চালের মিল খুলে দিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চায় স্কয়ার
অতিরিক্ত চাল মজুদ রাখার দায়ে সিলগালা করে রাখা ছয়টি গুদাম ও উৎপাদন এলাকা খুলে দেওয়ার জন্য স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেড বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে।
স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী স্বাক্ষরিত এই চিঠিতে দাবি করা হয়েছে, স্কয়ার চাষী ব্র্যান্ডের মাধ্যমে সুগন্ধি চাল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিক্রয় করে। প্রতিষ্ঠানটি সরু, মোটা বা মিনিকেট, নাজিরশাইল চাল উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রি করে না। ফলে বাজার অস্থিতিশীলতার সঙ্গে প্রতিষ্ঠানের কোন সংশ্লিষ্টতা নেই।
প্রতিষ্ঠানটি দাবি করেছে, দিনাজপুরে কারখানাটির উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রি বন্ধ থাকার কারণে তারা সুগন্ধি চাল রপ্তানি করতে পারছে না। এ বছর তাদের ৩ হাজার মে. টন চাল রপ্তানির অনুমতি রয়েছে। দ্রুত এই মিলের কার্যক্রম শুরু না করলে রপ্তানি বাজার হারানোর সম্ভাবনা রয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ মে সারাদেশে ধান-চালের মজুদদারদের বিরুদ্ধে অভিযানের অংশ হিসেবে দিনাজপুরে স্কয়ারের মিলেও অভিযান চালায় দিনাজপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের একটি টিম। সেখানে ৫ হাজার ১২৪ মে. টন চালের অতিরিক্ত মজুদ পেয়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয় এবং ছয়টি গুদাম ও উৎপাদন এলাকা সিলগালা করে দেয়া হয়।
এই মামলায় স্কয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক অঞ্জন চৌধুরী ইতোমধ্যেই আগাম জামিন পেয়েছেন।
তবে স্কয়ার বলছে, পাক্ষিক ধারণক্ষমতা অনুযায়ী ২১০০ মে. টন মজুদ রাখার সুযোগ রয়েছে। তবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে যে ৩০০০ মে. টন রপ্তানির অনুমতি দেওয়া হয়েছে, তার সঙ্গে তিন মাসের চাহিদা একসঙ্গে করলে আরও ৬৩০০ (২১০০*৩) মে. টন চিনিগুঁড়া চাল রাখার সুযোগ রয়েছে।
স্কয়ার দাবি করছে, পরবর্তী চিনিগুঁড়া সুগন্ধি ধানের মৌসুম আসার আগ পর্যন্ত (ডিসেম্বর) প্রয়োজনীয় বাজার চাহিদার বিপরীতে বর্তমান মজুদের পরেও আরও ১২৮৭৬ মে. টন চাল দরকার।
এদিকে খাদ্য অধিদপ্তরের ২০২০ সালের ডিসেম্বরে জারি করা এক আদেশে মিলগুলোর চাটাই ক্ষমতা ও মজুদের হিসাবের সংশোধিত বিধান আদেশ আকারে জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, চালকলগুলো তাদের দৈনিক ৮ ঘণ্টা হিসেবে পাক্ষিক ছাড়াই সক্ষমতার তিনগুণ ৩০ দিন পর্যন্ত মজুদ রাখতে পারবে।
স্কয়ারের বিরুদ্ধে মামলার পর খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, 'দিনাজপুরে স্কয়ারের গোডাউনে অভিযান চালানো হয়, যেখানে তাদের মিলও আছে। নীতিমালা অনুযায়ী, মিলের গোডাউনে পাক্ষিক উৎপাদন ক্ষমতার তিনগুণ মজুদ রাখা যায়। যার একটা অংশ বাজারে যাবে, একটা উৎপাদনে থাকবে ও একটা পুরোপুরি স্টকে থাকবে। গোডাউনে এর বাইরেও অতিরিক্ত ৫ হাজার মে. টন উদ্বৃত্ত ছিল। ফলে এটা সিলগালা করা হয়েছে এবং তাদের বিরুদ্ধে মোকদ্দমা করা হয়েছে।'
দিনাজপুর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. কামাল হোসেন টিবিএসকে বলেন, 'স্কয়ারের গোডাউনে ৫১২৪ মে. টন চাল বাড়তি মজুদ রাখার কারণে তাদের গোডাউন সিলগালা করে প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।'
এদিকে স্কয়ার দাবি করেছে, স্কয়ারের ফ্যাক্টরীতে উৎপাদিত চিনিগুঁড়া চাল নিত্যপ্রয়োজনীয় ভোগ্যপণ্যের আওতাধীন নয়। এই পণ্যটি বিভিন্ন আচার অনুষ্ঠান, উৎসব-পার্বণে এবং অতিথি আপ্যায়নে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই বিষয়টি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আমলে না নিয়ে সাধারণ ভোগ্যপণ্য তথা আতপ চাল হিসেবে বিবেচনা করে ছয়টি গুদামঘর ও উৎপাদন এলাকা সিলগালা করা হয়।
এ কারণে রপ্তানির ধারা অব্যাহত রাখা এবং দেশের সুগন্ধি চালের বাজারকে স্বাভাবিক রাখতে স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের দিনাজপুর কারখানার উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রয় কার্যক্রম শুরু করতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের হস্তক্ষেপ চেয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। এদিকে স্কয়ারের এক চিঠির বিপরীতে ব্যবসায়ীদের সংগঠন মেট্রোপলিটন চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রি (এমসিসিআই) বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি দেয়। এই চিঠিতেও স্কয়ার ফুড এন্ড বেভারেজ লিমিটেডের সুগন্ধি চালের দিনাজপুর কারখানার উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিক্রয় কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের অনুমতি দেয়ার অনুরোধ করেছে সংগঠনটি।