দাবদাহ কমতে পারে আজ থেকে, ঈদে থাকবে বৃষ্টি
আজ শুক্রবার থেকে সারা দেশের তাপমাত্রা কমতে পারে বলে ধারণা করছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। গত কয়েক বছর ধরে ঈদের দিন বৃষ্টি হওয়াটা যেন নিয়ম হয়ে গেছে। এ বছরও এর ব্যতিক্রম হবে না। পুরো ছুটিজুড়েই ঝরবে বৃষ্টি। আবহাওয়ার পূর্বাভাসে এমনটাই জানা যাচ্ছে। আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক বলেন এই তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, 'শুক্রবার থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এতে তাপমাত্রা আর বাড়ার সম্ভাবনা নেই।
ঈদের দিন, ঈদের আগের দিন ও ঈদের পরের দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে এটা চূড়ান্তভাবে আরো দু'দিন পর জানা যাবে। তবে আমরা ১০ দিনের যে পূর্বাভাস দিয়েছি, সে হিসেবে ঈদের আগে, পরে ও ঈদের দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।'
আবুল কালাম মল্লিক বলেন, 'ঈদের দিনের আবহাওয়ার চরিত্র কেমন থাকবে এটার সঠিক তথ্য ৭২ ঘণ্টা আগে দিতে পারব। কারণ এখন আবহাওয়া দ্রুত পরিবর্তন হয়। এ জন্য সময় যত ঘনিয়ে আসবে, এ বিষয়ে তত নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যাবে।'
এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রাজশাহী, রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা বা ঝড়ো হাওয়ার সঙ্গে প্রবল বিদ্যুৎ চমকানোসহ বৃষ্টি বা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। এছাড়া দেশের অন্যত্র অস্থায়ীভাবে আংশিক মেঘলা আকাশসহ আবহাওয়া প্রধানত শুষ্ক থাকতে পারে।
সেই সঙ্গে সারা দেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।
এছাড়া ফরিদপুর, মাদারীপুর, গোপালগঞ্জ, রাঙ্গামাটি, রাজশাহী ও পাবনা জেলাসহ খুলনা বিভাগের উপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন এ আবহাওয়াবিদ।
বুধবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে রাজশাহীতে ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং বৃহস্পতিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে শ্রীমঙ্গলে ২২ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এ তাপমাত্রা বৃহস্পতিবার কমে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছে ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রাজশাহীতে।
বুধবার সকাল ৬টা থেকে বৃহস্পতিবার সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় সিলেটে সর্বোচ্চ ১১ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া টাঙ্গাইলে ৪, বগুড়ায় ৫, বদলগাছীতে ৭, তাড়াশে ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
পূর্বাভাসে আরো বলা হয়, পশ্চিমা লঘুচাপের বাড়তি অংশ হিমালয়ের পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ এবং তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থান করছে। মৌসুমের স্বাভাবিক লঘুচাপ দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে।
আবহাওয়াবিদ মুহাম্মদ আবুল কালাম মল্লিক টিবিএসকে বলেন, ভারতে বেশ কয়েকদিন ধরে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় তা বাংলাদেশের দিকেই প্রবাহিত হচ্ছে। এখন বিচ্ছিন্নভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। তবে তীব্র দাবদাহ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাপমাত্রা ৩৪-৩৭ ডিগ্রির মধ্যেই থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
বাংলাদেশে ২০২১ সালের এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ দশমিক দুই ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে তার আগের ২৬ বছরের রেকর্ড ভেঙেছিল।
কিন্তু গত ২৫ এপ্রিল রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা এই তিনটি জেলায় তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, কোন এলাকায় যদি তাপমাত্রা ৪০ থেকে ৪২ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাহলে তাকে বলে তীব্র তাপপ্রবাহ।
তাপমাত্রা যখন ৩৮ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকে তাকে বলে মাঝারি তাপপ্রবাহ এবং তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস থাকলে সেটিকে মৃদু তাপপ্রবাহ বলে।
বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থার মতে, কোন জায়গার দৈনিক যে গড় তাপমাত্রা সেটি পাঁচ ডিগ্রি বেড়ে গেলে এবং পরপর পাঁচদিন তা চলমান থাকলে তাকে হিটওয়েভ বা তাপপ্রবাহ বলা হয়।
অনেক দেশ এ সংজ্ঞা নিজের দেশের পরিস্থিতি অনুযায়ী ঠিক করে। তবে সার্বিকভাবে তাপমাত্রা ৩৫ ডিগ্রির ওপরে উঠলে শরীরের নিজেকে ঠান্ডা করার যে প্রক্রিয়া সেটি বন্ধ করে দেয়।
যে কারণে এর বেশি তাপমাত্রা হলে তা যেকোন স্বাস্থ্যবান লোকের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।
চুয়াডাঙ্গায় গত ২২ এপ্রিল থেকেই তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের উপরে।
বাংলাদেশে ২৪শে এপ্রিল থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে বলে বলছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। রাজশাহী, পাবনা এবং চুয়াডাঙ্গা জেলার বাইরে যশোরেও তীব্র তাপপ্রবাহ চলছে। এর মধ্যে ২৪শে এপ্রিল যশোরের তাপমাত্রা ছিল ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস।