বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে চার ইপিজেডে নির্মাণ হবে ৮ টি কারখানা ভবন
নতুন বিদেশি বিনিয়োগ নিশ্চিত করতে দেশের চারটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে (ইপিজেড) ছয় তলার আটটি কারখানা ভবন নির্মাণ করার উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ইপিজেডগুলো চট্টগ্রাম, ঈশ্বরদী, মোংলা এবং উত্তরায় অবস্থিত। কর্মকর্তারা জানিয়েছে, চট্টগ্রাম ইপিজেডে চারটি , ঈশ্বরদীতে দুটি এবং মোংলা এবং উত্তরা ইপিজেডে একটি ছয় তলা ভবন হবে।
বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষের (বেপজা) নির্বাহী পরিচালক নাজমা বিনতে আলমগীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "বেশিরভাগ বিনিয়োগকারীই তাৎক্ষণিক কাজ শুরু করতে পছন্দ করেন। নির্মাণ-সম্পর্কিত সমস্যা এড়াতে আগে থেকে নির্মিত জায়গা খোঁজেন তারা।"
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, এর মাধ্যমে নতুন ৩৫০ লাখ ডলার বিনিয়োগ আসবে এবং রপ্তানি আয় বাড়বে বছরে ৭০ মিলিয়ন ডলার । পাশাপাশি ১৪ হাজার বাংলাদেশি নাগরিকের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
আগামী জুলাইয়ে কাজ শুরু করে তিন বছরের মধ্যে প্রস্তাবিত আটটি ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। ভবন নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৬ কোটি টাকা।
নাজমা বিনতে আলমগীর বলেছেন, ভবনগুলো নির্মাণের ফলে ১২৭,২৭২ বর্গ মিটার জায়গা পাওয়া যাবে, বেপজার রাজস্ব বাড়বে এর মাধ্যমে।
বর্তমানে দেশে ইপিজেডের সংখ্যা মোট আটটি। দেশের মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় ২০ শতাংশ আসে এই ৮টি ইপিজেড থেকে। এখানে উৎপাদনে আছে ৪৫৭টি শিল্প প্রতিষ্ঠান।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী ১৯৮৩ সাল থেকে এ পর্যন্ত ইপিজেডগুলোতে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিনিয়োগ এসেছে। আর এতে কর্মসংস্থান হয়েছে সাড়ে ৪ লাখে বেশি কর্মীর
বিদেশি বিনিয়োগকারীরা বেপজা থেকে ইপিজেডে প্লট এবং ফ্লোর স্পেসের জন্য আবেদন করতে পারেন। তবে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ বাড়তে থাকায়, সীমিত প্লট বরাদ্দ না দিয়ে বহুতল ভবনে প্রস্তুত ফ্লোর স্পেস বরাদ্দ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বেপজা।
বেপজার তথ্য অনুযায়ী, শুধু এশিয়ান কোম্পানিগুলো এখন দেশের রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চলে প্রায় ১০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করতে চায়। বেপজার কর্মকর্তারা বলেছেন, মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় চীনা, কোরিয়ান, তাইওয়ানিজ, আমেরিকান, জাপানি এবং ইউরোপীয় উৎপাদনকারীরা বাংলাদেশে তাদের শিল্প ইউনিট স্থানান্তর করতে আগ্রহী।
প্রকল্প প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চট্টগ্রামে ছয় তলা বিশিষ্ট ভবন নির্মাণ হবে চারটি। এতে মোট ৫৪,৬৭২ বর্গমিটার স্পেস তৈরি হবে। ভাড়া দিয়ে এসব ভবন থেকে বেপজার রাজস্ব বাড়বে প্রতিমাসে ১.৬৪ লাখ ডলার।
বর্তমানে চট্টগ্রাম ইপিজেডে ১৬ টি কারখানা ভবনের পুরোটাই বিনিয়োগকারীদের কাছে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, এর মাধ্যমে বছরে প্রায় ৫৪লাখ ডলার রাজস্ব আয় হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেডে সর্বাধিক ১ লাখ ৬৩ হাজার কর্মী কাজ করছেন। বিদেশি বিনিয়োকারী প্রতিষ্ঠানগুলো নিয়মিত চট্টগ্রাম ইপিজেড পরিদর্শন করছে এবং বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করছে। কিন্ত বরাদ্দ উপযোগী প্লট বা কারখানা ভবন খালি না থাকায় বিনিয়োগে নিরুৎসাহিত হচ্ছে।
চট্টগ্রাম ইপিজেড চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মাত্র ২.৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত হওয়ায় আমদানি-রপ্তানিতে কম সময় লাগে বলে এখানে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেশি থাকে।
ঈশ্বরদী ইপিডেজের প্রতি ফ্লোরে ৩২৫০ বর্গমিটার করে একটি ভবন নির্মাণ হবে । অন্য ভবনটির প্রতি ফ্লোর ২৩৫০ বর্গমিটার স্পেস। বর্তমানে এই ইপিডেজে ৬৪, ৫৭৬ বর্গমিটারের আটটি কারখানা ভবন রয়েছে।
মোংলা ও উত্তরা ইপিডেজে প্রতি ফ্লোর ৩২৫০ বর্গফুটের দুটি ভবন নির্মাণ করা হবে। উত্তরা ইপিডেজে ৭ টি ভবনের ৭১,৩০০ বর্গমিটারের স্পেস বিনিয়োগকারীদের মধ্যে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। আর উত্তরা ইপিজেডে ভাড়া দেওয়া হয়েছে ৫৮,৫৮৯ বর্গমিটার।
দেশের ইপিডেজগুলোতে তৈরি হচ্ছে বিভিন্ন ব্রান্ডের বৈচিত্র্যময় পণ্যে। এর মধ্যে আছে ফেস মাস্ক, সার্জিকাল গ্লোভস, জুতার কভার, মেডিকেল গাউন, স্যানিটারি ন্যাপকিন, ডায়াপার, হ্যান্ড স্যানিটাইজার ,খেলানা, বিবাহের পোশাক, সাইকেল, ইলেকট্রিক বাইসাইকেল, টুথব্রাশ, চুরুট, প্যান্ট ও জ্যাকেট, মোবাইল যন্ত্রাংশ, অটোমোবাইল যন্ত্রাংশ, গল্ফ শ্যাফট, অপটিক্যাল ফাইবার কেবল, আসবাবপত্র, পাটজাত পণ্য, প্রক্রিয়াজাত কৃষিপণ্য ইত্যাদি।
ইপিজেডে ইলেট্রনিকস ও অন্যান্য বৈচিত্রমায় পণ্য উৎপাদন করছে ৩৭ শতাংশ প্রতিষ্ঠান (১৭১ টি প্রতিষ্ঠান), ওভেন গার্মেন্টস ৩০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান (১৩৮ টি), নিট গার্মেন্টস ৬ শতাংশ (২৪ টি), টেক্সটাইল ৭ শতাংশ (৩৪ টি), এক্সেসরিজ ২০ শতাংশ প্রতিষ্ঠান(৩৪ টি)।