মেট্রো রেলের যাত্রী পরিবহনে ৩২০টি বাস কিনছে বিআরটিসি
মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাঁও অংশে মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহনে ৩২০টি শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত বাস কিনতে যাচ্ছে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সংস্থা বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশন (বিআরটিসি)।
আগামী ডিসেম্বরে চালু হচ্ছে মেট্রোরেলের উত্তরা থেকে আগারগাও অংশ বা এমআরটি লাইন ৬।
এ ব্যপারে বিআরটিসি'র চেয়ারম্যান মো. তাজুল ইসলাম বলেন, "মেট্রোরেলের যাত্রী পরিবহনে বিআরটিসি পুরোপুরি প্রস্তুত।" এছাড়া, কিছুদিনের ঢাকা ম্যাস ট্রানজিট কোম্পানি লিমিটেডের (ডিএমটিসিএল) সঙ্গে একটি চুক্তি সাক্ষরিত হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, "যাত্রীদের কাছে বিআরটিসি বাসের চাহিদা প্রতিদিনই বাড়ছে। সেই চাহিদা মেটানো ও পাশাপাশি এরসাথে আরামদায়ক সেবা দেওয়ার উদ্দেশ্যে নতুন ৩২০টি এসি বাস কেনা হচ্ছে। সব ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা থাকবে বাসগুলোতে।"
তিনি জানান, কোরিয়ান এক্সিম ব্যাংকের ঋণে এই বাসগুলো কেনা হবে। কোরিয়ার একটি টিম গত একমাস যাবত সম্ভাব্যতা যাচাই পরীক্ষা করছে।
"সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী তারা সন্তুষ্ট। দ্রুতই হয়ত ঋণের ব্যপারে কোন চুক্তি হবে," বলেন তাজুল ইসলাম।
তবে বাসগুলো কিনতে কতো খরচ হবে সে সম্পর্কে নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি বিআরটিসি চেয়ারম্যান। বিভিন্ন সূত্রের দেওয়া তথ্যে জানা গেছে, ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশসহ ৩২০টি বাসের মোট ব্যয় ৬০০ কোটি টাকার মত হতে পারে।
নতুন কেনা বাসগুলো স্থায়িত্ব যাতে বৃদ্ধি পায় সেজন্যই এই বাড়তি যন্ত্রাংশ কেনা হবে বলে জানিয়েছে বিআরটিসি।
তাজুল ইসলাম বলেন, "আগের কেনা বাসগুলোতে ১০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান ছিল। তবে এবারের বাসে ৩০ শতাংশ যন্ত্রাংশের সংস্থান রাখা হয়েছে। এই বাসগুলোর পার্টস পেতে খুব বেগ পেতে হয়। দেখা যায় মাত্র একটি পার্টসের কারনে বাস পরে থাকে। এজন্যই পার্টসের ব্যবস্থা বেশি রাখছি, যাতে বাসগুলো ২০ থেকে ২৫ বছর সেবা দিতে পারে।"
ডিসেম্বরে চালুর জন্য কতোটা প্রস্তুত?
কর্তৃপক্ষ বলছে, উত্তরা নর্থ স্টেশন থেকে আগারগাঁও সংযোগকারী ১১.৭৩ কিলোমিটার মেট্রোরেল এ বছরের ডিসেম্বরে যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হবে। এখন পর্যন্ত এই অংশের কাজের অগ্রগতি ৯০ শতাংশের বেশি।
এই মুহূর্তে উত্তরা (উত্তর) থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত ৯টি স্টেশনের প্রবেশ ও বাহির অংশের অবকাঠামো, মেকানিক্যাল, ইলেকট্রিক্যাল ও প্লাম্বিং (এমইপি) এর কাজ চলমান আছে। এর সমন্বিত বাস্তব অগ্রগতি ৮৮.৩৪ শতাংশ।
এদিকে স্টেশনগুলোর কাজ শেষ না হওয়ায় এখনও মিরপুর থেকে আগারগাঁওয়ের রাস্তা পুরোপুরি খুলে দেওয়া হচ্ছে না। ফলে সেখানে যানজট আর যাত্রী দুর্ভোগের জন্য দীর্ঘদিন ধরে চলা নির্মাণকাজকে দায়ী করছেন যাত্রীরা।
কাজ দেরি হওয়ার অন্যতম কারণ ডিএমটিসিএলের সিটি করপোরেশনের টানাপোড়েন।
যদিও ডিএমটিসিএলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমএএন সিদ্দিকী বলছেন, সিটি করপোরেশনের সাথে সমস্যার সমাধান হয়েছে। স্টেশনের কাজ এখন পুরোদমে চলছে।
"রাস্তাগুলো পুরোপুরি খুলে দিতে আমরা প্রস্তুত। আমাদের এখন রাস্তা বন্ধ করে রাখার মতো কোন কাজ বাকি নেই। কিন্তু বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের খোড়াখুড়িতেই তা সম্ভব হচ্ছে না", বলেন তিনি।
আমরা শীঘ্রই সড়কটি হস্তান্তরের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে চিঠি দেব, যোগ করেন তিনি।
মোট ২৪টি ট্রেন সেটের মধ্যে ১০টি ইতোমধ্যে ঢাকায় এসেছে। মার্চের মধ্যে ১১ ও ১২তম সেট চলে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে৷ মে মাসে আসবে ১৩ ও ১৪তম ট্রেন সেট৷
কর্তৃপক্ষ এখন প্রযুক্তিগত, কার্যকরী এবং কর্মক্ষমতা টেস্ট করে দেখছে, আগামী জুন পর্যন্ত চলবে এসব টেস্ট।
সময়মতো ট্রায়াল শেষ করে ডিসেম্বরে বাণিজ্যিক কার্যক্রম শুরুর আশ্বাস দেন তিনি।
এখনও নির্ধারিত হয়নি মেট্রোর ভাড়া
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এখনও মেট্রো রেলের ভাড়ার তালিকা তৈরির কাজ চলছে।
ভাড়া নির্ধারণ কমিটির আহ্বায়ক ও ঢাকা পরিবহন সমন্বয় কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক নীলিমা আক্তার বলেন, "আমরা যত দ্রুত সম্ভব ভাড়া চূড়ান্ত করতে চাই। তবে আগে চলমান ব্যয় মূল্যায়ন সমীক্ষা শেষ করতে হবে।"
"রিপোর্ট পেলেই আমরা কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাব রাখবো। তারপর সরকার এটি চূড়ান্ত করবে," বলেন তিনি।
এম এ এন সিদ্দিক জানান, ইতোমধ্যে টিকিটিং সফটওয়্যার তৈরির কাজ শেষ। ভাড়া চূড়ান্ত হয়ে গেলে ভাড়া তালিকা সিস্টেমে যুক্ত করা হবে।