লকডাউনের আইন ভাঙায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীকে পুলিশের জরিমানা
কোভিড-১৯ লকডাউনের আইন ভেঙে জন্মদিনের পার্টিতে যোগ দেওয়ায় ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও অর্থমন্ত্রী ঋষি সুনাককে জরিমানা করা হয়েছে।
২০২০ সালের ১৯ জুন প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন ১০ নং ডাউনিং স্ট্রিটের ক্যাবিনেট রুমে নিজের জন্মদিনের পার্টির আয়োজন করেছিলেন বরিস জনসন। কোভিড মহামারির চরম পরিস্থিতিতে এমন খামখেয়ালি আচরণের জন্য প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবি তুলেছে দেশটির বিরোধী দলীয় সংসদ সদস্যরা। তবে প্রধানমন্ত্রী বরিস জানিয়েছেন, তিনি পদত্যাগ করবেন না। বিরোধীদের রোষের মুখেই নিজের পদে থেকে লড়াই করে যাবেন তিনি।
জরিমানার নোটিশ দেওয়া হয়েছে প্রধানমন্ত্রীর স্ত্রী ক্যারি জনসনকেও। ওই পার্টিতে প্রধানমন্ত্রী ও অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে তিনিও উপস্থিত ছিলেন। মেট্রোপলিটন পুলিশ জানিয়েছে, তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মঙ্গলবার (১২ এপ্রিল) ৩ জনকেই জরিমানা পরিশোধের নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেইসঙ্গে, পার্টিতে উপস্থিত মোট ৫০ জনকে জরিমানার নোটিশ দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে।
ব্রিটেনের ইতিহাসে বরিস জনসন এবং ঋষি সুনাকই প্রথম প্রধানমন্ত্রী এবং অর্থমন্ত্রী, যারা উভয়েই একসঙ্গে আইন অমান্য ও অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য জরিমানার সম্মুখীন হলেন। এমনকি পার্টিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারটি প্রথমে অস্বীকার করে পার্লামেন্টকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও উঠেছে তাদের বিরুদ্ধে।
এদিকে, নিজের জরিমানার ব্যাপারে জনসমক্ষে তাৎক্ষণিক কোনো বিবৃতি দেননি ঋষি সুনাক। তবে কনজারভেটিভ পার্টির কয়েকজন এমপি ধারণা করেছিলেন, বিগত সপ্তাহে নিজের স্ত্রীর ট্যাক্স সংক্রান্ত বিষয়াবলী তদন্তের আওতায় আসার পর পদত্যাগ করতে পারেন তিনি।
পার্টিতে উপস্থিত থাকার জন্য ক্ষমা চেয়ে ঋষি সুনাক বলেছেন, তার কর্মকাণ্ডে যেই 'হতাশা এবং ক্রোধের সৃষ্টি হয়েছে' তার জন্য তিনি গভীরভাবে অনুতপ্ত এবং জরিমানা করা অর্থও তিনি পরিশোধ করেছেন বলে জানিয়েছেন।
সেইসঙ্গে তিনি পদত্যাগ করছেন না বলেও নিশ্চিত করেছেন। এ ব্যাপারে অর্থমন্ত্রী বলেন, "আমি এই চ্যালেঞ্জিং সময়ে ব্রিটিশ জনগণের জন্য কাজ করার দিকে মনোনিবেশ করছি।"
এদিকে, প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনও পার্টিতে যোগ দেওয়ার ব্যাপারে অনুশোচনা প্রকাশ করেছেন। সেইসঙ্গে আরও জানিয়েছেন, পদত্যাগ করছেন না তিনি।
প্রধানমন্ত্রীর মুখপাত্রের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, নিয়ম ভঙ্গের বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী নম্রভাবে স্বীকার করেছেন। তবে তার (বরিস জনসন) দাবি, জন্মদিনের ওই পার্টি ১০ মিনিটেরও কম সময় স্থায়ী হয়েছিল এবং তিনি বিশ্বাস করেন, এই ঘটনাটি মারাত্মক কোনো ভুলের পর্যায়ে পড়ে না।
গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুযায়ী, জন্মদিনের পার্টি ছাড়াও আরও এমন ছয়টি পার্টির তদন্ত করছে পুলিশ, যেখানে প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের উপস্থিতির কথা জানা গেছে। তাই কেবল জন্মদিনের পার্টির জরিমানা পরিশোধ করেই বিপদ কাটছে না প্রধানমন্ত্রীর। আগামী সপ্তাহগুলোতে আসন্ন পুলিশি তদন্ত প্রতিবেদনের ওপরেই ভাগ্য অনেকটা নির্ভর করছে তার।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান