ভ্যাট কমানোর প্রভাব নেই বাজারে, ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে মণে ৩০০ টাকা
- গত তিন দিনে প্রতি মণ ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা
- সরকার প্রতি লিটারের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও বর্তমানে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকায়
- পাইকারি বিক্রেতারা বলছেন, পর্যাপ্ত মজুদ থাকা সত্ত্বেও আমদানিকারকরা তেল সরবরাহ কমিয়ে দাম বাড়িয়েছে
টানা ঊর্ধ্বমুখী থাকায় ভোজ্যতেলের দাম স্থির রাখতে আমদানি পর্যায়ে ১৫ শতাংশ ভ্যাট কমিয়েছে সরকার। নির্ধারণ করে দিয়েছে ভোজ্যতেলের সর্বোচ্চ বিক্রয়মূল্য।
কিন্তু আমদানিতে ভ্যাট কমানোর প্রভাব নেই বাজারে। একই সঙ্গে মানা হচ্ছে না সরকার নির্ধারিত মূল্য।
ফলে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে গত তিন দিনে পণ্যটির দাম আরো একদফা বৃদ্ধি পেয়েছে। পর্যাপ্ত আমদানি ও মজুদ থাকলেও আমদানিকারকরা বাজারে সরবরাহ কমিয়ে পণ্যটির দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাইকারি ব্যবসায়ীদের।
ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের ভোজ্যতেলের আড়ত ও পাইকারি দোকানে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গতকাল বৃহস্পতিবার বাজারে প্রতিমণ (৪০ দশমিক ৯০ লিটার) পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ৫০০ টাকা দামে।
তিন দিন আগে অর্থাৎ গত রোববারেও বাজারে পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ৫ হাজার ২০০ টাকায়। অথচ পাইকারি বাজারে প্রতিমণ সরকারি নির্ধারিত পাম অয়েলের মূল্য ৫ হাজার ১৮০ টাকা (প্রতি লিটার ১২৭ টাকা)।
পাইকারি পর্যায়ে তিন দিন আগে প্রতিমণ সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার টাকায়। মণে ৩০০ টাকা বেড়ে গতকাল বাজারে সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ৬ হাজার ৩০০ টাকায়। পাইকারি পর্যায়ে সরকারি নির্ধারিত প্রতিমণ লুস সয়াবিনের মূল্য ৫ হাজার ৫৫০ টাকা (প্রতি লিটার ১৩৬ টাকা)।
এছাড়া বাজারে বর্তমানে প্রতিমণ পাম সুপার অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৬০০ টাকা দরে। যা তিন দিন আগেও মাত্র ৫ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হতো। সেই হিসেবে, গত তিন দিনে প্রতিমণ ভোজ্যতেলে ২০০-৩০০ টাকা পর্যন্ত দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
সরকার খুচরা পর্যায়ে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম ১৫৭ টাকা নির্ধারণ করলেও বর্তমানে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৬৮ টাকায়।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, "আমদানি মূল্য ও অন্যান্য খরচ যোগ করে সরকার ভোজ্যতেলের দাম নির্ধারণ করে দিলেও তা মানছে না আমদানিকারকরা।"
নির্ধারিত দামের চেয়ে পাম অয়েল মণে ৩২০ টাকা এবং সয়াবিনে ৭৫০ টাকা বাড়িয়ে বিক্রি হচ্ছে পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জে, জানান তিনি।
খাতুনগঞ্জের পাইকারি ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে আগের চেয়ে পাম অয়েল ও সয়াবিন দুটিরই দাম কমেছে। বর্তমানে আর্ন্তজাতিক বাজারে (মালেশিয়া) প্রতিটন পাম অয়েল বিক্রি হচ্ছে ৫ হাজার ৬৫০ রিঙ্গিতে; দুই সপ্তাহ আগে যেই বুকিং ছিল ৬ হাজার ৫০০ রিঙ্গিত।
অর্থাৎ এক সপ্তাহে প্রতিটন পাম অয়েলের দাম কমেছে ৮৫০ রিঙ্গিত। উপরোক্ত দাম অনুযায়ী বর্তমানে প্রতিমণ পাম অয়েলের বুকিং দর ৫ হাজার ৮৩ টাকা।
একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে বর্তমানে প্রতিটন সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ ডলারে। যা দুই সপ্তাহ আগে ১ হাজার ৭০০ ডলারে বিক্রি হতো। সেই হিসাবে, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিনের দাম কমেছে টনে ১০০ ডলার। উপরোক্ত হিসাবমতে, বর্তমানে প্রতিমণ সয়াবিনের বুকিং দর ৫ হাজার ৮৮৯ টাকা।
ভোজ্যতেল আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান নুরজাহান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক জহির আহমেদ রতন বলেন, "আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কিছুটা কমেছে সত্য। কিন্তু কম দামের বুকিং হওয়া ভোজ্যতেল এখনো বাজারে আসে নি। বর্তমানে বাজারে যেসব ভোজ্যতেল রয়েছে তা আগের বাড়তি দামে কেনা। নতুন পণ্য বাজারে আসলে দাম কিছুটা কমার সম্ভাবনা রয়েছে।"
সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছে দাবি করে এই আমদানিকারক জানান, "আমরা মিল পর্যায়ে সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি করছি।"
তবে হাত বদলিয়ে এক হাত থেকে আরেক হাতে এসও বিক্রি হওয়ায় খাতুনগঞ্জে পণ্যটির দাম আগের চেয়ে আরেক দফা বেড়েছে বলে মন্তব্য করেন এই ব্যবসায়ী।
উল্লেখ্য, গত ১৬ মার্চ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি পর্যায়ে ভ্যাট ১৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ৫ শতাংশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে অভ্যন্তরীণ সম্পদ বিভাগ (আইআরডি)।
এর আগে ১৪ মার্চ পরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পরিশোধিত পাম তেলের স্থানীয় উৎপাদন ও ব্যবসায় পর্যায়ে সব মূল্য সংযোজন কর (মূসক) বা ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। আগে সয়াবিন ও পাম তেলের উৎপাদন পর্যায়ে ১৫ শতাংশ এবং ব্যবসায় পর্যায়ে ৫ শতাংশ ভ্যাট আরোপ করা ছিল। আগামী ৩০ জুন পর্যন্ত এ সুযোগ অব্যাহত থাকবে।
এদিকে চট্টগ্রাম কাস্টমস এর তথ্যমতে, চলতি অর্থ বছরের প্রথম আট মাসে অর্থাৎ জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪ লাখ ৫৬ হাজার ৮১৭ মেট্রিক টন ক্রুড সয়াবিন আমদানি হয়েছে। একই সময়ে পাম অয়েল আমদানি হয়েছে ৫ লাখ ৩৩ হাজার ৮২৮ টন।