পরমাণু যুদ্ধের ঝুঁকিকে ছোট করে দেখবেন না: রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী
চলমান রাশিয়া-ইউক্রেন সংকটে পারমাণবিক যুদ্ধের ঝুঁকিকে 'ছোট' করে না দেখার ব্যাপারে সতর্ক করেছেন রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ। ন্যাটোর মাধ্যমে ইউক্রেনে অস্ত্র সরবরাহকে তিনি রাশিয়ার বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের 'প্রক্সি যুদ্ধ' হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনের সাক্ষাত্কারে রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ এড়ানোর গুরুত্ব এবং বর্তমান পরিস্থিতি ১৯৬২ সালের কিউবান ক্ষেপণাস্ত্র সংকটের সঙ্গে তুলনীয় কিনা, সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল।
মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেওয়া সাক্ষাৎকারের একটি অনুলিপি অনুযায়ী ল্যাভরভ প্রশ্নের জবাবে বলেন, "ঝুঁকি এখন যথেষ্ট।"
"আমি সেই ঝুঁকিকে কৃত্রিমভাবে বাড়াতে চাই না। অনেকেই হয়তো এটি পছন্দ করবেন। বিপদ কিন্তু গুরুতর এবং বাস্তব। এই ঝুঁকিকে আমাদের অবশ্যই ছোট করে দেখা উচিত নয়", যোগ করেন তিনি।
এদিকে ইউক্রেনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, পারমাণবিক যুদ্ধের এই ভয় দেখানোকে তিনি রাশিয়ার দুর্বলতা হিসেবে দেখছেন।
ল্যাভরভের সাক্ষাৎকার প্রচারিত হওয়ার পর কুলেবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে লিখেছেন, "ইউক্রেনকে সমর্থন করা থেকে বিরত রাখতে, বিশ্বকে ভয় দেখানোর শেষ আশাটিও হারিয়েছে রাশিয়া। এর অর্থ হলো, মস্কো পরাজয় অনুভব করছে।"
রোববার কিয়েভ সফরকালীন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন ও প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ইউক্রেনের জন্য আরও সামরিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট ইউক্রেনের কাছে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার মূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ বিক্রির সম্ভাব্য চুক্তি অনুমোদনে সোমবার জরুরি ঘোষণা দিয়েছে। পেন্টাগন বলছে, প্যাকেজের মধ্যে হাউইৎজার, ট্যাংক এবং গ্রেনেড লাঞ্চারের জন্য আর্টিলারি গোলাবারুদ অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এদিকে ওয়াশিংটনে মস্কোর রাষ্ট্রদূত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে অস্ত্রের চালান সরবরাহ বন্ধ করতে সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে সংঘাতকে আরও উসকে দিচ্ছে পশ্চিমা বিশ্ব।
এ ব্যাপারে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যাভরভ বলেন, "ন্যাটো মূলত, প্রক্সির (তৃতীয় পক্ষ) মাধ্যমে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। তারা সেই প্রক্সিকে অস্ত্রের যোগান দিচ্ছে। যুদ্ধ মানে যুদ্ধই।"
১৯৪৫ সালের পর ইউক্রেনের ওপর রাশিয়ার চলমান এই দুই মাসব্যাপী আগ্রাসনই গোটা ইউরোপের ওপর সবচেয়ে বড় আক্রমণ। পশ্চিমা গণমাধ্যমের তথ্য অনুযায়ী, এই আগ্রাসনে হাজার হাজার মানুষ হতাহতের শিকার হয়েছেন, ইউক্রেন ছেড়ে পালিয়েছেন কয়েক মিলিয়ন মানুষ। চলমান এই সংকটকে রাশিয়া 'বিশেষ সামরিক অভিযান' হিসেবে উল্লেখ করলেও তা মানতে নারাজ পশ্চিমা বিশ্ব। তাই সংঘাতের শুরু থেকেই তারা ইউক্রেনকে সাধ্যমতো সামরিক সহায়তা দিয়ে আসছে।
মার্কিন কর্মকর্তাদের মতে, ইউক্রেনকে সামরিক দিক দিয়ে আরও সহযোগিতা করতে এবং এ সম্পর্কিত প্রতিরক্ষা আলোচনার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র চলতি সপ্তাহে ৪০টিরও বেশি দেশকে সঙ্গে নিয়ে আলোচনায় বসতে চলেছে। উদ্দেশ্য, ইউক্রেনকে রাশিয়ার বিরুদ্ধে সামরিকভাবে আরও শক্তিশালী করে তোলা।
- সূত্র: রয়টার্স