করোনা: স্থল বন্দরগুলোতে নেই স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর্যাপ্ত ব্যবস্থা
করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি মোকাবেলায় দেশের স্থলবন্দরগুলোতে নেই স্বাস্থ্য পরীক্ষায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা। এ কারণে করোনা ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। দেশের বৃহত্তম বেনাপোল স্থলবন্দরসহ একাধিক বন্দরে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন অচল থাকায় বিকল্প পদ্ধতিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে বাধ্য হচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
বিমানবন্দর দিয়ে আগত যাত্রীদের 'হেলথ ডিক্লারেশন কার্ড' পূরণের বাধ্যবাধকতা থাকলেও স্থলবন্দরগুলোতে এখনো এরকম কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এদিকে, করোনার প্রভাবে কোনো কোনো বন্দরে পাসপোর্টধারী যাত্রী সংখ্যা কিছুটা কমেছে। বাংলাদেশ স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের তথ্যানুসারে, দেশে ঘোষিত স্থলবন্দর রয়েছে ২৪টি। এর মধ্যে চালু রয়েছে ১২টি।
করোনার পর স্থলবন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হলেও 'হেলথ ডিক্লারেশন কার্ড' পূরণের কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এ কার্ডের মধ্যে যাত্রীদের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের তথ্য ও স্বাস্থ্য পরীক্ষার বিভিন্ন তথ্য সরবরাহ করতে হয়।
এ বিষয়ে ইনস্টিটিউট অব ডিজিস কন্ট্রোল, এপিডোমোলজি এন্ড রিসার্চের প্রধান বৈজ্ঞানীক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম জাহাঙ্গীর বলেন, 'ভারতে এখনো করোনা ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়েনি। তারপরও স্থল বন্দরগুলোতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। যেখানে থার্মাল স্ক্যানার মেশিন নেই, সেখানে হ্যান্ড স্ক্যানার সরবরাহ করা হয়েছে।"
'হেলথ ডিক্লারেশন কার্ড' নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
দেশের বৃহত্তর স্থলবন্দর বেনাপোল। এই বন্দর দিয়ে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ হাজার পাসপোর্টযাত্রী যাতায়াত করে থাকে। এসব যাত্রীদের মধ্যে ১২ শতাংশ রয়েছে বিদেশি যাত্রী। তাই এ সীমান্তে ভাইরাসটি সংক্রমণের বেশ ঝুঁকি রয়েছে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।
তবে গত তিন দিনে গমনাগমনকারী যাত্রী সামান্য কমেছে বলে জানিয়েছেন বেনাপোল ইমিগ্রেশন ইন্সপেক্টর আহসান হাবীব।
এদিকে, বেনাপোল বন্দরের ইমিগ্রেশনে ৫ বছর আগে স্থাপিত থার্মাল স্ক্যানার মেশিনটি প্রায় তিন মাস ধরে অচল হয়ে পড়ে আছে। করোনা ভাইরাস শনাক্তের জন্য শুধু নামে মাত্র হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে করা হচ্ছে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা। এতে দেশ ও দেশের বাইরের যাত্রীদের মাধ্যমে এ করোনা ভাইরাসটি সংক্রমণের যথেষ্ট ঝুঁকি থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
সোমবার বেনাপোল ইমিগ্রেশন ঘুরে দেখা যায়, ১৬ জন স্বাস্থ্যকর্মী পালা করে হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে পাসপোর্ট যাত্রী ও ভারতীয় ট্রাক চালকদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করছে।
পাসপোর্টধারী যাত্রীরা বলেন, সম্প্রতি বাংলাদেশে তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছে। সেখানে এখনো বেনাপোল ইমিগ্রেশনে নামেমাত্র করোনা ভাইরাস শনাক্তে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এটা খুবই দুঃখজনক। এমনভাবে যদি স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তাহলে দেশের বাইরে থেকে আসা করোনা আক্রান্ত রোগীকে শনাক্ত করা সম্ভব না।
বেনাপোল ইমিগ্রেশনে নিয়োজিত স্বাস্থ্য বিভাগের মেডিকেল অফিসার শহিদুল ইসলাম জানান, প্রায় তিন মাস থার্মাল স্ক্যানার অচল থাকায় হ্যান্ড থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে যাত্রীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে। খুব শিগগিরই এ থার্মাল স্ক্যানার ঠিক করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন।
সাতক্ষীরা ভোমরা স্থল বন্দরে কমেছে যাত্রীদের বাংলাদেশে আগমন ও বাংলাদেশ থেকে বহিঃর্গমন।
সাতক্ষীরার ভোমরা ইমিগ্রেশন পুলিশের উপপরিদর্শক বিশ্বজিৎ সরকার জানান, গত ৮ ফেব্রুয়ারি ভোমরা বন্দর দিয়ে দেশে প্রবেশ করেছেন ৫৫০ জন পাসপোর্টধারী যাত্রী। আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৬০০ জন। পরদিন ভারত থেকে এসেছে ৩৫০ জন যাত্রী আর বাংলাদেশ থেকে ভারতে গেছেন ৪৫০ জন।
তিনি বলেন, করোনা আতঙ্কের কারণে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের ধস নেমেছে। মানুষ জরুরি প্রয়োজন ছাড়া বের হচ্ছেন না।
ভোমরা ইমিগ্রেশনে স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য নিয়োজিত সাতক্ষীরা সদরের উপসহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার প্রভাকর মজুমদার জানান, তাদের নিজেদেরই সেফটি পোশাক নেই। যাত্রীদের পরীক্ষার জন্য ডিজিটাল থার্মোমিটার ছাড়া কিছুই নেই।
করোনা ভাইরাস আতঙ্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আখাউড়া আন্তর্জাতিক ইমিগ্রেশন চেকপোস্ট দিয়ে বাংলাদেশ ঢুকতে চাওয়া সুভাস সরকার (৩০) নামে এক ভারতীয় নাগরকিকে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে তাকে ফেরত পাঠায় চেকপোস্টের মেডিকেল ডেস্কের সদস্যরা। সুভাস ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের আগরতলা শহরের ভুবন-মধ্যনগর এলাকার বাসিন্দা।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিভিল সার্জন মো. শাহ আলম জানান, পর্যবেক্ষণে রেখে দুইবার পরীক্ষা করে সুভাসের শরীরের তাপমাত্রা বেশি পাওয়ায় তাকে বাংলাদেশে ঢুকতে না দিয়ে দুপুরে নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।
কিশোরগঞ্জের নাকুগাঁও স্থলবন্দরের সহকারী পরিচালক (ট্রাফিক) সঞ্জয় কুমার বাড়ৈ বলেন, করোনার কারণে স্থানীয় মানুষের মধ্যে কিছুটা ভীতি কাজ করছে। এ কারণে তারা মেঘালয় রাজ্যে যাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছেন।
এছাড়া করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে দিনাজপুরের হিলি স্থলবন্দর চেকপোস্টে সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছে।