটির ভেদভেদী, হাটহাজারীর মদুনাঘাট ও নজুমিয়া হাটেও চালু করা হয়।
উদ্যোক্তা মো. আবু হাসান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "দুটি ঘটনা থেকে এমন উদ্যোগের বিষয়টি মাথায় আসে। হযরত উসমান (রা) রুটির ঝুড়ি প্রথা চালু করেছিলেন। সার্মথ্যবান মানুষ একটি রুটি কিনলে একজন দুস্থ্ মানুষের জন্য আরেকটি রুটি ঝুড়িতে রেখে যেতেন। এছাড়া ছোট বেলায় দেখতাম, ভাত রান্নার চাল থেকে প্রতি বেলায় মা একমুঠ চাল আলাদা করে রাখতেন গরীবদের জন্য। এই চিন্তা থেকে মাথায় আসে। সবজির দোকানে একজন ক্রেতা যদি দুটো বেগুনও ডোনেট বক্সে রাখেন, তবে দুজন মানুষের এক বেলার তরকারির যোগান হয়।"
"আমরা ফেস্টুন করে দিচ্ছি। প্লাস্টিকের ক্যারেট বক্স করে দিচ্ছি। সবজির প্রয়োজন হলে সবজিও দিচ্ছি। মানুষ এখন খারাপ সময় পার করছেন। তাই আমরা একে অপরের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। আগামী সপ্তাহে কুমিল্লায় আরো দুটি ডোনেট বক্স বসবে," যোগ করেন তিনি।
তবে দোকানে ডোনেট বক্স স্থাপনের শুরুটি খুব সহজ ছিল না বলেন জানিয়েছেন সংগঠনের আরেকজন স্বেচ্ছাসেবী মদুনাঘাটের বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম টিটু। তিনি বলেন, "ত বৃহস্পতিবার মদুনাঘাট কাঁচাবাজারে ডোনেট বক্সটি স্থাপন করতে পারি। এর আগে পাঁচ দিন ধরে প্রচেষ্টা চলছিল। এই বক্স অবশ্যই সবজির দোকানের পাশে হতে হবে। কিন্তু কোন দোকানি রাজী হচ্ছিলেন না। পরে বাজারের মোজাম্মেল ক্রোকারিজের মালিক তার দোকানের সামনের একটু জায়গায় ডোনেট বক্স বসানোর অনুমতি দিয়েছেন। তিনিই সবজির দোকানিকে দেখাশোনা করতে বলে দেন। সবজির দোকানিও আন্তরিক।"
তিনি আরো বলেন, "প্রথম দিন ৩০০ টাকার সবজি কিনে দিয়েছিলাম ডোনেট বক্সে। এরপর আর কিনে দিতে হয়নি। মানুষজনই উৎসাহী হয়ে ডোনেট বক্সে সবজি দিয়ে যাচ্ছেন। আর যাদের প্রয়োজন হচ্ছে, তারা নিয়ে যাচ্ছেন রান্নার জন্য। দোকানিকে বলা আছে, যদি ডোনেট বক্সে সবজি না থাকে, তবে তিনি যেন কিছু কিছু রেখে দেন। আমরা হিসেব করে সবজির দাম দিয়ে দেব।"
শনিবার (১৯ মার্চ) বিকালে ওই দোকান থেকে সবজি ক্রয়ের সময় স্থানীয় বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন কিছু অংশ ডোনেট বক্সে রাখছিলেন। তিনি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উদ্যোগটি সুন্দর। দুজন মানুষও যদি উপকৃত হয়, তাতে মন্দ কী!"